Romantic Story Of Love | আদুরিণীর প্রেম কাহিনী

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 4th, 2023 at 12:50 am

Romantic Story Of Love অর্থাৎ রোমান্টিক প্রেমের গল্প। আজকের গল্পটাও আদুরী নামের একটি মেয়ের মিষ্টি প্রেম কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে। গল্পের প্রধান চরিত্রে আদুরী ও বুদ্ধিরাম, গল্পের বিষয় – রোমান্টিক প্রেম, আরও Bengali Love Story এবং Bangla Funny Jokes পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন। এছাড়াও আমাদের ব্লগে পাবেন Romantic Story About Love, ছোটদের গল্প এবং আপনি যদি আমাদের ব্লগ থেকে Bengali Story Books Pdf ডাউনলোড করতে চান তাহলে সেটিও করতে পারবেন। সর্বশেষে আমার পাঠাকগনদের কাছে একটি অনুরোধ রইলো গল্পটি পড়িয়া যদি আপনাদের ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।

Romantic story of love

Romantic Story About Love –  রোমান্টিক প্রেম কাহিনী

বুদ্ধিরাম শিশিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল। লেবেলে ছাপা অক্ষর সবই খুব তেজালাে।“ইহা নিয়মিত সেবন করিলে ক্রিমিনাশ, অম্ল ও অজীর্ণতা রােগের নিরাবরণ অবশ্যম্ভাবী।অতিশয় বলকারক টনিক বিশেষ। স্নায়বিক দুর্বলতা, ধাতুদৌৰ্ব্বল্য ও অনিদ্রা রােগের ও পরম ঔষধ। বড় বড় ডাক্তার ও কবিরাজেরা ইহার উচ্চ প্রশংসা করিয়াছেন।” ছাপাঅক্ষরের প্রতি বুদ্ধিরামের খুব দুর্বলতা। ছাপা অক্ষরে যা বেরােয় তার সবটাই তারবিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।

 আদুরি অবশ্য অন্য ধাতের। বুদ্ধিরামের সঙ্গে তার মেলে না। বুদ্ধিরাম যা ভাবে,বুদ্ধিরামের যা ইচ্ছে হয় আদুরির ঠিক তার উল্টো হয়। বুদ্ধিরাম যদি নরম সরম মানুষ,তো আদুরি হল রণচণ্ডী। বুদ্ধিরাম যদি নাস্তিক, তাে আদুরি হল ঘাের আস্তিক। বুদ্ধিরামকে যদি কালাে বলতে হয়, তাে আদুরিকে ফর্সা হতেই হবে। বিধাতা (যদি কেউ থেকে থাকে) দুজনকে এমন আলাদা মালমশলা দিয়ে গড়েছেন যে আর কহতব্য নয়।আর সে জন্যই এ জন্মে দুজনের আর মিল হল না। বলা ভালাে, হতে হতেও হল না। এখন যদি বুদ্ধিরামের বত্রিশ-তেত্রিশ তাে আদুরির বয়স সাতাশ-আঠাশ চলছে।দুজনের কথাবার্তা নেই, দেখাশােনাও এক রকম কালেভদ্রে, মুখােমুখি যদি বা হয়।চোখাচোখি হওয়ার জো নেই। আদুরি আজকাল বুদ্ধিরামের দিকে তাকায়ও না।।কিন্তু বুদ্ধিরাম লােক ভালাে। লােকে জানে, সে নিজেও জানে। বুদ্ধিরাম আগাপাশতলা নিজেকে নিরিখ করে দেখেছে। হ্যা, সে তাে খারাপ নয়। মাঝে মাঝে বুদ্ধির দোষে দু-একটা উল্টো পাল্টা করে ফেললেও তাকে খারাপ লােক মােটেই বলা যাবে না।খারাপই যদি হবে তবে সাত মাইল পথ সাইকেলে ঠেঙ্গিয়ে চকবেড়ের হাটে কখনাে আসে মন্মথ সেনশর্মার পিওর আয়ুর্বেদিক টনিক ‘হারবল’ কিনতে? মাত্র মাসচারেক আগে প্লুরিসিতে ভুগে উঠল বুদ্ধিরাম। এখনাে শরীর তেমন জুতের নয়। কাকিরমুখে কথাটা শােনা গিয়েছিল, আদুরির নাকি আজকাল খুব অম্বল হয়। তা এরকম কতমেয়েরই হয়। কার তাতে মাথাব্যথা? বুদ্ধিরাম মানুষ ভালাে বলেই না খোঁজখবর করতে লাগল।

লোকজনের কাছে শুনল, হারবল খেতে তার পিসির অম্বলের ব্যথা সেরে গেছে।কথাটা মানিক মণ্ডলের কাছেও শােনা, হ্যা, হারবল জব্বর ওষুধ বটে, তিন শিশি খেতেনা খেতে তার বউ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আর একদিন পরিতােষও কথায় কথায় বলেছিল,হারবল একেবারে অম্বলের যম। তবে পাওয়া শক্ত। মন্মথ কবিরাজ সেই শিবপুরের লােক, আশির ওপর বয়স। বেশি পারেও না তৈরি করতে। কয়েক বােতল করে ছাড়ে।দারুণ চাহিদা। চকবেড়ের হাটে একজন লােক নিয়ে আসে বেচতে।খবর পেয়েই আজ মঙ্গলবারে স্কুলের দুটো ক্লাস অন্যের ঘাড়ে গছিয়ে সাইকেল মেরে ছুটে এসেছে এত দূর। অশ্বত্থ গাছের গােড়ায় আধবুড়াে খিটখিটে চেহারার একটা লােক। ময়লা চাদর পেতে কয়েকটা বিবর্ণ ধুলাটে শিশি সাজিয়ে বসেছিল। ভারী বিরস মুখ।বুদ্ধিরাম জিজ্ঞেস করল, হারবল আছে? লােকটা মুখ তুলে গম্ভীর গলায় বলল, আছে। সতেরাে টাকা।সতেরাে টাকা শুনে বুদ্ধিরাম একটু বিচলিত হয়েছিল। দু শিশি কেনার ইচ্ছে ছিল।কিন্তু কুড়িয়ে বাড়িয়ে পকেট থেকে আঠাশ টাকার বেশি বেরলাে না।আচ্ছা, দু শিশি নিলে কনসেশন হয় না? লােকটা এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের চোখে তাকাল যেন মরা ইদুর দেখছে। মুখটা অন্যধারে ফিরিয়ে নিয়ে বলল, পাচ্ছেন যে সেই ঢের। মন্মথ কবিরাজের আয়ু ফুরলাে বলে। তারপর হারবলও হাওয়া। মাথা খুঁড়ে মরলেও পাওয়া যাবে না।একটা শিশি কিনে বুদ্ধিরাম বলল, সামনের মঙ্গলবার আবার যদি আসি পাবাে তাে! বলা যাচ্ছে না। কথাটা যা-ই হােক সেটা বলার একটা রংঢং আছে তাে। লােকটা এমনভাবে বলাযাচ্ছে না’ বলল যা আঁতে লাগে। মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করাটাই যেন বাহাদুরি। বেচিসতাে বাপু কবরেজি ওষুধ, তাও গাছতলায় বসে, অত দেমাক কিসের!

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ অনুরাধার স্বপ্ন

শিশিটা নিয়ে বুদ্ধিরাম হাটে একটু ঘুরে বেড়াল। চকবেড়ের হাট বেশ বড়। বেশ গিজগিজে ভিড়ও হয়েছে। চেনা মুখ নজরে পড়বেই। আশপাশের পাঁচ-সাত গাঁয়ের লােকই তাে আসে। বুদ্ধিরামের এখন চেনা কোনাে লােকের সঙ্গে জুটতে ভালাে লাগছে না। মাঝে মাঝে তার একটু একা বােকা থাকতে বড় ভালাে লাগে।জিলিপি ভাজার মিঠে মাতলা গন্ধ আসছে। ভজার দোকানের জিলিপি বিখ্যাত। শুধুজিলিপি বেচেই ভজা সাতপুকুরে ত্রিশ বিঘে ধানজমি, পাকা বাড়ি করে ফেলেছে। কিনেছে তিনটে পাঞ্জাবি গাই। ডিজেল পাম্প সেট আর ট্রাক্টরও। ঘেঁড়া গেঞ্জি আরহেঁটো ধুতি পরে এমন ভাবখানা করে থাকে যেন তার নুন আনতে পান্তা ফুরােয়। আজও ভজার সেই বেশ। নারকোলের মালার ফুটো দিয়ে পাকা হাতে খামি ফেলছে। ফুটন্ত তেলে। চারটে ছােকরা গামলা থেকে টাটকা জিলিপি শালপাতার ঠোঙায় বেচতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের মানুষ মাছির মতাে ভনভন করছে দোকানের সামনে।বুদ্ধিরাম কাণ্ডটা দেখল খানিক দাঁড়িয়ে। ডান হাতে বাঁ হাতে পয়সা আসছে জোর।ক্যাশবাক্সটা বন্ধ করার সময় নেই। আর তার ভিতরে টাকাপয়সা এমন গিজগিজ করছে। যে, চোখ কচকচ করে। টাকাপয়সার ভাবনা বুদ্ধিরাম বিশেষভাবে না বটে, কিন্তু একসঙ্গে অতগুলাে টাকা দেখলে বুকের ভিতরটায় যেন কেমন করে। বুদ্ধিরাম বেঞ্চে একটা জায়গা খুঁজল। ঠাসাঠাসি গাদাগাদি লােক। সকলেই জিলিপিতে মজে আছে। এমন খাচ্ছে যেন এই শেষ খাওয়া। ভােমা ভােমা নীল মাছি ওড়াওড়ি করছে বিস্তর। ভিতরবাগে তিনখানা বেঞ্চের একটা থেকে দুজন উঠে যেতেই বুদ্ধিরামগিয়ে বসে পড়ল। এখনাে আশ্বিনের শেষে তেমন শীতভাব নেই। দুপুরবেলাটায় গরমহয়। উনুনের তাপ আর কাঠের ধোঁয়ায় চালাঘরের ভিতরটা রীতিমতাে তেতে আছে। বুদ্ধিরাম বসেই ঘামতে লাগল। পাশের লােকটা এখনাে জিলিপি পায়নি। বৃথা হাঁকডাক করছে, বলি ও ভজাদা,আধঘণ্টা হয়ে গেল হাঁ করে বসে আছি। দেবে তাে! দিচ্ছি বাপু, দিচ্ছি। দশখানা হাত তাে নয়। আর আমাদেরই বুঝি মেলা ফালতু সময় আছে হাতে?এই চড়াটা হলেই দিচ্ছি গাে। লােকটা ফস্ করে বুদ্ধিরামের হাত থেকে বােতলটা কেড়ে নিয়ে দেখল। তারপর মাতব্বরের মতে বলল, হারবল? মন্মথ কবরেজের ওষুধ। দুর দুর, কোনাে কাজের নয়। তিন শিশি খেয়েছি। বুদ্ধিরাম তার হাত থেকে বােতলটা ফেরত নিয়ে বলল, তা বেশ, কাজ হয় না তাে হয় না।লােকটা ভারী কড়া চোখে বুদ্ধিরামকে একটু চেয়ে দেখল। জিলিপি এসে পড়ায় আর কিছু বলতে পারল না। মুখ তাে মাত্র একটা, এক সঙ্গে দু কাজ তাে করা যায় না। তার ওপর ভজার জিলিপি মুখকে ভারী রসস্থ করে দেয়। কথা বলাই যায় না।বুদ্ধিরামকে লােকে বলে ভাবের লােক। কথাটা মিথ্যেও নয়। বুদ্ধিরাম বড় ভাবতে ভালােবাসে। ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা যে তাকে কাহা কঁহা মুলুকে নিয়ে যায়। কত আজগুবি জিনিস দেখায় তার কোনাে ঠিক ঠিকানা নেই। বুদ্ধিরাম ভজার জিলিপির দোকানে বসে বসে ভাবতে লাগল, এই যে ভজা বাঁ হাতে ডান হাতে হরির লুটের মতােপয়সা কামাচ্ছে এতে হচ্ছেটা কী?

 এত জমি জিরেত, ঘর বাড়ি, বিষয় সম্পত্তি, এসব ছেড়ে একদিন ফুটুস করে চোখ ওল্টাতে হবে। তখন ভজার ছেলেরা কেউ প্যাচ কষতে আসবে না। ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে লাঠালাঠি মারামারি করে ভাগ ভিন্ন হবে। ভজা কি আর তা জানে না। তবু খেয়েখেয়ে মেলায় মেলায় রােদ জল মাথায় করে চালা বেঁধে কেবল জিলিপি খেলিয়ে যাচ্ছে। টাকার নেশায় পেয়েছে লােকটাকে। বসে থাকতে থাকতে বুদ্ধিরামের পালা এসে গেল অবশেষে। ঠোঙায় আটখানা রসে মাখামাখি গরম জিলিপি। আহা, এইরকম এক ঠোঙা যদি আদুরির হাতেও গরমাগরম পৌঁছে দেয়া যেত!প্রথম জিলিপিটা দাঁতে কাটতে গিয়েই টপ টপ করে অসাবধানে দু ফোটা রস পড়েগেল টেরিকটনের পাঞ্জাবিতে। বড় সাধের পাঞ্জাবি। ঘি রঙের, গলা আর পুটে চিকনেরকাজ করা। বুদ্ধিরাম রুমালে মুছে নিল রসটা। মনটা খুঁত খুঁত করতে লাগল। এক্কেবারে নতুন পাঞ্জাবি। কাচি ধুতির ওপর এটা পরে আদুরির বাড়ির সামনে খুব কয়েকটা চক্কর দিয়েছিল সাইকেলে। আদুরি অবশ্য বেরােয়নি। কিন্তু বুদ্ধিরামের ধারণা যে, আদুরি তাকে আড়াল থেকে ঠিকই দেখে। জিলিপির দামটা দিয়ে বুদ্ধিরাম উঠে পড়ল। সামনেই পানের দোকান। সে পানসিগারেট খায় না। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে তেড়াবেঁড়া আয়নায় নিজেকে একটু দেখেনিল। না, বুন্ধিরাম দেখতে খারাপ নয়। রংটা যা একটু ময়লা। কিন্তু মুখ চোখ বেশ কাটাকাটা। নিজেকে দেখে সে একটু খুশিই হল। রুমাল দিয়ে মুখের ঘামটা মুছে নিল।একটা দোকানে পঞ্চাশ পয়সার কড়ারে সাইকেল জমা রেখেছিল। সাইকেল নিয়েবেরিয়ে পড়ল। চারিদিকে উধাও মাঠ, ঘাট, ধানক্ষেত। আকাশটা কী বিশাল। বাঁশবনের পেছনে সুর্য একটু ঢলে গেছে। ফুরফুরে হাওয়া।বুব্বিরাম ধানক্ষেতে নেমে পড়ল। চওড়া আল। খানিকদুর গিয়ে রাস্তা।ধানক্ষেতের ভিতরে নেমে বুদ্ধিরামের মনটা আবার কেমন যেন হয়ে গেল। আদুরি কি ওষুধটা খাবে? এমনিতেই মেয়েরা ওষুধ খেতে চায় না, তার ওপর বুদ্ধিরামের পাঠানাে ওষুধ। আদুরি বােধহয় ছোঁবেও না। এত পরিশ্রম বৃথাই যাবে। তা যাক। বুন্ধিরামের কাজ বুদ্ধিরাম করেই যাবে।পুজোয় একটা শাড়ি পাঠিয়েছিল বুদ্ধিরাম। বুদ্ধিরামের বােন রসকলি গিয়ে দিয়েএসেছিল। হাত বাড়িয়ে নেয়ওনি। বিরস মুখে নাকি জিজ্ঞেস করেছিল, কে পাঠিয়েছে রে?রসকলি বােকা গােছের মেয়ে। ভয়ে ভয়ে শেখানাে কথা বলেছিল, মা পাঠাল।তাের মা আমাকে শাড়ি পাঠাবে কেন?

 তা জানি না। এটা পরে অষ্টমী পুজোয় অঞ্জলি দিও। শাড়িটা ভালােই। কালু উঁতির ঘর থেকে কেনা। লাল জমির ওপর ঢাকাই বুটি। শাড়িটার দিকে তাকায়ওনি আদুরি। শুধু দয়া করে বলেছিল, ওখানে কোথাও রেখে যা। সেই শাড়ি আজ অবধি পরেনি আদুরি। নজর রেখে দেখেছে বুদ্ধিরাম। খোজ খবরও নিয়েছে। শাড়িটা পরেনি। তবে নিয়েছে ফিরিয়ে দেয়নি, এটাই যা লাভ হয়েছিল।বুদ্ধিরামের। তারপর একদিন হঠাৎ নজরে পড়ল, সেই শাড়িটা পরে রসকলি ঘুরেবেড়াচ্ছে। শাড়িটা কোথায় পেলি? ভয়ে ভয়ে রসকলি বলল, আদুরিদিদি দিল।দিল বলেই নিলি ?বুন্ধিরাম আর কিছু বলেনি। রাগটা গিলে ফেলেছিল। মনটা বড় উচাটন ছিল কয়েকদিন অপমানে। দোষঘাট মানুষের কি হয় না? তখন বুদ্ধিরাম তাে আর এই বুদ্ধিরাম ছিল না। আজকের এক গেঁয়াে স্কুলের মাস্টার বুদ্ধিরামকে দেখে কে বিশ্বাস করবে যে, ইস্কুলে সে ছিল ফার্স্ট বয়। পাশটাও করেছিল জব্বর, দু দুটো লেটার নিয়ে। বিয়ের কথাটা তখনই ওঠে। বুদ্ধিরাম যখন।ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।বুড়ি ঠাকুমা তখন এতটা বুড়ি হয়নি। একদিন আদুরিকে একেবারে কনে-সাজে সাজিয়ে নিয়ে এসে বলল, দেখ তাে ভাই, পছন্দ হয়? হলে দেখে রাখি। পাশ টাশ করে। থিতু হলে মালা-বদল করিয়ে দেবাে।আদুরি অপছন্দের মেয়ে নয়। ফর্সা তাে বটেই মুখচোখ রীতিমতাে ভালাে।কিন্তু গাঁয়ের মেয়ে, নিত্য দেখাশােনা হয়। যাকে বলে ঘর কা মুর্গী, তাই বুদ্ধিরাম। ঠোট বেঁকিয়ে বলেছিল, ফু, এর চেয়ে গলায় দড়ি দেওয়া ভালাে। কেন রে, মেয়েটা খারাপ? দেখ তাে কেমন মুখচোখ! কেমন ফর্সা।সাতজন্ম বিয়ে না করে থাকলেও ও মেয়ে আমার চলবে না। যাও তাে ঠাকুমা, সঙবন্ধ করাে।

 একবারে মুখের ওপর থাবড়া মারা যাকে বলে। আদুরির খুব অপমান হয়েছিল। তার তখন বছর বারাে বয়স। এক ছুটে পালিয়ে গেল। আর কোনাে দিন এল না। খুব নাকি গড়াগড়ি খেয়ে কেঁদেছিল মেয়েটা। দিন তিনেক ভালাে করে খায় দায়নি।বুদ্ধিরামের তখন এসব দিকে মাথা দেওয়ার সময় নেই। চৌদ্দ মাইল দূরের মহকুমাশহরে কলেজে যেতে হয়। নতুন বন্ধুবান্ধব, নতুন রকমের জীবন। সেখানে কে একটা গেঁয়াে মেয়েকে নিয়ে ভাববার মতাে মেজাজটাই তার নেই। আরও একটা ঘটনা ঘটেছিল। বুদ্ধিরামের সঙ্গে মেলা মেয়েও পড়ত। তাদের একছিল হেনা। দেখতে শুনতে ভালাে তাে বটেই, তার কথাবার্তা চাউনি টাউনিও ছিল ভারীভালাে। কথাবার্তা বলত টকাস টকাস। বুদ্ধিরাম ছাত্র ভালাে। সুতরাং হেনা তার দিকে একটু ঢলল। বছর দেড়েক হেনারসঙ্গে বেশ মাখামাখি হয়েছিল বুদ্ধিরামের। তবে সেটাকে ভাব-ভালােবাসা বলা যাবেকিনা তা নিয়ে বুদ্ধিরামের আজও সংশয় আছে। তবে হেনা আর যা-ই করুক না করুক বুদ্ধিরামের লেখাপড়ার বারােটা বাজাল। কলেজের প্রথম ধাপটা ডিঙোতেই দম বেরিয়ে গেল বুদ্ধিরামের। ডিঙোলাে খোঁড়া ঘােড়ার মতাে। কিন্তু হেনা দিব্যি ভালাে পাশ টাশ করে কলকাতায় ডাক্তারি পড়তে চলেগেল। বুদ্ধিরামের পতনের সেই শুরু। বি এস সি পাশ করল অনার্স ছাড়া। বাবা ডেকে বলল, পড়াশুনাের তাে দেখছি তেমন উন্নতি হল না। তা পেঁয়াে ছেলের আর এর বেশি। কীই বা হওয়ার কথা!বুদ্ধিরাম সে-ই গাঁয়ের ছেলে গাঁয়ে ফিরে এল। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর হল। পাশের গাঁ বিষ্ণু পুরের মস্ত ইস্কুলে তখন সায়েন্সের মাস্টার খোঁজা হচ্ছে। বুদ্ধিরাম কে তারা লুফে নিল।

 বুদ্ধিরামের মনের অবস্থা তখন সাঙঘাতিক। রাগে দুঃখে দিনরাত সে ভিতরে ভিতরে জ্বলে আর পোরে। লেখাপড়ায় একটা মারকাটারি কিছু করে বিজয়গর্বে গাঁয়ে ফিরে আসবে, এই না সে জানত। আর সে জায়গায় টিকিয়ে টিকিয়ে মােটে বি এস সি। বুদ্ধিরাম কিছুদিন আপনমনে বিড়বিড় করে ঘুরে বেড়াত পাগলের মতো, দাড়ি রাখত,পােশাক-আশাকের ঠিক ছিল না। আত্মহত্যা করতে রেল রাস্তায় গিয়েছিল তিনবার। ঠিক শেষ সময়টায় কেন যেন সাহসে কুলােয়নি। তারপরেই একদিন একটা ঘটনা ঘটল। এমনি দেখতে গেলে কিছুই নয়। কিন্তু তারমধ্যেই বুদ্ধিরামের জীবনটা একটা মােড় ঘুরল। আমবাগানের ভিতর দিয়ে বিশু আর বুদ্ধিরাম জিতেন পাড়ুউ এর বাড়ি যাচ্ছিল মিটিং করতে। জিতেন সেবার ইউনিয়ন বাের্ডের ইলেকশনে নেমেছে। জিতেনকে জেতানোের খুব ভােড়জোড় চলছে। বুদ্ধিরাম তখন যা তােক একটা কিছু নিয়ে মেতে থাকার জন্য ব্যস্ত। জীবনের হাহাকার আরব্যর্থতা ভুলতে মাথাটাকে কোনাে একটা ভূতের জিম্মায় না দিলেই নয়। নইলে জিতেনের ইলেকশন নিয়ে কেনই বা বুদ্ধিরামের মাথাব্যথা হবে। আমবাগানে শরৎকালের একটা সােনালী রুপালী রােদের চিকরিকাটা আলাে-ছায়া।সকাল বেলাটায় ভারী পরিষ্কার বাতাস ছিল সেদিন। ঘাসের শিশির সবটা তখনাে শুকোয়নি।উল্টো দিক থেকে একটা ছিপছিপে মেয়ে হেঁটে আসছিল। একা, নতমুখী। তার চুলছিল অগােছালাে এলাে খোপায় বাঁধা। আঁচলটা ঘুরিয়ে শরীর ঢেকেছে। দেখে কেমন যেন মনটা ভিজে গেল বুদ্ধিরামের। কে রে মেয়েটা?

 দুর শালা! চিনিস না? ও তাে আদুরি। আদুরি! বুদ্ধিরাম এত অবাক হল যে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে হাঁ হয়ে গেল। এক গাঁয়ে বাস হলেও আদুরির সঙ্গে তার দেখা হয়নি। কারাে দিকে তাকায়ও না বুদ্ধিরাম। সেই আদুরি কি এই আদুরি? আদুরি মাথা নিচু করে রেখেই তাদের পেরিয়ে চলে গেল। ভূক্ষেপও করল না।আর সেই ঘটনাটা সারাদিন বুদ্ধিরামের মগজে নতুন একটা ভূত হয়ে ঢুকে গেল। বাড়ি ফিরেই সে ঠাকুমাকে ধরল, শােনাে ঠাকুমা, একটা কথা আছে। কি কথা? সে-ই যে আদুরি মনে আছে?আদুরিকে মনে থাকবে না কেন? ওকেই বিয়ে করব। বলে দাও। ঠাকুমা তার মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, বড্ড দেরী করে ফেললি ভাই, আদুরির তাে শুনছি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। হরিপুরের চন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে পরেশের সঙ্গে। বুদ্ধিরাম এমন তাজ্জব কথা যেন জীবনে শােনেনি। আদুরির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।তাহলে তাে মুশকিল হবে বুদ্ধিরামের। সেই দিনই সে গােপনে তার দু-একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শে বসে গেল। কেষ্ট বলল, বিয়েটা না ভাঙতে পারলে তাের আশা নেই। ভাঙতে হলে সবচেয়েভালাে উপায় হল চন্দ্রনাথ মল্লিককে একখানা বেনামা চিঠি লেখা। তাে তাই হল। কেষ্ট নানা ছন্দে লিখতে পারে। তার সাইন বাের্ডের দোকান আছে। চিঠিটা সেই লিখে দিল। দিন সাতেক বাদে শােনা গেল, বিয়ে ভেঙে গেছে।বুদ্ধিরাম ভেবেছিল, এবার জলের মতাে কাজটা হয়ে যাবে। সে গিয়ে ফের ঠাকুমাকে ধরল, শুনছি আদুরির বিয়েটা ভেঙে গেছে। তা আমি রাজি আছি বিয়ে করতে। ঠাকুমা গেল প্রস্তাব নিয়ে। বুদ্ধিরাম নিশ্চিন্তে ছিল। এরকম প্রস্তাব তাে মেয়েরবাড়ির পক্ষে স্বপ্নের অগােচর। কিন্তু সন্ধেবেলা ফিরে এসে ঠাকুমা বিরস মুখে বলল, মেয়েটার মাথায় ভূত আছে। কেন গাে ঠাকুমা ?

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ রাইকমল

 মুখের ওপর বলল, ও ছেলেকে বিয়ে করার চেয়ে গলায় দড়ি দেওয়া ভালাে। বুদ্ধিরাম এককথায় এমন হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল যে বলার নয়। বলল? এত বুকেরপাটা? সেই রাতে বুদ্ধিরাম ঘুমােতে পারল না। কেবল ঘরবার করল, দশবার জল খেল,ঘন ঘন পেচ্ছাব করল। মাথায় চুল মুঠো করে ধরে বসে রইল। রাগে ক্ষোভে অপমানে। তার মাথাটা গেল ঘুলিয়ে। ভােরের দিকে সে একটু ঝিমােলাে। ঝিমােতে ঝিমােতেভাবল, বহােৎ আচ্ছা। এইরকম তেজী মেয়েই তাে চাই। গেঁয়াে মেয়েগুলাে যেন ভেজা ন্যাতানো। কারাে ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই। আদুরির আছে, এটা তাে খুব ভালাে খবর।সকাল বেলায় সে একখানা পেল্লায় সাত পৃষ্ঠার চিঠি লিখে ফেলল আদুরিকে। মেলাভালাে ভালাে শব্দ লিখল তার মধ্যে। অন্তত গােটা পাঁচেক কোটেশন ছিল। সবশেষে লিখল…“তােমাকে ছাড়া আমার জীবন বৃথা।”রসকলির হাত দিয়ে চিঠিটা পাঠিয়ে সে ঘরে পায়চারি করতে লাগল তীব্র উত্তেজনায়। আজ অবধি সে কোনাে মেয়েকে প্রেমপত্র লেখেনি। এই প্রথম। রসকলি ঘণ্টাখানেক পর ফিরে এসে বলল, ও দাদা, চিঠিটা যে না পড়েই ছিড়ে ফেলল গাে। চুপ। চেঁচাস না। কিছু বলল না? কি বলবে? শুধু জিজ্ঞেস করল চিঠিটা কে দিয়েছে। তােমার কথা বলতেই খাম শুদ্ধু চিঠিটা কুঁচি কুচি করে ছিড়ে ফেলল। বােনের কাছে ভারী অপদস্থ হয়ে পড়ল বুদ্ধিরাম। তবে রসকলি হাবাগােবা বলে রক্ষে। বুদ্ধিরাম বলল, কাউকে কিছু বলিস না। ভালাে একটা জামা কিনে দেবােখন। তখন অপমানে লাঞ্ছনায় বুদ্ধিরামের পায়ের তলায় মাটি নেই। সারা দিনটা তার কাটল এক ঘােরের মধ্যে। কিন্তু দুদিন বাদে সে বুঝতে পারল, আদুরি যত কঠিনই হােক তাকে জয় করতে না পারলে জীবনটাই বৃথা। তবে বুদ্ধিরাম আর বােকার মত চিঠি চাপাটি চালাচালিতে গেল না। আদুরির ধাতটা বুঝবার চেষ্টা করতে লাগল সে। গাঁয়ের মেয়ে। সুতরাং তাদের বাড়ির সকলের সঙ্গেই আজন্ম চেনাজানা বুদ্ধিরামের। তবে সে দেমাক বশে কারাে বাড়িতেই তেমন যেতটেত না। ঘটনার পর দিনকয়েক আদুরিদের বাড়িতে হানা দিতে লাগল সে। আদুরির কাকা জ্যাঠা মিলে মস্ত সংসার। বড় গেরস্ত তারা। তিন-চারখানা উঠোন, বিশ পঁচিশটা ঘর। সারা দিন ক্যাচ ক্যাচ লেগেইআছে। বুদ্ধিরাম গিয়ে যে খুব সুবিধে করতে পারল তা নয়। বাইরের ঘরের দাওয়ায় বসে হয়তাে কখনাে আদুরির কেশশা দাদুর সঙ্গে খানিক কথা কয়ে এল। না হয় তাে কোনােদিন আদুরির জ্যাঠা হারুবাবুর কিছু উপদেশ শুনে আসতে হল। চা-বিস্কুটও যে জোটেনি তা নয়। সে গাঁয়ের ভালাে ছেলে। খাতির একটু লােকে,করেই কিন্তু যে-উদ্দেশ্যে যাওয়া সেদিকে কিছুই এগােলাে না। কিছুদিন পর সে বুঝল, এভাবে আদুরির কাছে এগােনাে যাবে না। মহিলা মহলে ঢুকতে হবে। তা তাতেও বাধা ছিল না। আদুরিদের অন্দরমহলেও ঢুকতে সে পারে। আদুরির এক বউদি হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলল, হ্যা গাে বুদ্ধি ঠাকুরপাে, কোনােকালে তো তােমাকে এ বাড়িতে যাতায়াত করতে দেখিনি। তােমার মতলবটা কী খুলে বলাে তাে! আমার তাে বাপু, তােমার মুখচোখ ভালাে ঠেকছে না। এ কথায় আর এক দফা অপমান বােধ করল বুদ্ধিরাম সে পুরুষ, কোন লজ্জায় মা মাসী বউদি শ্রেণীর মেয়েদের সঙ্গে বসে গল্প করে ?

 সুতরাং বুদ্ধিরামকে জাল গােটাতে হল। তারপরেই আবার বিপদ। আদুরির ফের সম্বন্ধ এল। চেহারাখানা ভালাে, কিছুলেখাপড়াও জানে, সুতরাং আদুরিকে যে দেখে সে-ই পছন্দ করে যায়। দ্বিতীয় পাত্রপক্ষকেও বেনামা চিঠি দিতে হল। ভেঙেও গেল বিয়ে। কিন্তু তাতেও বুদ্ধিরামের যে কাজ খুব এগােল তাও নয়। বরং উল্টে একটা বিপদ দেখা দিল। কেউ যে বেনামা চিঠি দিয়ে আদুরির বিয়ে ভাঙছে এটা বেশ চাউর হয়ে গেল। লােকটা যে কে তার খোঁজা খুঁজিও শুরু হল। তৃতীয় বার যখন আদুরিকে পছন্দ করে গেল আর এক পাত্র পক্ষ তখন আদুরির বাপ জ্যাঠা পাত্র পক্ষকে বলেই দিল, বেনামা চিঠি যেতে পারে,আমল দেবেন না। কোনাে বদমাশ লােক করছে এই কাজ। খুবই ভয়ে ভয়ে রইল বুদ্ধিমরাম। কেষ্ট ভরসা দিয়ে বলল, আরে ঘাবড়াচ্ছিস কেন?

এমন কলঙ্কের কথা লিখে দেবাে যে, পাত্রপক্ষ আঁতকে উঠবে। কিন্তু এই তৃতীয় বার বুদ্ধিরাম ধরা পড়ে গেল। আদুরির সাত সাতটা গুণ্ডা ভাই একদিন বাদামতলায় চড়াও হল তার ওপর। সতীশটা মহা ষণ্ড। সে-ই সাইকেল থেকে টেনে নামাল বুদ্ধিরামকে। বলি, তাের ব্যাপারটা কী? কিসের ব্যাপার? ন্যাকা! আদুরির বিয়ে ভাঙতে চিঠি দেয় কে? আমি না। তুই ছাড়া আর কে দেবে! আমার কী স্বার্থ? মেজো বউদি বলছিল তুই নাকি আমাদের বাড়িতে ঘুরঘুর করতিস!

 বুদ্ধিরাম বুদ্ধি হারিয়ে ফেলছিল। সত্য গােপন করার অভ্যাস তার নেই। গুছিয়ে। মিথ্যে কথা বলা তার আসেও না। সে আমতা আমতা করতে লাগল।সতীশ অবশ্য মারধর করল না। বলল, যদি আদুরিকে বিয়ে করতে চাস তাে সে কথা বললেই হয়। গায়ে তাের মতাে ছেলে ক’টা? আর যদি নিতান্তই বদমাইশির জন্য করে থাকিস তাহলে…

বুদ্ধিরাম কেঁদে ফেলেছিল। একটু সামলে নিয়ে বলল, বিয়ে করতে চাই সাবাশ বলে খুব পিঠ চাপড়ে দিল সতীশ। বলল, এ কথাটা ঘুরিয়ে নাক দেখানােমতাে হল। আগে বললেই ব্যবস্থা হয়ে যেত।কিন্তু ব্যবস্থা হল না। পরদিনই সতীশ এসে তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল,মুশকিল কি হয়েছে জানিস? তাের ওপর আদুরি মহা খাপ্পা। কী করেছিলি বল তাে! সব শুনেটুনে সতীশ বলল, আচ্ছা, চুপচাপ থাক। দেখি কী করা যায়! বলা পর্যন্তই। সতীশ কিছু করতে পারেনি। চিড়ে ভেজেনি।কিন্তু এর পর থেকে আদুরির আর সম্বন্ধ আসত না। এলেও আদুরি বেঁকে বসত। এই সবই সাত আট বছর আগেকার কথা। এই সাত আট বছর ধরে বুদ্ধিরাম আড়ালথেকে আদুরির উদ্দেশ্যে তার সব অস্ত্রশস্ত্র প্রয়ােগ করেছে। প্রতিবার পুজোয় শাড়িপাঠায়, টুকটাক উপহার পাঠায়, কোনােটাই আদুরি নেয় না। নিলেও ফেলে দেয় বা অন্য কাউকে দান করে।

 কিন্তু বয়স তাে বসে নেই। আদুরির বিয়ের বয়স পার হতে চলল। বুদ্ধিরামও ত্রিশ পেরিয়েছে, কোনাে দিকেই কিছু এগােলাে না। আদুরির হৃদয় কপাট বজ্র আঁটুনিতে বন্ধই রইল। ধানক্ষেতের ভিতর দিয়ে সাইকেল ঠেলে নিয়ে যেতে যেতে এসব কথাই ভাবছিল বুদ্ধিরাম।

 বড় রাস্তায় উঠে সে সাইকেলে চাপল। পাঞ্জাবির পকেটে ভারী শিশিটা কুল খাচ্ছে। কষ্ট করাই সার হল। কোনাে মানে হয় না এর। গাঁয়ে ঢুকবার মুখে বাস রাস্তায় কয়েকটি দোকান। আঁধার হয়ে এসেছে। টেমি জ্বলছে দোকানে দোকানে। মহীনের চায়ের দোকানে-দু-চারজন বসে আছে। ষষ্ঠী হাঁকমারল, কে রে! বুদ্ধি নাকি?

 বুদ্ধি নেমে পড়ল। সাইকেলটা স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে বসে গেল। একটু ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে এখন। এক ভাড় চা হলে হয়। ষষ্ঠী একটু বেশি কথা কয়। নানা কথা বকবক করে যাচ্ছিল। সে একটু তেলানাে মানুষ। যাকে দেখে তাকেই একটু একটু তেল দেওয়া তার স্বভাব। পুরনাে কথার সুত্রধরে বলল, তাের কতাে বড় হওয়ার কথা ছিল বল তাে! গায়ে আজ অবধি তাের মতাে বেশি নম্বর নিয়ে কেউ পাশ করেছে? বসন্ত স্যার তাে বলতই, বুদ্ধিরামের মতাে ছেলে হয় না। যদি লেগে থাকে তাে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট কিছু একটা হয়ে ছাড়বে। এসবই পুরনাে ব্যর্থতার কথা। বুদ্ধিরাম যা খুঁচিয়ে তুলতে চায় না। ধীরে ধীরে তার আঁচ নিবে গেছে। সে গাঁয়ের মাস্টার হয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে মাপে ছােট করে ফেলেছে। সয়েও গেছে সব। কিন্তু কেউ খুঁচিয়ে তুললে আজও বুকটা বড় উথাল-পাথাল ষষ্ঠী, চুপ কর। ওসব কথা বলে আর কী হবে! আমরা যে তাের কথা সব সময়েই বলাবলি করি। চোখের সামনে দেখেছি কিনা। কী জিনিস ছিল তাের ভিতরে। বুদ্ধিরাম ভাড়টা ফেলে দিয়ে উঠল। বলল, যাই। ছাত্ররা বসে থাকবে। যা। বুদ্ধিরাম সাইকেলে চেপে বড় রাস্তা থেকে গায়ের পথে ঢুকে পড়ল। অন্ধকার রাস্তায় হাজার হাজার জোনাকি জ্বলছে। তাদের মিটমিটে আলােয় কিছুই প্রতিভাত হয় না। অথচ জ্বলে। লাখাে লাখাে জ্বলে। তাহলে কী লাভ জ্বলে। মােট দশ জন ছাত্র বাড়িতে এসে পড়ে। মাথা পিছু কুড়ি টাকা করে মাস গেলে দুশাে টাকা তার আসার কথা। কিন্তু নগদ টাকা বের করতে গাঁয়ের লােকের গায়ে জ্বর আসে। বাকি বকেয়া পড়ে যায় অনেক। তবু বুদ্ধিরাম পড়ায়। বেশির ভাগই গবেট দু-একজন একটু আধটু বােঝে সােঝে। পড়াতে বসবার আগে পাতুকে ডেকে শিশিটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, ও বাড়িতে গিয়েদিয়ে আয়। তার হাতে দিস।

 রসকলির বিয়ে হয়ে গেছে। একটু বয়স কালেই হল। এখন রসকলির জায়গা নিয়েছে বুদ্ধিরামের ভাইঝি পাতু। আদুরি আর বুদ্ধিরামের ব্যাপারটা দু-বাড়ির কারাে আর অজানা নেই। সুতরাং না হক লজ্জা পাওয়ার ও কোনাে মানে হয় না। হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসে গেল বুদ্ধিরাম। কিছুক্ষণ আর অন্যদিকে মনটা ছােটা ছুটি করল না। ছাত্রদের মুখের দিকে চেয়ে অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। এই ভুলে থাকাটাই এখন বুদ্ধিরামের সবচেয়ে বড় কথা। যত ভুলে থাকা যায় ততইভালাে। জীবনটা আর কতই বা লম্বা। একদিন আয়ু ফুরােবেই। তখন শান্তি। তখনভারী শান্তি। পড়িয়ে যখন উঠল বুদ্ধিরাম তখন বেশ রাত হয়েছে। ছাত্ররা যে যার লণ্ঠন হাতে উঠোন পেরিয়ে চলে যাচ্ছে। বুদ্ধিরাম দাওয়ায় দাঁড়িয়ে দেখল। এরপর তার একা লাগবে। খুব একা। পাতু ফিরে এসেছে। বারান্দায় ঘুরে ঘুরে কোলের ভাইকে ঘুম পাড়াচ্ছিল। হাতে দিয়েছিস তাে! হ্যা গাে। কিছু বলল? না। শিশিটার গায়ে কী লেখা আছে পড়ল। তারপর তাকে রেখে দিল। ভাতের গন্ধ আসছে। জ্যাঠা মশাইয়ের কাশির শব্দ। কে যেন কুয়াে থেকে জলতুলছে ছলাৎ ছপাৎ করে। দুটো কুকুরে ঝগড়া লেগেছে খুব। দাওয়ায় দাঁড়িয়ে বুদ্ধিরাম বাইরের কুয়াশা মাখা জ্যোৎস্নার দিকে আনমনে চেয়ে রইল।না, বেঁচে থাকাটার কোনাে মানেই খুঁজে পায় না সে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে নিজের ঘরে ঢুকল। বাড়ির সবচেয়ে ছােটো ঘরখানা তার। ঘরে একখানা চৌকি, একটা টেবিল আর চেয়ার আর একখানা বইয়ের আলমারি। বুদ্ধিরাম চেয়ারে বসে লণ্ঠনের আলােয় একখানা বইয়ের পাতা খানিকক্ষণ ওল্টাল। বইটা কী, কোন বিষয়ের তাও যেন বুঝতে পারছিল না। বইটা রেখে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে রইল। গাছের ফাক দিয়ে জ্যোৎস্না দেখা যাচ্ছে। জ্যোৎস্নার ও কোনাে অর্থ হয় না। ঝড় বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম কোনােটারই কোনাে অর্থ হয় না। অথচ বেঁচে থাকতে হবে। এ কী জ্বালা রে বাপ?

বউদি এসে খেতে ডাকল বলে বেঁচে গেল বুদ্ধিরাম। খাওয়ারও কোনাে অর্থ হয় না। তবু সেটা একটা কাজ। কিছুক্ষণ সময় কাটে। কথাবার্তা হয়, হাসিঠাট্টা হয়। সময়টা কেটে যায়। বুদ্ধিরাম গিয়ে সাগ্রহে খেতে বসল।খেয়ে এসে বুদ্ধিরাম ফের কিছুক্ষণ বসে রইল চেয়ারে। চেয়ারে বসেই কখন ঘুমিয়ে পড়ল, কে জানে। পাতু এসে জাগাল, ওঠো সেজকা, বিছানা করে মশারি ফেলে গুঁজে দিয়েছি। শােওগে। হাই-তুলে উঠতে যাচ্ছিল বুদ্ধিরাম, পাতু ফের বলল, আজ ও বাড়ির সকলের মনখারাপ। নিবারণদাদুর অবস্থা ভালাে নয়। আদুরি পিসির চোখ লাল। খুব কাঁদছিল। নিবারণ মানে হল আদুরির বাবা। বুদ্ধিরাম খবরটা শুনল মাত্র। মনে আর কোনাে বুজকুড়ি কাটল না। কলঘর ঘুরে এসে শুয়ে পড়ল। বাপ যদি মরে তাে আদুরির মাথাথেকে ছাদ উড়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে ঘুমােলাে বুদ্ধিরাম। আজকাল নির্বোধের মতােই সে ঘুমােতে পারে। মাথাটা আস্তে আস্তে বােকা হয়ে যাচ্ছে তাে। বােধবুদ্ধি কমে যাচ্ছে। আজকাল তাই। গাঢ় ঘুম হয়। মাঝরাতে আচমকা চেঁচামেচিতে ঘুমটা ভাঙল। ভাঙতেই সােজা হয়ে বসল বুদ্ধিরাম। চেঁচামেচিটা অনেক দূর থেকে আসছে। আদুরির বাপের কি তবে হয়ে গেল? উঠবে কি উঠবে না ভাবছিল বুদ্ধিরাম। ও বাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্ক কীই বা আর ?

না গেলেও হয়। রাতে একটু শীত পড়েছে। পায়ের কাছে ভাঁজ করা কাথা সেটা গায়ে টেনে নিতেই ভারী একটা আরাম হল। বুদ্ধিরাম চোখ বুজল।ঘুমিয়েই পড়ছিল প্রায় এমন সময় দরজায় ধাক্কা দিয়ে মেজদা বলল, বুদ্ধি, ওঠ। নিবারণ জ্যাঠার হয়ে গেল। একবার যেতে হয়। ও বাড়ি থেকে ডাকতে এসেছে। বুদ্ধিরাম উঠল। যারা বেশি রাতে মরে তাদের আক্কেল বিবেচনার বড় অভাব বলল, যাচ্ছি।

গামছাখানা কাধে ফেলে বেরিয়ে পড়ল বুদ্ধিরাম। গাঁ শুদ্ধু জেগে গেছে। আজকাল গায়ে লােকও বেড়েছে খুব। রাস্তায় নামলেই বেশ লােকজন দেখা যায়। সেই মাঝরাতেও ঘুম ভেঙে অন্তত ত্রিশ-চল্লিশ জন লোক নেমে পড়েছে রাস্তায়, আদুরিদের বাড়ি যাবে বলে। একটা হাই তুললল বুদ্ধিরাম। শরীরটা এখনাে ঘুমজলে অর্ধেক ডুবে আছে। শরীরের যেটুকু জেগে আছে সেটাকেও চালানাে যাচ্ছে না।বাইরের উঠোনেই নিবারণ জ্যাঠাকে তুলসীতলায় শােয়ানাে হয়েছে। চেঁচিয়ে এ ওরগলাকে ছাপিয়ে কান্নার কম্পিটিশন চলেছে। কোনাে মানে হয় না। জন্মালেই তাে মানুষের মধ্যে মৃত্যুর বীজ পােতা হয়ে গেল। এভাবেই যেতে হবে। সবাই যায়। গােটা দশেক লণ্ঠন আর দু দুটো হ্যাজাক বাতির আলােতেও এই ভীড়ের মধ্যে আদুরিকে দেখতে পেল না বুদ্ধি। আদুরি খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। চেঁচিয়ে কাদবে না,জানে বুদ্ধিরাম। আর সে আসায় হয়তাে ঘরে গিয়ে সেঁধিয়েছে। মুখ দেখতেও বুঝিঘেন্না হয় আজকাল।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ ভালোবাসায় বলিদান

মাস চারেক আগে প্লুরিসি থেকে উঠেছে বুদ্ধিরাম। বুক থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে জলটেনে বের করতে হয়েছিল গামলা গামলা। ঠাণ্ডা লাগানাে বারণ। কিন্তু সে কথাবুদ্ধিরাম ছাড়া আর কে-ই বা মনে রেখেছে। শ্মশানে গেলে স্নান করে আসতে হবে। শেষ রাতের শীতে হিম বাতাস লাগবে। শরীরে। ডাক্তার ঠাণ্ডা লাগাতে বারণ করেছিল। বুদ্ধিরাম একটু হাসল। সে রেল রাস্তায় গলা দিতে গিয়েছিল। মরণকে তার ভয় টয় নেই। একভাবে না একভাবে তাে যেতেই হবে। কান্না কাটির মধ্যেই কিছু লােক বাঁশটাশ কাটতে লেগেছে। দড়ি-দড়া এসে গেছে।বুদ্ধিরাম একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিছুই দেখার নেই অবশ্য। মােড়লদের মধ্যে শলা-পরামর্শ হচ্ছে। সেই দলে বুদ্ধির বাপ জ্যাঠাও আছে। অন্যধারে গায়ের অল্পবয়সী ছেলেরা কোমরে গামছা বেঁধে তৈরি। আচমকাই একেবারে অপ্রত্যাশিত, আদুরিকে দেখতে পেল বুদ্ধিরাম। উত্তরে ঘরের দাওয়ায় তিন চারজন মহিলা দাঁড়িয়ে ছিল, সেই দলে বুদ্ধির জ্যাঠাইমাও। আদুরি হঠাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সােজা বুদ্ধির দিকে তাকাল। গত দশ বছরে বােধহয় প্রথম। বুদ্ধি একটু হতবুদ্ধি হয়ে গেল। না, ভুল দেখছে না। হ্যাজাকের আলােয় স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। বাপের মড়া উঠোনে শােওয়ানাে। তবু আদুরি সােজা তার দিকেই চেয়েআছে। একেবারে নিষ্পলক। আজ বুদ্ধিরামই চোখ সরিয়ে নিল। তারপর আড়ে আড়ে চাইতে লাগল। মেয়েটার হল কী? আদুরি তার জ্যাঠাইমার কানে কানে কী যেন বলল। তারপর একটু সরে দাঁড়াল। আঁচলে মুখটা চাপা দিয়ে নরম ভঙ্গিতে খুঁটিতে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। তাতে যেন ভারীফুটে উঠল, আদুরি। কী যে দেখাচ্ছে। জ্যাঠাইমা হাতছানি দিয়ে তাকে ডাকছিল। বুদ্ধিরাম অগত্যা এগিয়ে গিয়ে বলল, কী গাে জ্যাঠাইমা? মড়া ছুঁয়েছিস নাকি? না। তবে এবার তাে ছুঁতে হবেই। কাজ নেই বাবা। বাড়ি যা। গায়ে গঙ্গাজল আর তুলসীপাতা ছিটিয়ে গিয়ে শুয়েপড়। তােকে শ্মশানে যেতে হবে না। কেন ? কেন আবার। ক’দিন আগে কী অসুখটা থেকেই না উঠলি। ঠাণ্ডা লাগলে আরবাঁচবি নাকি? আমার কিছু হবে না জ্যাঠাইমা, ভেবাে না। কেন, তােরই বা যেতে হবে কেন? শ্মশানে যাওয়ার কি লােকের অভাব? কতলােক জুটে গেছে। আদুরি মনে করিয়ে দিল, তাই। যা বাবা; ঘরে যা। আর একবার শুনতে ইচ্ছে করছিল। বলল, কে মনে করিয়ে দিল বললে? আদুরি অদূরে দাঁড়িয়ে সব শুনতে পাচ্ছে। নড়ল না। জ্যাঠাইমাও আর তাকে আমল না দিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা কইতে লাগল। বুদ্ধিরাম ধীর পায়ে ছেলে ছােকরাদের দঙ্গলটার কাছে এসে দাঁড়াল। বুদ্ধিদা, যাবে তাে! যাবাে না মানে?

তা গেল বুদ্ধিরাম। মড়া কাঁধে নেচে নেচে গেল। বহুকাল পরে তার এক ধরনের আনন্দ হচ্ছিল আজ। না, প্রতিশােধ নেওয়ার আনন্দ নয়। প্রতিশােধের মধ্যে কোনাে আনন্দ নেই। আজ তার আনন্দ হচ্ছিল একটা অন্য কারণে। ঠিক কেন তা সে বলতে পারবে না। মড়া পুড়ল। বুদ্ধিরাম কষে স্নান করল নদীর পাথুরে ঠাণ্ডা জলে। দুনিয়ার একজন ও অন্তত তার অসুখটার কথা মনে রেখেছে, এখন আর মরতে বাধা কী! ভেজা গায়ে উঠে এল বুদ্ধিরাম তখন শেষ রাতের হিম বাতাসে সে থরথর করে কাপছিল। সবাই কাপছে। কিন্তু তার কাপুনিটা আলাদা। লােকে বুঝতে পারল না। শুধু বুদ্ধিরামের নিজের ভেতরে যে নানা ভাঙচুর হচ্ছিল তা নিজেই টের পেল সে।হোঁৎকা সতীশ কাছেই দাঁড়িয়ে গামছা নিংড়ােচ্ছিল। হঠাৎ কী খেয়াল হতে বুদ্ধিরামের দিকে ফিরে বলল, হ্যারে বুদ্ধি, তুই যে বড় স্নান করলি? করব না তাে কী? সতীশ মুখে একটা চুক চুক শব্দ করে বলল, তাের না কী একটা অসুখ হয়েছিলক’দিন আগে। কে বলল তােকে? সতীশ গামছাটা ফটাস করে ঝেড়ে নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলল, বেরােবার মুখেআদুরি এসে ধরেছিল আমায়। বলল, রাঙাদা, বুদ্ধিরামের কিন্তু শরীর ভালাে নয়।হিমজলে স্নান করলে মরবে। ওকে দেখাে। বুদ্ধিরাম কোনাে কথা বলল না। গলার কাছে একটা দলা আটকে আছে। চোখে জলআসছিল। সতীশ গা মুছতে মুছতে বলল, তাের আক্কেল নেই? কোন বুদ্ধিতে এই সকালে স্নান করলি? দুর শালা! আজই তাে স্নানের দিন। আজ স্নান করব না তাে কবে করব?

     (সমাপ্ত)

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

2 thoughts on “Romantic Story Of Love | আদুরিণীর প্রেম কাহিনী”

  1. আমাদের গল্প টি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, যদি গল্পটি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই সকলের সঙ্গে শেয়ার করবেন।

    Reply

Leave a Comment