WhatsApp Channel
Follow Now
Telegram Group
Follow Now
Last updated on July 4th, 2023 at 12:49 am
আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে একটি Bengali Short Story অর্থাৎ একটি ভালোবাসার শেয়ার করছি, গল্পটির নাম “বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু” গল্পের প্রধান চরিত্রে জান্নাত, আশাকরি আপনারা সকলে গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং গল্পটি যদি শুনতে চান তাহলে পরে নীচে দেওয়া অডিও ফাইলে ক্লিক করে শুনতে পারেন। আরও Bangla Golpo এবং Bengali Funny Jokes পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।
আজকের গল্প – বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু
সূর্যটা নেমে গেছে। কিন্তু তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। এখনো সূর্যের শেষ বিন্দুগুলির বর্ণচ্ছটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে আলো বিলিয়ে দিচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যেটা আরো বর্ণময় হয়ে ধরা দিয়েছে।
জানালার কার্নিশে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জান্নাত। সূর্যের সেই লাল আভায় ওর মুখটা অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ধরা দিয়েছে।
– এখন বের হবে? (জান্নাত)
– একটু ভেবে বললাম, চলো !
– আমি কি পড়বো ?
– আমি মুচকি হেসে বললাম, তোমার ইচ্ছা।
– একটু আহ্লাদী কন্ঠে বললো, না তুমি বলো।
– শাড়ি পড়ো।
অনেকক্ষণ পর শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বের হলো। লম্বা চুল, ঠিক যেনো স্বর্ণকেশী, চোখে কাজল …… পৃথিবীর সেরা সুন্দরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– এই চলো।
– ও কাছে আসতেই কানে চুলগুলো গুঁজে দিলাম।
আমি রূপকথার রাপান্জেল এর নাম শুনেছি যাকে ছোটোবেলায় চুরি করে এনেছিলো এক ডাইনি। আর উদ্ধার করেছিলো প্রিন্স চার্মিং। তবে আমার রাপান্জেল কে কেউ নিতে পারবে না আমি থাকতে।
আরও পড়ুনঃ Google Golpo – গোপাল ভাঁড়
ওর হাত ধরে চলার ইচ্ছেটা গোপন রেখেই হাঁটছি। পাশাপাশি থাকায় হয়তো গোপন ইচ্ছেটা ট্রান্সফার হয়ে ওর মনে পৌঁছে গেছে। আমার হাতটা ও ধরতেই হালকা শিহরণ বয়ে গেলো। আসলে ক্লোজ ফ্রেন্ড থাকাকালীন এতো দুষ্টুমী করেছি এখন তাই হাত ধরতে ইতস্তত হচ্ছে।
সাতদিন হয়েছে আমাদের বিয়ের। তবে পুরোটা কৃতিত্ব জান্নাত এবং আমার ফ্যামিলীর। জান্নাতের বিয়ের কথা শুনে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম কারণ মনে মনে ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। অবশ্য আমার এমন উদাসীনতা আর ওর বিয়ের ঠিক করা পাত্রপক্ষের গাফিলতীর জন্য একটু সহজ হয়েছে কাজটা। কখন যে তারা (আমার ফ্যামিলী) সব ঠিক করে ফেলেছে সেটা বিয়ের দিন ছাড়া বুঝে উঠতে পারিনী।
জান্নাত ওর আঙুলগুলো দিয়ে আমার হাতে খেলছে। ল্যাম্পপোস্টের বাতির আলোতে ওর মুখটার দিকে চেয়ে থাকার ইচ্ছা জাগছে। কিন্তু ওই যে ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলো….
হাঁটতে হাঁটতে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলাম।
রেস্টুরেন্টে ওর সামনাসামনি বসে খেতে বসলাম। ওর খাওয়ার দিকে চেয়ে আছি। ওর চোখে চোখ পড়লে আমি চোখ নামিয়ে নিচ্ছি আর ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠছে। ওর ঠোঁটের কোণে খাবারের ছোট্ট অংশ লেগে আছে। আমি কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর আঙুল দিয়ে সেটা মুছে দিলাম। ওর চোখের ভাষাটা এমন …. লজ্জা পাচ্ছো কেন নিজের বউকে ছুঁতে ?
খাবার শেষে আবার হাত ধরে হাঁটা শুরু। অনেকক্ষণ হাত ধরে থাকার জন্য বুঝি একটু সাহস হলো ওর। মাঝে মাঝে ওর আঙুল দিয়ে আমার হাতের তালুতে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আমি ওর দিকে না তাকিয়ে হাসছি। জান্নাত সেটা লক্ষ্য করছে।
– হাসছো কেনো ?
– না এমনি।
– মুচকি হাসা দুষ্টুদের লক্ষণ।
– আচ্ছা এখন চলো বাসায় যাই।
– না. . . . রিক্সা তে ঘুরব।
– জান্নাতের এখনকার আবদারগুলো কেনো জানি পূরণ করতে খুব ইচ্ছা জাগে।
আগে যে করিনি তা নয়, তবে বন্ধুত্বের সময়গুলো আর বিয়ের পরের সময়গুলো সত্যিই আলাদা। বন্ধুত্বের সময় রাগ দেখালেও যেমন আবদারগুলো পূরণ করি, বিয়ের পরে মনে হয় আরো বেশী করে আমাকে আবদারগুলো করুক।
রিক্সাতে পাশাপাশি গা ঘেষে বসেছি। হালকা বাতাসে ওর অশান্ত চুলগুলো আমার মুখের উপর চলে আসছে।
ইচ্ছে করেই ও সরাচ্ছে না, যেনো আমিই ওর চুলগুলো সরিয়ে দেই।
কিন্তু ওর চুল থেকে আসা ঘ্রাণটায় আমি ডুবে আছি।
রাস্তা খারাপ থাকায় রিক্সাটা হোঁচট খেল। ভালোই হয়েছে। জান্নাত আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছে। আমি ওর হাতের বাঁধনটা সরিয়ে আমিই ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম।
আরও পড়ুনঃ Voyanok Bhuter Golpo
জান্নাতের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক খেলা করছে।
– আচ্ছা তুমি অপরিচিতের মতো আচরণ করছো কেনো ? আমিতো তোমার বিয়ে করা বউ তাইনা।
– ওর কথা শুনে মনে হলো আমার আচরণগুলোতে ওর মনক্ষুণ্ণ হয়েছে।
আমি ছোট্ট করে বললাম, স্যরি।
– এখানে স্যরির কি হলো ? যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা হাত ধরবা।
আমি ওর ঠোঁটের কোণে আবারো সেই হাসির ঝিলিক দেখতে পেলাম।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখি আমার হাতের উপর ওর মাথাটা চলে এসেছে। আর ওর হাত আমার বুকের উপর।
আমি ওর হাতটা ধরে, হাতের তালুতে চুমু খেলাম। ওর মুখের পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওর হাসিখুশী মুখটার দিকে চেয়ে আছি। ওর কপালে চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
গত দুইদিন আমি অফিস থেকে ফিরলেই ডাইনিং টেবিলে আমার পছন্দের খাবারগুলো দেখে খুব আপ্লুত হতাম।
আজ সেটার অস্তিত্ব না দেখে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। জান্নাত ঠিক আছে তো ?
পাশের রুমে গিয়ে দেখলাম ব্যাগে কাপড় তুলছে।
– কি ব্যপার, কই যাওয়া হচ্ছে ?
– ( চুপ )
– ওর চুপ থাকা দেখে মনে হলো কোনো ভুল করে ফেলেছি।
– কি হলো, কথা বলো।
– আমার সাথে আবার কি কথা আছে তোমার ? যাও ওই তিথির সাথেই কথা বলো।
– বুঝলাম এইবার ভুলটা কোথায়…
তিথি আমার জুনিয়র ছিলো। ভার্সিটি থাকাকালীন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতায় প্রথম দেখা হয়েছিলো। তারপর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় একসাথে প্রেজেন্টেশনগুলো জমা দিতে থাকি।
আর আজকেও কথা বলার সময় কোনো না কোনো ভাবে হয়তো এই খবরটা ও ভুলভাবে নিয়েছে তাই এতো রাগ।
আরও পড়ুনঃ Bengali Ghost Story For Child
– আচ্ছা স্যরি, আর ও তো আমার জুনিয়র। আমার সহকর্মী। আর তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলে কি আমার ভালো লাগবে নাকি !!
– হয়েছে, এতো ঢং দেখাতে হবে না। আমি বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি।
– একটু সাহস যেনো বেড়ে গেলো।
বাপের বাড়ি ? হুমম…. কোথাও যাবে না তুমি।
– তুমি বলার কে ?
– আমি তোমার স্বামী। আমি না বলেছি মানে না।
আমি ওকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলাম।
আমি তোমাকে ছাড়া আর একমুহুর্ত অন্য কিছু কল্পনা করতে পারি না।
– এতোদিন পর তাহলে জড়িয়ে ধরার সাহস হয়েছে !! ডোজটা কাজে দিয়েছে।
– আমি মুখ তুলে বললাম, মানে ?
– আমি আর তিথি মিলেই … এটুকু বলেই ও হাসলো। এতদিন পর তোমার সাহস হলো।
– আর আমি ওর দুষ্টুমীভরা আচরণে আপ্লুত হয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলাম। ওর কাজল দেয়া চোখ দুটোতে ভালোবাসার প্রচন্ড গভীরতা খুঁজে পাচ্ছি।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হালকা ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছি দুজনে। ওর তুলতুলে নরম গাল আমার গালের সাথে লেগে যাওয়াতে দুষ্টুমীর ইচ্ছা জাগছে। দুজনের কাউকেই ঠান্ডা লাগছে না, লাগার কথাও নয়। দুজনেই যে দুজনকে শরীরের সব উষ্ণতা দিয়ে জড়িয়ে রেখেছি।
Bengali Short Story অর্থাৎ ছোট ভালোবাসার গল্পটি পরে আপনাদের কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন, যদি গল্পটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।