সরস্বতী পূজা পদ্ধতি pdf download: সরস্বতী পূজা হিন্দু বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়।
তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন খুব সকালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়।
সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিক কালে প্রচলিত হয়েছে। তবে প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার পুথি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল।
শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যেমন, অভ্রআবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিস। বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়।
সরস্বতী পূজা পদ্ধতি pdf download
সরস্বতী পূজা পদ্ধতি pdf ফাইল টি ডাউনলোড করার জন্য নিচের দেওয়া ডাউনলোড বক্সে ক্লিক করুন।
পূজার উপকরণ:
সিন্দুর, পুরোহিত বরণ ১ তিল, হরিতকী, পঞ্চগুড়ি, পঞ্চগব্য,
পঞ্চশস্য, পঞ্চরত্ন, পঞ্চপল্লব ১, ঘট, বরণডালা, সশীষ ডাব ১, একসরা আতপ চাউল, পুষ্পাদি, আসনাঙ্গুরীয় ২, মধুপর্কের বাটি ২, নৈবেদ্য ২, কুচা নৈবেদ্য ১, সরস্বতী শাড়ী ১, লক্ষ্মীর ১টি শাড়ী, চন্দ্রমালা ১, বিল্বপত্র মালা ১, থালা ঘটি শঙ্খ, লৌহ ১, রচনা ১, আমের মুকুল, যবের শীর্ষ, ফুল, আবির, অভ্র, মস্যাধার লেখনী, ভোগের দ্রব্যাদি, পান পানের মশলা, বালি, কাষ্ঠ, খোড়কে, গব্যঘৃত, হোমের বিল্বপত্র ২৮টি, কর্পূর, পর্ণপাত্র দক্ষিণা।
নিষেধ – পঞ্চমীর পূজার পূর্ব অবধি কুল ভক্ষণ নিষিদ্ধ। পূজার পরে খাইতে পারে। পূজার আগে যে কোন দিন খাইলে অপরাধ হয়। তাহার সে পূজা বা পুষ্পাঞ্জলির কোন ফল হয় না।
সরস্বতী পূজা পদ্ধতি
প্রথমে পুজোর জায়গাটি ভালো করে পরিষ্কার করে পুজোর স্থানে ভালো করে হলুদ, সিঁদুর এবং চাল দিয়ে আলপনা দিতে হবে। এরপর দেবীর মূর্তিকে ফুলের মালা পরিয়ে সুসজ্জিত করে তুলতে হবে। বই, খাতা, এবং হারমোনিয়াম সহ বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র ঠাকুরের মূর্তির পাশে রাখতে হবে। কালির দোয়াত দুধ দ্বারা পূর্ণ করে তাতে খাগের কলমগুলি রাখতে হবে। দেবী মূর্তির পাশে একটি গণেশ ঠাকুরের মূর্তি রাখতে হবে।
প্রথমে ফুল ও বেলপাতা নিয়ে গণেশের চরণে অর্পণ করে পূজা শুরু করতে হবে। তারপর একই ভাবে ফুল ও বেলপাতার সাহায্যে বাগদেবীর চরণে অর্পণ করে পুজো আরম্ভ করতে হবে। পূজার সময় মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। এরপর ধুপ ও দীপ জেলে ফল, মিষ্টি ও নৈবেদ্য অর্পণ করতে হবে। পুজো শেষে পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে। পুষ্পাঞ্জলির পর জল এবং খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
পুজোয় ব্যবহৃত বেলপাতায় খাগের কলমগুলি নিয়ে দুধে চুবিয়ে তিনবার ‘ওম সরস্ব্ত্যই নমঃ’ লিখতে হবে। তারপর পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে। এর পর ঠাকুরের নৈবেদ্যর খই, দই, চিড়ে এবং মিষ্টি বা চিনি দ্বারা গোল মন্ড তৈরি করে এই প্রসাদ সবাইকে দিতে হবে। এই মিশ্রিত প্রসাদকে দধিকর্মা বলা হয়। এরপর সন্ধে বেলায় দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে মূর্তিটিকে বিসর্জন দেওয়া হয়।
পুজোর দিন যা করবেন
১) পুজোর দিন খুব সকালে উঠতে হবে এবং অবশ্যই স্নান করতে হবে।
২) স্নান করার আগে সারা শরীরে নিম ও কাঁচা হলুদ বাটা মাখবেন। এতে দেহের শুদ্ধিকরণ ঘটে। পাশাপাশি শরীরের ইনফেকশন থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
৩) স্নানের সময় জলে নিমপাতা ও তুলসী পাতা দেবেন। এতে জলের শুদ্ধিকরণ হয়।
৪) পুজোর দিন পরিস্কার জামা কাপড় পরে অঞ্জলি দেবেন। কোনও প্রকার অপরিষ্কার কাপড় পরবেন না।
৫) পুজোর দিন সাদা বা বাসন্তী রঙের পোশাক পরিধান করবেন।
৬) অঞ্জলি না দেওয়া পর্যন্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৭) পুজোর দিন বাড়িতে এবং বাইরে নিরামিষ খাবার খাবেন।
৮) পুজোর সময় অবশ্যই পড়ার বই বা সঙ্গীতের কোনও জিনিস থাকলে তা দেবীর সামনে নিয়ে গিয়ে রাখবেন।
সরস্বতী পূজার মন্ত্র
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র (৩ বার পাঠসহ)
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
প্রনাম মন্ত্র
নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
সরস্বতীর স্তব
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারবভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।
সরস্বতীর প্রনাম
সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
অঞ্জলি
ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ ।
বেদ –বেদাঙ্গ বেদান্তবিদ্যাস্থানেভ্য এব চ ।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
সরস্বতীর বন্দনা
যা কুন্দেনু তুষার হার ধবলা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা
যা বীণা বরদণ্ডমণ্ডিত করা যা শ্বেত পদ্মাসনা।
যা ব্রহ্মাচ্যুতশংকর প্রভৃতির্দেবৈঃ সদাবন্দিতা
সা মাং পাতুসরস্বতী ভগবতী নিঃশেষ জাড্যাপহাম্
শুক্লাং ব্রহ্ম বিচার সার পরমাদ্যাং জগদ্ব্যাপিনীম্
বীণা পুষ্পক ধারিণীমভয়দাম্ জাড্যান্ধকারাপহাম।
হস্তে স্ফটিক মালিকাম্ বিদধতীম্ পদ্মাসনে সংস্থিতাম্
বন্দে ত্বাং পরমেশ্বরীম্ ভগবতীম্ বুদ্ধিপ্রদাম্ সারদাম্
সরস্বতীর ধ্যান
ওঁ সরস্বতী ময়া দৃষ্টবা, বীণা পুস্তক ধারণীম্।
হংস বাহিনী সমাযুক্তা মা বিদ্যা দান করেতু মে ওঁ।।