Romantic Bengali Love Stories 2023 | রোমান্টিক প্রেমের গল্প

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 4th, 2023 at 12:50 am

আজকের Bengali love story টির নাম -“লজ্জাহর” গল্পের প্রধান চরিত্রে রমাপতি ও বেবি, বিষয় – রোমান্টিক ভালোবাসা, Premer golpo এবং Bangla sad love story অথবা Bengali jokes আরও পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।

Bengali love stories


Love Stories in Bengali – রোমান্টিক প্রেমের গল্প

আজকের গল্প – লজ্জাহর


রামায়ণের যুগে ধরণী একবার দ্বিধা হয়েছিল। সে রামও নেই, সে-অযােধ্যাও নেই। কিন্তু কলিযুগে যদি দ্বিধা হত ধরণী, তাে আর কারও সুবিধে হােক আর না হােক ভারি সুবিধে হত রমাপতির। সত্যি, অমন অহেতুক লজ্জাও বুঝি কোনও পুরুষ মানুষের হয় না। মােড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে সবাই গল্প করছি। হঠাৎ চীৎকার করে উঠল ননীলাল। বললে ঐ আসছে রে কিন্তু ওই পর্যন্ত। আমরা সবাই চেয়ে দেখলাম রমাপতি আমাদের দেখেই আবার নিজের বাড়ির মধ্যে গিয়ে ঢুকল। সবাই বুঝলাম রমাপতির যত জরুরী কাজই থাক, এখনকার মত এ-রাস্তা মাড়ান ওর বন্ধ। বাড়িতে ফিরে গিয়ে হয়ত চুপ করে বসে থাকবে খানিকক্ষণ। তারপর হয়ত চাকরকে পাঠাবে দেখতে। চাকর যদি ফিরে গিয়ে বলে যে, রাস্তা পরিষ্কার, তখন আবার বেরুতে পারবে। বললাম চল আমরা সরে যাই, ওর অসুবিধে করে লাভ কি? ননীলাল বললে কেন সরতে যাব? এ-রাস্তা কি ওর? লেখাপড়া শিখে এমন মেয়েছেলের বেহদ্দ আমরা কি ওকে খেয়ে ফেলব? 




এমনিই রমাপতি! রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে পাছে কেউ জিজ্ঞেস করে বসে কেমন আছ? তখন যে কথা বলতে হবে। মুখ তুলতে হবে। চোখে চোখ রাখতে হবে। সম-বয়সী বউদিরা হাসে। বলে ছােট ঠাকুরপাে বিয়ে হলে কী করবে? মেজ বউদি বলে আমাদের সামনেই মুখ তুলে কথা বলতে পার না, তাে বউ-এর সঙ্গে কি করে রাত কাটাবে ভাই? বাড়িতে অনেকগুলাে বউদি। কেউ কেউ কমবয়সী আবার। তারা নিজের নিজের স্বামীর কথা কল্পনা করে নেয়। যত কল্পনা করে তত হাসে। অন্য সব ভাইরা সহজ স্বাভাবিক মানুষ। ব্যতিক্রম শুধু রমাপতি। শুনতে পাই বাড়িতেও রমাপতি নিজের নির্দিষ্ট ঘরটার মধ্যে আবদ্ধ থাকে। ঘরের মধ্যে বসে কী করে কারও জানবার কথা নয়। খাবার ডাক পড়লে একবার খেয়ে আসে। তরকারিতে নুন না হলেও বলবে না মুখে। জলের গ্লাস দিতে ভুল হলেও চেয়ে নেবে না। পৃথিবীকে এড়িয়ে চলতে পারলেই যেন ভাল।

এক-একদিন হঠাৎ বাড়ি আসার পথে দুর থেকে দেখতে পাই হয়ত রমাপতি হেঁটে আসছে। সােজা ট্রামরাস্তার দিকেই আসছে। তারপর আমাকে দেখতে পেয়েই পাশের গলির ভেতর ঢুকে পড়ল। পাঁচ মিনিটের রাস্তাটা ত্যাগ করে পনের মিনিটের গলিপথ দিয়েই উঠবে ট্রামরাস্তায়। কিন্তু তবু অতর্কিতেও তাে দেখা হওয়া সম্ভব! গলির বাঁকেই যদি দেখা হয়ে যায় কোনও চেনা লােকের সঙ্গে। হয়ত মুখােমুখি এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন পাড়ার প্রবীণতম লােক। জিজ্ঞেস করে বসলেন এই যে রমাপতি, তােমার বাবা বাড়ি আছেন নাকি? নির্দোষ নির্বিরােধ প্রশ্ন। আততায়ী নয় যে, ভয়ে আঁতকে উঠতে হবে। পাওনাদার নয় যে, মিথ্যে বলার প্রয়ােজন হবে। একটা ‘হ্যা বা না’ তাও বলতে রমাপতির মাথা নিচু হয়ে আসে, কান লাল হয়ে ওঠে, কপালে ঘাম ঝরে। সে এক মর্মান্তিক যন্ত্রণা যেন। তারপর সেখান থেকে এমনভাবে সরে পড়ে, যেন মহাবিপদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়ে গেছে। 

ছােটবেলায় রমাপতি একবার কেঁদে ফেলেছিল। তা ননীলালেরই দোষ সেটা। একা-একা রমাপতি চলেছিল কালীঘাট স্টেশনের দিকে। ওদিকটা এমনিতেই নিরিবিলি। বিকেলবেলা ট্রেন থাকে না। চারিদিকে যত দূর চাও কেবল ধু ধু ফাকা। বড় প্রিয় স্থান ছিল ওটা রমাপতির। আমরা জানতাম না তা। দল বেঁধে আমরাও ওদিকে গেছি। ধূমপানের হাতে খড়ির পক্ষে জায়গাটা আদর্শস্থানীয়। হঠাৎ নজরে পড়েছে সকলের আগে বিশ্বনাথের। বলে আরে, রমাপতি না? 

সকলে সত্যিই অবাক হয়ে দেখলাম দুরে রেললাইনের পাশের রাস্তা ধরে একা একা চলেছে রমাপতি আমাদের দিকে পেছন ফিরে। দেখতে পায়নি আমাদের। দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপল ননীলালের। বলল দাঁড়া, এক কাজ করি ওর কাছা খুলে দিয়ে আসি। যে-কথা সেই কাজ। তখন কম বয়েস সকলের। একটা নিষিদ্ধ কাজ করতে পারার উল্লাসে সবাই উন্মত্ত। ননীলালের উপস্থিতি টের পায়নি রমাপতি। ননীলালের রসিকতার সিদ্ধিতেই সবাই মাঠ কাঁপিয়ে হাে হাে করে হেসে উঠেছি। কিন্তু রমাপতির কাছে গিয়ে মুখখানার দিকে চেয়ে ভারী মায়া হল। 




রমাপতি হাউ হাউ করে কাঁদছে। সে-গল্প বিয়ের পর প্রমীলার কাছেও করেছি। প্রমীলা বলে আহা বেচারা, তােমরাই ওকে অমনি করে তুলেছ সেদিন প্রমীলা বললে ওই বুঝি তােমাদের রমাপতি এসএস–দেখ- দেখে যাও –  বললাম–ওকে তুমি চিনলে কী করে? প্রমীলা বললে- ও না হয়ে যায় না, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি-একবার মুখ। তুলে পর্যন্ত চাইলে না ওপর দিকে, ও-বয়সে এমন দেখা যায় না তাে! বারান্দার কাছে গিয়ে দেখি সত্যি ঠিকই চিনেছে। রমাপতি বটে। বললাম সরে এস, নইলে মূছা যাবে এখনি তা অন্যায়ও কিছু বলিনি আমি। ক্লাস সেভেন-এ গুড-কন্ডাক্ট-এর প্রাইজ পেয়েছিল রমাপতি। মােটা মােটা তিনখানা ইংরিজী ছবির বই। সেই প্রথম আমাদের স্কুলে ও-প্রাইজের প্রচলন হল। স্কুলের হলে লােকারণ্য। আমরা স্কুলের ছাত্ররা সেজেগুজে গিয়ে একেবারে সামনের বেঞ্চিতে বসেছি। আমরা খারাপ ছেলের দল সবাই। কেউ প্রাইজ পাব না। কমিশনার ম্যাকেয়ার সাহেব নিজের হাতে সবাইকে প্রাইজ দিচ্ছেন এক- একজন করে বুক ফুলিয়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আর প্রাইজ নিয়ে প্রণাম করে নিজের জায়গায় এসে বসছে। তারপর ম্যাকেয়ার সাহেব ডাকলেন মাস্টার রমাপটি সিনহা কেউ হাজির হল না। সাহেব আবার ডাকলেন মাস্টার রমাপটি সিনহা- সেক্রেটারী পরিতােষবাবু এদিক ওদিক চাইতে লাগলেন। হেডমাস্টার কৈলাসবাবুও একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন আমাদের দিকে, তারপর নিচু গলায় কী বললেন সাহেবকে গিয়ে। তারপর থেকে গুড-কন্ডাক্টের প্রাইজটা বরাবর রমাপতিই পেয়ে এসেছে। কিন্তু কখনও সভায় এসে উপস্থিত হয়নি? সে-সময়টা কালীঘাট স্টেশনের নিরিবিলি রেল-লাইনটার পাশের রাস্তা ধরে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে সে। এরপর আমরা একে একে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে ঢুকেছি। একা রমাপতি আই-এ পাস করেছে, বি-এ পাস করেছে। আমাদের সঙ্গে কচিৎ কদাচিৎ দেখা হয়। দেখা যদিও বা হয় তাে সে একতরফা! দেখা না হলেও কিন্তু রমাপতির খবর নানা সূত্রে পেয়ে থাকি।

চুল ছাঁটতে হাঁটতে কানাই নাপিত বলেছিল ছােটবাবু, দাড়িটা এবার কামাতে শুরু করুন আর ভাল দেখায় না! আমরা তখন সবাই ক্ষুর ধরেছি। কিন্তু রমাপতি তখনও একমুখ দাড়ি গোঁফ নিয়ে দিব্যি মুখ ঢেকে বেড়ায়। কানাই এ বাড়ির পুরনাে নাপিত। পৈতৃক নাপিতও বলা যায়। রমাপতিকে জন্মাতে দেখেছে। বললে নতুন ক্ষুরটা আপনাকে দিয়ে বউনি করি আজ কী বলেন, ছােটবাবু! রমাপতি মুখ নীচু করে খানিকটা ভেবে বলেছিল না, না, ছিঃ লােকে কী বলবে! কানাই নাপিত বলেছিল লােকের আর খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই তাে আপনার দাড়ি নিয়ে যেন মাথা ঘামাচ্ছে সব না, থাক রে, সামনে গরমের ছুটি আসছে, সেই সময় কলেজ বন্ধ থাকবে, তখন দিস বরং কামিয়ে হঠাৎ যেদিন প্রথম দাড়ি গোঁফ কামান চেহারা দেখলাম সেদিন ঠিক চিনতে পারিনি। ছাতার আড়ালে মুখ ঢেকে চলেছে রমাপতি। আমাকে দেখে হঠাৎ গতিবেগ বাড়িয়ে দিলে। নতুন জুতাে পরতে লজ্জা! নতুন জামা পরতে লজ্জা! ওর মনে হয় সবাই ওকে দেখছে যেন। 




উমাপতির বিয়েতে বউভাতের নিমন্ত্রণে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- সেজদা, রমাপতিকে দেখছি না যে সে কোথায়? সেজদা বলল সে তাে সকালবেলা খেয়ে-দেয়ে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে, সব লােকজন বিদেয় হলে রাত্তিরের দিকে বাড়ি ঢুকবে এ-পাড়ায় মেয়েরা পরস্পরের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার অভ্যাসটা রেখেছে। যেদিন দুপুরবেলা কেউ এল বাড়িতে, রমাপতি বাইরের সিড়ি দিয়ে টিপিটিপি পায়ে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। রাস্তায় বেরিয়ে কোনও রকমে ট্রামে বাসে উঠে পড়তে পারলেই আর ভয় নেই। 
সব অচেনা লােক। অচেনা লােকের কাছে বিশেষ লজ্জা নেই তার। বড় যদুপতির শ্বশুর এ-বাড়িতে কাজে-কর্মে ছাড়া বড় একটা আসেন না। মেজ উষাপতির শ্বশুরমশাই মারা গেছে বিয়ের আগে। সেজ ভাই উমাপতির শ্বশুর নতুন। রবিবার রবিবার মেয়ে এখানে থাকলে দেখতে আসেন। তিনি আবার একটু কথা বলেন বেশী। বাড়ির সকলকে ডাকা চাই।

 সকলের সঙ্গে কথা কওয়া চাই। সকলের খোঁজ-খবর নেওয়া চাই। মেয়েকে বলেন হ্যা রে, তাের ছােট দেওরকে তাে কখনও দেখতে পাই না এতদিন ধরে আসছি মেয়ে বলে ছােট ঠাকুরপাের কথা বলাে না বাবা, তুমি রবিবারে আসবে শুনে সকালবেলাই সেই যে বেরিয়ে গেছে বাইরে আর আসবে সেই দুপুরবেলা বারােটার সময়, তা-ও বাড়ির বাইরে থেকে যদি বুঝতে পারে তুমি চলে গেছ তবে ঢুকবে, নইলে এক ঘণ্টা পরে আবার আসবে। উমাপতির শ্বশুর হাসলেন। বলেন কেন রে, আমি কী করলাম তার! মেয়ে বলে তুমি তাে তুমি, বাড়ির লােকের সঙ্গেই কখনও কথা বলতে শুনিনি ছােট ঠাকুরপাে বাড়িতে থাকলেই টের পাওয়া যায় না ঘরে আছে কি নেই- উমাপতির শ্বশুর কী ভাবেন কে জানে! কিন্তু এ-বাড়ির লােকের কাছে এ-ব্যাপার গা-সওয়া। মা বলেন তােমরা কিছু ভেবাে না বউমা, রমা আমার ওই রকম আমার সঙ্গেই লজ্জায় কথা বলে না কথাটা অবিশ্বাস্য হলেও একেবারে মিথ্যে নয়।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ মণি 

স্বর্ণময়ীর সেবার ভীষণ অসুখ হয়েছিল। ছেলেরা রাতের পর রাত জেগে মায়ের সেবা করতে লাগল। বউদেরও বিশ্রাম নেই। ডাক্তারের পর ডাক্তার আসে। ইনজেকশন, ওষুধ, বরফ অনেক কিছু! একটু সেরে উঠে স্বর্ণময়ী চারদিকে চেয়ে দেখলেন। বললেন রমা কোথায় ? রমাপতি তখন ঘরে বসে বই পড়ছিল দরজা ভেজিয়ে দিয়ে। বড়দা একেবারে ঘরে ঢুকে বললেন মার এত বড় একটা অসুখ গেল আর তুমি একবার দেখতে গেলে না? দাদার কথায় রমাপতি অবশ্য গেল দেখতে মাকে। রােগীর ঘরে তখন বাড়ির লােক, আত্মীয়-স্বজনে পরিপূর্ণ। রমাপতি কিন্তু কিছুই করল না। কিছু কথা বেরুল না তার মুখ দিয়ে। চুপচাপ গিয়ে খানিকক্ষণ সকলের পেছনে দাঁড়াল সসঙ্কোচে। তারপর কেউ দেখে ফেলবার আগেই পালিয়ে এসেছে আবার নিজের ঘরে।

স্বর্ণময়ীর সে-কথা এখনও মনে আছে। বলেন তােমরা ভাবাে ওর বুঝি মায়া-দয়া কিছু নেই আছে বউমা, সেদিন নিজের চোখে দেখলাম যে দোতলার বারান্দায় মেজ বউমার ছেলে ঘুমােচ্ছিল, কেউ কোথাও নেই, রমু আমার দেখি ছেলের গাল টিপে দিচ্ছে মুখময় চুম্বন খাচ্ছে, সে যে কী আদর কী বলব তােমাদের, রমু যে আবার ছেলেপিলেদের অমন আদর করতে পারে আমি তাে দেখে অবাক তারপর হঠাৎ আমায় দেখে ফেলতেই আস্তে আস্তে নিজের ঘরে চলে গেল। প্রতিবেশীরা বেড়াতে এসে বলে তােমার ছােট ছেলের বিয়ে দেবে না দিদি? স্বর্ণময়ী বলেন রমুর বিয়ের কথা ভাবলেই হাসি পায়, ও-ও আবার সংসার করবে, ছেলেপিলে হবে। যার কাছা খুলে যায় দিনে দশবার, তরকারিতে নুন না হলে বলবে না মুখ ফুটে, এক গেলাস জল পর্যন্ত চেয়ে খাবে না, একবারের বদলে দুবার ভাত চেয়ে নেবে না তা এই হল রমাপতি! 




রমাপতি সিংহ। একে নিয়েই আমাদের গল্প। আমার এক আত্মীয় একদিন টেলিফোনে ডেকে পাঠালেন বাড়িতে। বললেন তােমাদের পাড়ায় রমাপতি সিংহ বলে কোনও ছেলেকে চেনাে? বললাম চিনি, কিন্তু কেন? তিনি বললেন ছেলেটি কেমন? আমার রেবার সঙ্গে মানবে? রেবাকে চিনতাম। আই-এতে দশ টাকার স্কলারশিপ পেয়েছিল। থার্ড ইয়ারে পড়ছে। বেশ স্মার্ট মেয়ে। বাবার কাছে মােটর চালানাে শিখে নিয়েছে। অটোগ্রাফের খাতায় জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে কোনও লােকের সই আর বাদ নেই। নিজে ক্যামেরায় ছবি তােলে। ভায়ােলিন বাজিয়ে মেডেল পেয়েছে কলেজের মিউজিক কমপিটিশনে। মােট কথা, যাকে বলে হাইলি অ্যাকমপ্লিশড়! আমি সেদিন সম্মতি দিলে বােধ হয় বিয়েটা হয়েই যেত। পাত্র হিসেবে রমাপতি খারাপই বা কি। নিজে শিক্ষিত। কলকাতায় নিজেদের তিনখানা বাড়ি। সংসারের ঝামেলা নেই কিছু। বােনদেরও সকলের বিয়ে হয়ে গেছে। চার ভাই-ই বেশ উপার্জনক্ষম! ভাইদের মধ্যে মিলও খুব। 

রেবার মা বলেছিলেন কিন্তু কেন যে তুমি আপত্তি করছ বাবা, বুঝতে পারছি না। আমি বলেছিলাম রেবাকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন মাসীমা, এসব শুনেও যদি মত দেয় তাে কিন্তু রেবাই নাকি শেষ পর্যন্ত মত দেয়নি। আজ ভাবছি সেদিন সম্মতি দিলেই হয়ত ভাল করতাম। শেষ পর্যন্ত রেবার বিয়ে হয়েছিল এক বিলেতফেরত অফিসারের সঙ্গে, তারপর সে ভদ্রলােক শেষকালে কিন্তু সে-কথা এ-গল্পে অবান্তর। এর পর ননীলাল এসে খবর দিয়েছিল ওরে, রমাপতির বিয়ে হচ্ছে যে- আমরা সবাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলাম সে কে? কোথায়? ননীলাল বললে খবর পেলাম এবার আর কলকাতায় সম্বন্ধ নয় জব্বলপুর- জব্বলপুরে কার মেয়ে, মেয়ে কী করে সব খবর ননীলালই বার করল। শেষে একদিন বলল ভাই চোখের ওপর নারী হত্যা দেখতে পারব না আমি ভাংচি দেব। সত্যি সত্যিই ননীলাল ঠিকানা যােগাড় করে বেনামী চিঠি দিলে একটা। আপনারা যাকে পছন্দ করেছেন তার সম্বন্ধে কলকাতায় এসে পাড়ার লােকের কাছে ভাল করে। সংবাদ নেবেন। নিজেদের মেয়েকে এমন করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেবেন না ইত্যাদি অনেক কটু কথা। 

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ মধুরেন 

বিয়ে ভেঙে গেল। শুধু সেইবারই প্রথম নয়। যতবারই ননীলাল বা আমরা কেউ সংবাদ পেয়েছি, চিঠি লিখে বিয়ে ভেঙে দিয়েছি। আমাদের সত্যিই মনে হয়েছে রমাপতির সঙ্গে বিয়ে হলে সে-মেয়েকে জীবনে বিড়ম্বনার আর অবধি থাকবে না। কিন্তু হঠাৎ একদিন বিনা-ঘােষণায় রমাপতির বিয়ে হয়ে গেল। 
কেউ কোনও সংবাদ পায়নি। মাত্র একদিন আগে আমার কাছে এল খবরটা। প্রমীলাও বহরমপুরের মেয়ে বললাম- বহরমপুরের কমল মজুমদারকে চেনাে নাকি? খুব বড় উকিল। তার মেয়ে প্রীতি মজুমদার? প্রমীলা চমকে উঠল। প্রীতি? আমরা তাকে ডাকতাম বেবি বলে। বহরমপুরের বেবি মজুমদারকে কে না চেনে একটা চোদ্দ বছরের ছেলে থেকে শুরু করে ষাট বছরের বুড়াে চিনবে তাকে, বেবি টেনিসে তিনবার চ্যাম্পিয়ান, ওকে চিনব না! কিন্তু তখন আর উপায় নেই। চিঠি লিখে জানালেও পাত্র পেলে না খুঁজে! শেষে এই আকাট ছেলেটার হাতে পড়বে! আর কোনও প্রীতি মজুমদার আছে নাকি বহরমপুরে।

প্রমীলা বললে-মজুমদার অবিশ্যি আরাে আছে ওখানে কিন্তু খবর নাও দিকিনি ওর নাম বেবি কিনা? তখন আর খবর নেবারই বা সময় কোথায়। প্রমীলা কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে গেল। বললে শেষকালে বেবির সঙ্গে বিয়ে হবে কিনা তােমাদের রমাপতির সে যে ভারী খুঁতখুঁতে মেয়ে-গোঁফওয়ালা ছেলেদের মােটে দেখতে পারত না, ওর প্রাইভেট টিউটার ছিল বদ্যিনাথবাবু, তাকেই ছাড়িয়ে দিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তাের মাস্টারকে ছাড়ালি কেন? ও বলেছিল বড় বড় বড় গোঁফ বদ্যিনাথবাবুর, ওই গোঁফ দেখলে আমার ভয় করে তা তুমিও তাকে দেখেছ তাে বললাম কোথায়? 
কেন, সেই যে বাসরঘরে! বাসরঘরে কত মেয়েই এসেছিল, সকলকে মনে থাকবার কথা নয় আজ। তবু মনে করতে চেষ্টা করলাম। প্রমীলা আবার মনে করিয়ে দিতে চেষ্টা করলে মনে পড়ছে না তােমার? সেই যে কালাে জমির ওপর জরির কাজ করা শিফন শাড়ি পরে এসেছিল, লংস্লিভের সাদা লিনেনের ব্লাউস পরা খুব কথা বলছিল ঠেস দিয়ে দিয়ে মনে নেই? 




তবুও মনে পড়ল না! প্রমীলা আবার বলতে লাগল বিয়ের পরদিন মা জিজ্ঞেস করেছিল কেমন জামাই দেখলে বেবি! বেবি বলেছিল ভাল। কিন্তু আমাকে বলেছিল তাের বর ভাল হয়েছে। মিলি, কিন্তু আর একটু লম্বা হলে ভাল হত। যে মেয়ে এত খুঁতখুঁতে তার সঙ্গে রমাপতির কিছুতেই বিয়ে হতে পারে না। প্রমীলাও সন্দেহ প্রকাশ করল। না, না সে মেয়ে হতেই পারে না অন্য কোনও প্রীতি মজুমদার হবে দেখাে কখন বিয়ে করতে গেল রমাপতি কেউ জানতে পারল না। ভােরের ট্রেন। রাত থাকতে উঠে একজন পুরােহিত আর দু-চারজন আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে দলবল বেরিয়ে গেছে। বউ যখন এল তখনও বেশ রাত হয়েছে। অনেকেই তখন খেয়ে শুয়ে পড়বার ব্যবস্থা করছে। শাঁখের আওয়াজ পেয়ে প্রমীলা উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল একবার। আমিও উঠে গেলাম।

বাড়ির লােকজনের ভিড়ের ভেতর ঘােমটা-টানা বউটিকে দেখতে পেলাম না ভাল করে। আর রমাপতিও যেন টোপরের আড়ালে নিজেকে গােপন করে ফেলতে চেষ্টা করছে। মনে হল লজ্জায় চোখ দুটো সে বুজে ফেলেছে। কোনও রকমে এত দূর এসেছে সে বর বেশে, কিন্তু পাড়ার চেনা লােকের ভিড়ের মধ্যে সে যেন মর্মান্তিক যন্ত্রণা অনুভব করছে।  আমাদের বাড়ি থেকে একা আমারই নিমন্ত্রণ ছিল। অনেক রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়ি ফিরতেই প্রমীলা ধরলে–কেমন বউ দেখলে আমাদের বেবি নাকি?
বললাম কী জানি, চিনতে পারলাম না কিন্তু যার বিয়ে তারই দেখা পেলাম না।
সে কী?
সে যে কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে অনেক চেষ্টা করলাম দেখতে, কিছুতেই দেখা পেলাম না।
পরদিন সেই কথাই আলােচনা হল।
ননীলালকে জিজ্ঞেস করলাম বউ দেখলি রমাপতির?
ননীলাল যেন কেমন গম্ভীর-গম্ভীর। বললে-বউটার কপালে অনেক দুঃখ আছে। ভাই-বেচারী ওর হাতে পড়ে মারা যাবে, দেখিস। জিজ্ঞেস করলাম রমাপতিকে দেখলি কাল?
কেউ দেখতে পায়নি। সমস্ত লােকজন আত্মীয়-স্বজনের দৃষ্টি থেকে সরে গিয়ে কোথায় যে লুকিয়ে রইল রমাপতি সে-ই এক সমস্যা। বিশ্বনাথ বলল সে-ও দেখেনি। 
কিন্তু কনক বলল আমি দেখেছি।
কোথায়
দেখলাম, মিষ্টির ভাঁড়ারে গেঞ্জী গায়ে ওর পিসীর কাছে তক্তাপােশের ওপর বসে রয়েছে জানলার ফাক দিয়ে দেখতে পেলাম, আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিল।
কানাই নাপিতকে চেপে ধরলাম। সে বরের সঙ্গে গিয়েছিল। সে তাে হেসে বাঁচে না। বলে-ছােটবাবুর কাণ্ড দেখে সবাই অবাক সেখানে!
সে কী রে?
আজ্ঞে, সবাই বলে বর বােবা নাকি? কনের বাড়ির মেয়েছেলেরা খুব নাকাল করেছেন, ছােটবাবুকে সারারাত, মাঝরাতে বাসরঘর থেকে বেরিয়ে এসে ছােটবাবু আমার কাছে হাজির। আমি ছাতের এক কোণে ঘুমােচ্ছিলাম, ছােটবাবু চৌপর রাত সেই ছাতে বসে কাটাবে আমার কাছে কিন্তু মেয়েছেলেরা শুনবেন কেন? তারা আমােদ-আহ্লাদ করতে এসেছেন কিন্তু পরদিন প্রমীলার কাছে যা শুনলাম তাতে আমার বাকরােধ হয়ে গেল। প্রমীলা ভােরবেলা উঠেই ওদের বাড়ি গিয়েছিল। আর ফিরে এল বেলা দশটার সময়। 
বললাম এত দেরি হল ?, দেখা হয়েছে? প্রমীলা বললে গেছি বউ দেখতে, আর না দেখে ফিরে আসব? গিয়ে বললাম মাসীমা তােমার বউ দেখতে এলাম কাল শরীর খারাপ ছিল, আসতে পারিনি মাসীমা বললে। ছেলে-বউ তাে এখনও ঘুমােচ্ছে তা ব’সাে মা একটু। তা দরজা খুলল বেলা ন’টার সময়। তােমার বন্ধু তাে আমাকে দেখেই পালিয়ে গেল কোথায়। বেবি কিন্তু ঠিক চিনতে পেরেছে। আমাকে দেখেই বললে মিলি, তুই? তারপর শােবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসাল আমায়। 
দেখলাম সমস্ত বিছানাটা একেবারে ওলােট-পালােট। নতুন খাট-বিছানা, নয়ন-সুখের চাদর, বালিশের ওয়াড়। পাশাপাশি দুটো বালিশ একেবারে সিঁদুরে মাখামাখি। বেবির মুখে-গালেও সিদুরের দাগ। 

বিছানায় শুকনাে ফুল ছড়ানাে। আমি হাসছিলাম দেখে বেবি জিজ্ঞেস করলে– হাসছিস যে! বললাম সারারাত ঘুমােসনি মনে হচ্ছে বেবি বলল-ঘুমােতে দিলে তাে! বলে মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল। আমিও স্তম্ভিত। বললাম বলল ওই কথা? তারপর শােনােই তাে- প্রমীলা আবার বলতে লাগল তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম তাের বর কেমন হল? তা শুনে কী উত্তর দিলো জানাে?
বললাম কী?
প্রমীলা বললে প্রথমে বেবি কিছু বলল না, মুখ টিপে হাসতে লাগল, তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে হাসতে হাসতে বলল বড় নির্লজ্জ ভাই।
     (সমাপ্ত)
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Comment