Bengali Story Books Pdf | অনুরাধার স্বপ্ন

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 4th, 2023 at 12:50 am

 এই Bengali Story টি অনুরাধা নামের একটি গরিব মেয়ের জীবন কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে। গল্পের প্রধান চরিত্রে অনুরাধা ও আশু, গল্পের বিষয় – অনুরাধার স্বপ্ন, আরও Bengali Motivational Story এবং Bengali Audio Story শোনার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন। এছাড়াও আমাদের ব্লগে পাবেন Bengali Story For Kids, ভালোবাসার গল্প এবং আপনি যদি আমাদের ব্লগ থেকে Bengali Story Books Pdf ডাউনলোড করতে চান তাহলে সেটিও করতে পারবেন। সর্বশেষে আমার পাঠাকগনদের কাছে একটি অনুরোধ গল্পটি পড়িয়া যদি আপনাদের ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।

Bengali Story Books Pdf

Story Bengali – অনুরাধার স্বপ্ন

অনুরাধা রান্নাঘরের কাজ শেষ করে এসে ঘড়ি দেখলাে দুটো বেজে সতের মিনিট। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সে বাঁচল, অনেক কষ্টে আজ একটু সকাল করে কাজ সেরে নিতে পেরেছে অন্যদিন এ সময়ে তার খাওয়াই চোকে না। মামার ঘরে উঁকি মেরে দেখলাে তিনি অগাধে ঘুমােচ্ছেন, তার পাশের চেয়ারে বসে মামীও ঘুমিয়ে পড়েছেন চারটের আগে কারুরই ঘুম ভাঙবার সম্ভাবনা নেই। এক জেগে আছেন আশুবাবু। কিন্তু তিনি নিরীহ লোক, পাঁচটা নাগাদ চা পেলেই খুশি, তার আগে যে কিছু চাইবেন না তিনি, তা সে জানত।
অনুরাধা ভিজে চুলগুলাে পিঠের উপর এলিয়ে বাংলার বারান্দায় এসে বসল। কাল অবধি আকাশ মেঘলা যাচ্ছিল, আজ তিন-চারদিন পরে আকাশ একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে, ঝম ঝম করছে রােদ চারধারে। প্রথম হেমন্তের মিষ্টি ঝিরঝিরে হাওয়ায় সে রােদ কড়া লাগে না, বরং গায়ে লাগলে যেন কেমন একটা আবেশের সঞ্চার হয়। বাংলাের পশ্চিম দিকটায় অবারিত খােলা, বহুদূর, বােধ হয় কয়েক মাইল অবধি চলে গেছে। উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানাে মাঠ, কোথাও বা সামান্য কিছু চাষ হয়েছে, কোথাও বা এমনি ভাঙা পড়ে আছে মধ্যে মধ্যে দু-একটা মহুয়া আর শাল গাছ এ যেন স্বপ্ন, স্বপ্নের দেশ! ঐ যে দূরে পাহাড়ের গায়ে মেঘের যে খেলা দেখেছে সে তা যেন চোখে দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন এ কদিনে তার মনে হয়েছে যে মেঘ চলে গেলে হয়ত পাহাড়গুলিকে আর ভালাে দেখাবে না, কিন্তু আজ এই দুপুরে তার আরও ভালাে লাগছে। কতদূরে কে জানে, ওখানে কি যাওয়া যায় না? উঃ, পাহাড়ে চড়বার কথা মনে হলে আনন্দে যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসে, সত্যিই যদি কোনােদিন ওখানে যাওয়া যায় তাহলে হয়ত খুশিতেই সে মরে যাবে।
অনুরাধা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পরেশনাথের পাহাড়টা দেখে নিলে বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেই প্রথম দিনই ওরা দেখতে পেয়েছিল, তারপর ক’দিন মেঘলা থাকায় মােটে দেখা যায়নি, আবার আজ সকাল থেকে দেখা দিয়েছে ছােট্ট মন্দির, আর তার নিচে কি একটা সাদা বাড়ি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ওখানে কি আর যাওয়া হবে কোনােদিন? মামী আজও বলেছিল বটে যে, তাের মা একটু সেরে উঠলে আশুকে নিয়ে বেড়িয়ে আসব একদিন। কিন্তু সে তারাই শুধু যাবেন হয়ত। হয়ত কেন, নিশ্চয়ই তাই অনুরাধা মনে মনে জোর দিয়ে কথাটা বলল। মামার ভার তার ওপর দিয়ে দুই ভাই-বােন বেড়িয়ে আসবেন।
সে একট নিশ্বাস ফেলে মুখ ফিরিয়ে নিল। না-ই হল তার পরেশনাথ পাহাড় দরকার নেই। এই মাঠটাতেই যদি সে একটু বেড়াতে পেত আপনমনে কিম্বা ওদের বাড়ির পেছনের ঐ নিবিড় শালবনটাতে! কাল যেন কে বলেছিল বনটাতে বাঘ আছে, থাকগে বাঘ তাকে যে বাঘে খাবে না এটা নিশ্চিত। বন’ সে ছােটবেলা থেকে শুনেই এসেছে একবার ঢুকে সে দেখতে চায় তার সত্যি ভয় করে কিনা কি রকম না জানি। তার ভেতরটা ! আর ঐ মাঠ, শুধু শুধু একা ঐ মাঠে সে যদি ঘুরে বেড়াতে পারত, এমনি আপনমনে!
সে আর বসে থাকতে পারল না, উঠে এসে বারান্দার ধার ঘেঁষে দাঁড়াল। এমন যে দেশ হয়, এতখানি ফাকা মাঠ যে পৃথিবীর কোনাে দেশে থাকা সম্ভব তা সে কল্পনাও করতে পারেনি কোনােদিন, এত নভেল পড়েও না। বাবার অফিস-লাইব্রেরি থেকে আনা উপন্যাসে সে অনেক দেশের বর্ণনাই পড়েছে বটে, কিন্তু তা নিয়ে কোনােদিন মাথা ঘামায়নি। মন তার থাকতে পাত্রপাত্রীদের সুখ-দুঃখের মধ্যে, কারণ জন্মে পর্যন্ত সে দেখেছে তাদের রামকান্ত মিস্ত্রী লেনের সেই সরু কানা গলিটা কখনও-কখনও কলকাতারই দু-একটা চওড়া রাস্তা দিয়ে গিয়ে হয়ত ঐ রকম একটা সরু গলির মধ্যে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ঢুকেছে, এ ছাড়া আর কিছু না। যা সে কখনও দেখেনি তার ধারণা ত নয়ই, কল্পনা করাও যে অসম্ভব।
আচ্ছা, সে যদি চুপি চুপি মাঠটা একটু ঘুরেই আসে? ঐ যে কারা ইটের পাঁজা পুড়িয়ে রেখেছে, তারই আড়ালে বড় মহুয়া গাছটা পর্যন্ত কে আর জানতে পারবে?

Bengali Short Story Pdf Free Download

1. অনুরাধার স্বপ্ন
Bengali Short Story Pdf Free Download
মামার ঘুম ভাঙলেও তিনি চারটের আগে বার্লি খাবেন না। সুতরাং তারও খোঁজ পড়বে এখন হয়ত আড়াইটে চারটে পর্যন্ত দেড়-ঘণ্টা সে অনেক সময় ! অনুরাধা চঞ্চল হয়ে উঠল। দুপুরের রােদে মহুয়া গাছের ছায়াগুলাে যেন কি এক আশ্চর্য মায়া বিস্তার করে। অনুরাধার মনে হল ঐ দূরের মহুয়া গাছটা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সে একবার মাঠটার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিল, মিষ্টি হাওয়ায় যেন সমস্ত মাঠটা জুড়ে খুশির ঢেউ উঠেছে, সেদিকে চাইল মন আপনি আনন্দে ভরে ওঠে। সে আর থাকতে পারল না, নিঃশব্দে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে বাগান পেরিয়ে এক সময় সত্যিই মাঠে গিয়ে প্রথমে একটু ভয় ভয় করছিল, চলছিলও আস্তে আস্তে, কিন্তু ইটের পাঁজার আড়ালে মিলিয়ে যেতেই তার সব সঙ্কোচ চলে গেল। হঠাৎ মনে হল একটু ছুটলে কি হয়। কিম্বা এমনি খানিকটা লাফালাফি করলে? মাঠের যে দিকেই যায়, কোথাও কেউ নেই, একটা গরু-বাছুর এমন কি ছােট ছেলেও দেখা যায় না। চাষ রয়েছে মধ্যে মধ্যে কিন্তু তা আগলাবার প্রয়ােজন নেই বলেই বােধ হয়, কেই আসেনি। এই সীমাহীন নিঃসঙ্গতা অনুরাধার সমস্ত দেহে একটা পুলক-চাঞ্চল্যের স্রোত বইয়ে দিলে যেন সে ঠিক না দৌড়লেও এমন জোরে চলতে লাগল যে তাকে আর যাই হােক বেড়ানাে বলা চলে না। কিন্তু উপায় কি, এমন অবস্থায় আস্তে চলার কথা অনুরাধা ভাবতেই পারে না। কোথাও বিশেষ করে সে যেতে চায় না, সে পথ হারিয়ে, দিক হারিয়ে এমনি করে একা এই বিস্তীর্ণ মাঠে ঘুরে বেড়াতে চায় শুধু। তার কুড়ি বছর বয়সটাও যেন পিছিয়ে একেবারে আট-দশ বছরে চলে গেছে, যখন চলা মানেই ছুটে চলা, যখন চুপ করে থাকার মত শান্তি আর নেই যখন পৃথিবীর তুচ্ছতম বস্তুও বিস্ময়ের চমক লাগায় ক্ষণে ক্ষণে- অনেকদূর, অনেকক্ষণ এইভাবে চলার পর সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। কলকাতায় তাদের বাড়ির তো সেই দেড়খানা ঘর আর সরু এক ফালি রক-উঠোন। হাঁটবার প্রয়ােজনই হয় না সেখানে, অভ্যাসও নেই।…তা ছাড়া, চলতে চলতে হঠাৎ তার নজরে পড়ল এই মাঠের মধ্যে কে জমি কিনে রেখে গেছে, ছােট্ট একটা পিপের ওপর ইংরাজিতে মালিকের নাম লেখা। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ, তার সঙ্গে লােকালয়, সবটা মনে পড়ে গিয়ে সে যেন তার এই অবাধ উদ্দাম গতির জন্য একটু লজ্জিতও হয়ে পড়ল। সে যন এতক্ষণ বহু লক্ষ বৎসর ডিঙিয়ে সভ্যতার সেই আদি ইতিহাসের মধ্যে গিয়ে পড়েছিল, মাত্র তিনটি ইংরাজি আদ্য-অক্ষরের আঘাতে আবার বিংশ শতাব্দীতে ফিরে এল। আস্তে চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই পা যেন ভারি হয়ে এল, বসা একটু চাই-ই কোথাও, নইলে আবার এতটা পথ ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, তাদের বাংলাে, লােকালয় বহু পিছনে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে, পথ গেছে হারিয়ে, কিন্তু তার জন্যে অনুরাধা চিন্তিত নয়, মােটামুটি দিকটা তার ঠিক আছে কিছুদূর গিয়ে একটা ঢিপির ওপর উঠলেই তাদের বাড়ি দেখতে পাবে আবার, তা সে জানে। এখন যেটা দরকার সেটা হচ্ছে কোথাও একটু ছায়াতে বসা। এই রােদে এতটা দৌড়ে তার গরমও হচ্ছিল ভীষণ, ঘামে ব্লাউজ ভিজে সপে হয়ে উঠেছে, কপাল, গলা ঘামে ভেসে যাচ্ছে। এদিকে-ওদিকে চেয়ে ওর নজরে পড়ল কতকগুলাে কল্কে গাছ এক জায়গায় ঝোপ হয়ে রয়েছে। আর তারই ঠিক পাশে একটা মহুয়া গাছ। সে দূর থেকে ছায়াটা দেখেই একটা আরামের নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর কোনােমতে অবসন্ন পা-দুটো টেনে নিয়ে গিয়ে গাছের গুঁড়িটায় ঠেস দিয়ে এলিয়ে পড়ল।
আরও পড়ুনঃ গল্পঃ রাইকমল
আঃ! কী মিষ্টি হাওয়া, অনুরাধার সমস্ত শরীর জুড়িয়ে গেল যেন। সে অনেকক্ষণ চুপ করে পড়ে রইল। চোখ বুজে থাকলেও, সামনের সেই নীলাভ পাহাড় আর ঝলমলে সবুজ মাঠ তার সমস্ত চৈতন্যকে আচ্ছন্ন করে ছিল বলে তা যেন সে চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল! সেইভাবে ঠাণ্ডা বাতাসে ঘাসের ওপর শুয়ে থাকতে থাকতে সে যেন ভুলেই গেল পঁয়ষট্টি টাকা মাইনের কেরাণীর কুড়ি বছরের আইবুড়াে মেয়ে সে-ওর হঠাৎ মনে হল ও যেন রূপকথার রাজকন্যা, এখনই ঐ সামনের তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে তার রাজকুমার আসছেন পক্ষীরাজ ঘােড়ায় চড়ে, উজ্জ্বল শ্যাম তার বর্ণ, গলায় বকুলের মালা, কাছে এসে বসে তার হলদে উত্তরীয়ে ওর মুখের ঘাম মুছিয়ে মুদিত চোখের পাতায় চুমাে খেয়ে খুব আস্তে ডাকবেন, ‘অনু, অনুরাধা!’ সেই অনুভূতি আর আশা এমনই তীব্র হয়ে উঠেছিল ওর মনে যে, সে চুম্বনের স্পর্শ যেন সে সত্যই অনুভব করলে। তীব্র সুখের অসহ্য যন্ত্রণায় চমকে শিউরে চোখ মেলে চেয়ে দেখলে সে একাই কেউ কোথাও নেই। সমস্তটাই তার স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন।
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অনুরাধা উঠে বসল। তার রাজকুমার কোনােদিনই আসবেন না , তা সে জানে। তার মনে পড়ে গেল সেই সরু অন্ধকার গলির সেই দেড়খানা ঘর, আর একপাল রুগ্ন ভাই বােন। বাবার পঁয়ষট্টি টাকা মাইনে, তাতে চাল-ডাল ঘর ভাড়াই হওয়া কঠিন, শিয়ালদা স্টেশনে কাজ করেন বলে বাজারে মাছ কিছু কিছু এমনি পান, তাতেই কোনােমতে চলে। যুদ্ধ বেধে কি-সব বাড়তি টাকা পাচ্ছেন, চাল-ডাল পাচ্ছেন অনেক সস্তায়, তবু তাদের বাড়িতে দুধ বন্ধ হয়ে গেছে, তারা খায় র-চা, আর ছেলে-মেয়েরা খায় ফ্যান। বাবা বাড়িতে একটা গামছা পরে থাকেন। আর অনুরাধা? তার দিন কাটে রান্না করে, বাসন মেজে, ভাইবােনদের সঙ্গে অষ্টপ্রহর চেঁচিয়ে, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আর কেঁদে। তার বাপের টাকা নেই তার ওপর, সে কুৎসিত। সুতরাং তার বিয়ের কথা এখন কেউ কল্পনাও করে না। সে যে কত কুৎসিত সে জানে, আয়নায় অনেক রকম করে মুখ দেখেও সে কিছুমাত্র সান্ত্বনা পায়নি প্রতিবারই মনে হয়েছে, আয়নাটা ছুড়ে ফেলে দেয়। একমাত্র বাবা বলেন, “রাধা যখন বিকেলে চুলটি টান করে বেঁধে কুমকুমের টিপ পরে তখন বেশ দেখায়। কিছু টাকার সংস্থান হলে ছেলে দেখতুম, ওকে কেউ অপছন্দ করবে না, তুমি দেখাে!
কিন্তু মা সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দেন, ‘তুমি তো বেশ দেখবেই, তােমার মত দেখতে হয়েছে কিনা! রং কালাে হলেও ক্ষতি ছিল না, গড়নটা সুদ্ধ তােমার মত মদ্দাটে মদ্দাটে হল !
রাজকুমার কোনােদিনই আসবেন না। অবশ্য সে অভাব অনুভব করার মত অবসরও বিশেষ তার মেলে না। কাজে আর অকাজে, বাড়িতে থাকলে তার নিশ্বাস ফেলবার অবকাশ থাকে না। নেহাৎ মামার অসুখ, চেঞ্জে আসা দরকার, মামীরও শরীর ভালাে না বলে মামী নিজে গিয়ে বললেন তাই এই ছুটি মিলেছে। মামীর হাতে দু পয়সা আছে, ছেলেপুলে নেই বলে তার মা-বাবা খুব সমীহ করেন ভবিষ্যতের আশাতে নিজের অনেক অসুবিধা করেও মা তাকে ছেড়ে দিয়েছেন।
অনুরাধা উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল একবার। কিন্তু পা তখনও যেন কাঁপছে অনভ্যাসের ফলে, তাছাড়া সে ভেবে দেখল চারটের এখনও অনেক দেরি। আর হয়ত এমন অবসর মিলবে না। সে আবার বসে পড়ল তেমনি করে খুঁড়িতে ঠেস দিয়েই, কিন্তু এবার আর চোখ বুজল না, দুরের রেললাইনটার দিকে চেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে একটা শুকনাে মহুয়া পাতা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল।
আচ্ছা সত্যি, কেউ কি কোনােদিন তাকে ভালােবাসবে না? কেউ তাকে বুকে টেনে নিয়ে কানের কাছে মুখ রেখে অমনি করে ডাকবে না? উপন্যাসের নায়িকাদের মত তারও কণ্ঠে, কপালে, ললাটে বার বার চুমাে খেতে কোনাে তরুণ কেনােদিন উন্মত্ত হয়ে উঠবে না ?
অকস্মাৎ একটা তীব্র ব্যথায় যেন সে অস্থির হয়ে উঠল। এ সব কী ছাইভস্ম ভাবছে সে ? ছিঃ! জোর করে মনটা অন্য কথায় আনবার চেষ্টা করল সে। আচ্ছা এই জমিটাতে কি বুনেছে ? মুগ-কড়াই, মটর না অড়হর…কে ওর মালিক কে জানে…
আবার ঘুরে ফিরে তার মন তাদের সেই সংকীর্ণ গলিতে ফিরে গেল! এ-রকম সে ছিল না। অন্য কোনাে আমােদ-প্রমােদের ব্যবস্থা নেই বলে তাকে উপন্যাস জোগাতে শুরু করেছেন বহুদিন থেকেই পড়েছেও অনেক, কিন্তু তা হলেও তার নিজের মনে কোনােদিন এসব কথা আসেনি। যত গােলমাল বাধে ওপরের তলার ঐ নতুন ভাড়াটেরা আসার পর থেকেই। পরেশ আর তার বৌ ছােট্ট দুটি লােকের সংসার, কাজ কম। তাই দিনরাত ফষ্টি-নষ্টি নিয়েই আছে ওরা। তাও ছিল ছিলই কী কুক্ষণেই যে নীলিমা সেধে অনুরাধার সঙ্গে ভাব করে জোর করে ওপরে টেনে নিয়ে গেল, সেই থেকেই অনুরাধার যত অশান্তির শুরু। লজ্জার বালাই নীলিমার ছিল না, অনুরাধার সামনেই সে পরেশের গায়ের ওপর এলিয়ে পড়ত, পিঠে কিল মেরে পালাত, খ করে চশমা কেড়ে নিয়ে চলে যেত এমনি কত কি! পরেশও সময় এবং সুযােগ পেলেই দিত তার জবাব। এমনি করে তাদের প্রণয়লীলার মধ্যে পড়ে অনুরাধারও কেমন যেন নেশা লাগল। সে নিজের কাজ ফেলে মায়ের বকুনি অগ্রাহ্য করেও যখন তখন দিনরাত ওদের ঘরে আসত, সেধে নীলিমার কাজকর্ম করে দিত! সে জানে যে তার এই যখন-তখন আসাটা পরেশ পছন্দ করত না, বরং বিরক্তই হত, তবু সে পারত না না-এসে! একদিন সে আড়াল থেকে নিজের কানেই শুনেছিল পরেশ বলছে, ঐ ছুড়িটা যখন তখন আসে কেন বল তো? বারণ করতে পার না?
নীলিমা রাগ করে জবাব দিয়েছিল “ছুঁড়ি ছুঁড়ি করাে না বলে দিচ্ছি, ওসব কি অসভ্য কথা ! আসে তাতে আমাদেরই উপকর হয়!
পরেশ বলেছিল, “হ্যা, তােমার উপকার করতেই ও আসে কি না!….কি রকম ডাইনির মত চায় কখনাে ওর মতলব ভালাে নয় দেখে নিও।
কিন্তু তবুও অনুরাধা তাদের সঙ্গ ছাড়তে পারেনি। সে যেন আফিং-এর নেশা, বিষ জেনেও খেতে হয়। হয়ত, হয়ত সে পরেশের জন্যই যেত শেষপর্যন্ত! পচিশ-ছাব্বিশ বছরের সুদর্শন যুবা, তাদের এই গলির মধ্যে, তার জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে এমন একটি তরুণের সংস্পর্শে সে কখনও আসেনি।
পরেশের কঠোর কথা তার সয়েছিল কিন্তু সইল না তার অনুকম্পা। সেদিনের কথা মনে হয়ে এতদিন পরেই এই সুদূর প্রবাসেও মুখ লাল হয়ে উঠল, কানের কাছে যেন আগুন জ্বলতে লাগল। কি যে দুর্মতি ওর হয়েছিল সেদিন, পরেশ অফিস থেকে এসে জামা গেঞ্জি খুলে রেখে কলঘরে গিয়েছিল স্নান করতে, নীলিমা তখন রান্নাঘরে চা করছে অনুরাধা কি একটা কাজে খালি ঘরে ঢুকে বিছানায় জামাগুলাে পড়ে আছে দেখে তুলে রাখতে গেল। কিন্তু গেঞ্জিটা হাতে নিয়ে কি যে দুর্জয় লােভ হল ওর, কিছুতে নিজেকে সামলাতে পারলে না। গেঞ্জিটার মধ্যে নিবিড়ভাবে মুখ গুজে দিয়ে ও যেন তারই অঙ্গের আম্রাণ পাবার চেষ্টা করতে লাগল যার দেহের স্পর্শ কোনদিনই সে পাবে না।…সেই দিবাস্বপ্নে সময়ের হিসাব গিয়েছিল হারিয়ে, হঠাৎ পায়ের শব্দে মুকে তুলে দেখল পরেশ। উঃ সে ওর কি লজ্জা! কোনােমতে ছুটে পালিয়ে এল বটে, কিন্তু তখনই একেবারে নিচে নামতে পারল না। ওর বুকের মধ্যে ধ্বক্ ধ্বক্ করছিল, অপমানে লজ্জায় গলা উঠেছিল শুকিয়ে। সিড়ির মুকে দাঁড়িয়ে আছে তখনও, পরেশের কথা কানে এল, ওগাে আমার এই গেঞ্জিটা কেচে দিও তো! নীলিমা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলে, কেন ? কালই তো ওটা ভেঙেছ?’ ‘তা হােক, দিও।
অনুরাধার সবচেয়ে যেটা ভয় ছিল যে, হয়ত তারা এই নিলজ্জতার কথা পরেশ নীলিমার কাছে বলবে, সেটা কেটে গেল বটে কিন্তু তার এই দয়া আর ঘৃণা দুইই যেন তীরের মত গিয়ে বিধল ওর বুকে। সেদিনের পর বহুদিন আর সে ওপরে ওঠেনি, শেষে নীলিমার অনুনয়ে যদি বা আবার যেতে শুরু করেছিল, পরেশের সামনে আর কখনও যায়নি।
কথাটা মনে পড়লে আজও তার লজ্জায় ও অপমানে মাথা কুটতে ইচ্ছা করে, আজও মাথার মধ্যে রক্ত উঠে ঝা ঝা করতে থাকে। অনুরাধা চঞ্চল হয়ে উঠে দাঁড়াল। আর না, এবার বাড়ির দিকে ফেরা যাক পৃথিবীর কোনাে ভালাে জিনিসে যার অধিকার নেই, বিধাতা যার ভবিষ্যৎ চিরকালের মত কালি লেপে দিয়েছেন, স্বপ্ন দেখাও তার পাপ । সে ক্লান্ত, অবসন্ন দেহমন নিয়ে আবার চলতে শুরু করল এবার বাড়ির দিকে, কাজ আর কর্তব্যের দিকে। চারটের বার্লি চাই, তারপর চা, একটু পরে ছানার জল সময় নেই। কিন্তু খানিকটা চলবার পরেই সেই মাঠ, দিগদিগন্ত জোড়া সেই ঢেউ-খেলানাে মাঠ, পাহাড় আর হেমন্তের সেই মধুর বাতাস তার দেহে আবার যেন মায়া বুলিয়ে দিলে। পা ক্লান্ত, তবু ইচ্ছা হয় ছুটে যেতে। মনে হয় ঘর-বাড়ি মানুষ সব থাক পড়ে, সূর্যাদেব ঐ পাহাড়টার আড়ালে মিলিয়ে যান ততক্ষণ এমনি যেখানে খুশি, যেদিকে খুশি বেড়ানাে যাক। হয়তাে মনের মধ্যে কোথাও আশাও জাগে যে, কোন একটা মহুয়া গাছের আড়াল থেকে এখনই কোনাে তরুণ বেরিয়ে আসবে, সে সেধে তার সঙ্গে আলাপ করতে চায়, যে জানতে চায় সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে কিনা…
আরও পড়ুনঃ গল্পঃ ভালোবাসায় বলিদান
হঠাৎ তার বাঁ-হাতখানা তুলে সে দেখতে লাগল। মনে হল যে তার হাতের গঠন তো খুব খারাপ নয়, আঙুলগুলাে সরু বটে কিন্তু সুডৌল, হয়ত চাপার কলি নয়, কিন্তু কবিরা যে সব আঙুলকে আগুনের শিখার মত বলে বর্ণনা করেন সেই রকমই। কাজ করে বাসন মেজে হাত শক্ত হয়েছে, কিন্তু তবু শীর্ণ নয়, প্রথম যৌবনের রসােচ্ছলতা আজও তাকে নিটোল রেখেছে। একটা ধানক্ষেতের মধ্যে অনেকটা জল জমেছিল, কালাে স্বচ্ছ জল আয়নার মত জ্বলজ্বল করছে। পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে আবার কি মনে হল, ফিরে এসে অনুরাধা চুপ করে সেইদিকে চেয়ে দাড়িয়ে রইল। ভালাে করে দেখা যায় না, তবু সেই পড়ন্ত বেলার রােদে তার উত্তেজিত এবং আরক্ত মুখখানা, বােধহয় জীবনে এই প্রথম, ভালােই লাগল। এর চেয়ে ঢের খারাপ মুখ সে দেখেছে অনেক মেয়ের, ঢের বেশি কুৎসিত আর কালাে। তবু তারা সুখেই ঘরকন্না করছে, তাদের নিয়েও স্বামীরা ঘর করে, তাদের ভালােবাসে তাদের চুমাে খায়।
ভালােবাসা পাবার এবং ভালােবাসবার একটা তীব্র কামনায় অনুরাধার সমস্ত বুকের ভেতরটা যেন টন টন করে উঠল। সে চায় হ্যা, আর গােপন করে লাভ নেই সে চায় কারুর উত্তপ্ত চুম্বনের আবেশে তার চোখ দুটি বুজে আসবে, সমস্ত দেহ এলিয়ে পড়বে কারুর কঠিন বাহুবন্ধনের মধ্যে। কানের কাছে বাজবে অমরার সঙ্গীতের মতই তার অস্ফুট প্রেমগুঞ্জন। এ যদি জীবনে একদিনও আসে, একটি মিনিটের জন্যও তাহলেও সে খুশি, বাকি সমস্ত জীবনটা সে সেই মুহূর্তের স্বপ্ন দেখেই কাটিয়ে দিতে পারবে।…আর সেই সুতীব্র সুখের চরম অনুভূতির মুহূর্তটি যেন আজই তার অন্তরের মধ্যে ঘনিয়ে এসেছে, সে লগ্ন তার আজই আসা চাই, আজই আর অপেক্ষা করার সময় নেই তার।
বাড়িতে ফিরে ঘড়ি দেখল চারটে বেজে গিয়েছে অনেকক্ষণ, কিন্তু তার সৌভাগ্যক্রমেই বােধ হয় মামা বা মামী কারুর ঘুম ভাঙেনি। সে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল একই সঙ্গে স্বস্তির ও অবসাদের তারপর আবার বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। সবাই ঘুমােচ্ছে, চাকরটা পর্যন্ত, শুধু আশুবাবু তখনও বই পড়ছিলেন, জানলা দিয়ে দেখল অনুরাধা।
অদ্ভুত মানুষ এই আশুবাবু। মামীমার ভাই, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। কোথাকার এক ইস্কুলে নাকি মাস্টারি করেন। মােটা-সােটা গােলগাল মানুষটি, অত্যন্ত নির্বিরােধী লােক, হয় ইস্কুলের পরীক্ষার খাতা, নয় বই একটা পেলেই তিনি খুশি। শরীর খারাপ হবার ভয়ে দুপুরে ঘুমােন না, মেপে একশ গজ হেঁটে ব্যায়ামের কর্তব্য শেষ করেন এবং জামা-কাপড়-চশমা-ছাতা কোনােটাই কাজের সময় খুঁজে পান না এমনি অন্যমনস্ক। আগে আগে এঁকে দেখলেই অনুরাধার হাসি পেত, এখন তার অসহায় ভাব দেখে দয়া হয় ওর নিজে থেকেই সব গুছিয়ে দেয়। একটুখানি ইতস্তত করে অনুরাধা ওঁরই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আশুবাবু মুখ তুলে প্রশ্ন করলেন, ‘অনু, কোথায় ছিলে এতক্ষণ, বেড়িয়ে এলে নাকি?’
কথাটার জবাব না দিয়ে সে আর একটা প্রশ্ন করল, ওটা কি পড়ছেন উপন্যাস?
আশুবাবু বললে, ‘না ওটা শিক্ষা-সংক্রান্ত একটা বই। মনে করছি আসছে বছর বি-টি পরীক্ষা দেব, তারই জন্য একটু পড়াশুনা করছি। কতদূর গিয়েছিলে?
অনুরাধা কণ্ঠস্বরে একটু জোর দিয়ে বললে, ‘ঐ পাহাড়টার দিকটায়, অ-নে-ক দুর! আপনি যাননি ওদিকে, না?’ আশুবাবু ওর মুখের দিকে একটুখানি চেয়ে থেকে জবাব দিলেন, এইগুলাে তােমরা বড় খারাপ করাে। বাড়ি থেকে বেরােনাে অভ্যাস নেই কখনও, এখানে এসেই এতটা হেটে এলে। এইরকম হঠাৎ-পরিশ্রমে অসুখ করে তো জানাে ?
আশুবাবুর পক্ষে এতটা উদ্বেগ যেন অপ্রত্যাশিত। অনুরাধা একটু অপ্রস্তুতভাবে হেসে বলল, “খুব বেশিদূরে তো যাইনি। ‘ই, যাওনি বৈ কি! এখনও হাঁপাচ্ছ দস্তুরমত, এই ঠাণ্ডায় ঘেমে উঠেছ। এর ওপর যেন জল খেয়ে বসাে না এখনি ওতে সর্দিগর্মি হয়। আশ্চর্য! এত ব্যাপার লক্ষ্য করতে তাকে অনুরাধা এই প্রথম দেখল। অকস্মাৎ যেন ওর বুকটা কিসের একটা উত্তেজনায় দুলে উঠল, সে তার চৌকিটারই এক পাশে বসে পড়ে বলল, “আমার কখনও অসুখ করে না।
তারপর কণ্ঠস্বর অকারণেই নামিয়ে প্রশ্ন করলে, ‘চা খাবেন এখন? করব?
আশুবাবু বিস্মিত হয়ে বললে, ‘এত সকালে কেন? এখনও ত সময় হয়নি। ‘নাই বা হল সময়। একদিন না হয় অসময়েই খেলেন। ‘দরকার নেই। একটু পরে তো স্টোভ জ্বালতেই হবে, সেইসময় একেবারে হবে’খন দিদি উঠুক।
অনুরাধা একটু চুপ করে থেকে বললে, আপনি বিদেশে এসেও খালি খালি বই পড়েন। দুপুরবেলা বেড়াতে যে কী ভালাে লাগে! যাবেন কাল ঐ পেছনের শালবনটাতে?
শিউরে উঠে আশুবাবু জবাব দিলেন, ‘বাপরে। ওখানে শুনেছি বাঘ আসে। ‘আচ্ছা, তা হলে মাঠে যাবেন, ঐ ইটের পাঁজাটার ওপারে?
‘তা যেতে পারি। কিন্তু আমি বেশিদূর হাঁটতে পারব না, আগেই বলে রাখছি। অনুরাধা অন্যমনস্কভাবে বইটা নাড়তে নাড়তে হঠাৎ এক সময়ে আশুবাবুর একটা হাতের উপর নিজের ডান হাতখানা রাখলাে। আশুবাবু একটু বিস্মিত হয়ে ওর মুখের দিকে চাইলেন, তারপর ওর হাতখানা মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে বললেন, “তুমি বড্ড বেশি পরিশ্রম করেছ অনু, তােমার হাত থর থর করে কাপছে।
অনুরাধা জবাব দিলে না, শুধু মাথাটা ওর একটু হেঁট হয়ে এল, আর তার ফলে ওর পিঠ থেকে কয়েক গােছা চুল শিথিল হয়ে এসে পড়ল আশুবাবুর বাঁ হাতখানার ওপর। আশুবাবু ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ স্নিগ্ধ চোখে চেয়ে থেকে বললেন, এখানে তােমার খাটুনিও হচ্ছে খুব, না?’
অনুরাধা প্রবল বেগে ঘাড় নেড়ে একটু যেন জড়িত কণ্ঠে বলল, “ কিচ্ছু না, বাড়িতে এর থেকে ঢের বেশি খাটতে হয়। আর তা ছাড়া কাজ করতে আমার একটুও কষ্ট হয় না। ওর হাতখানা তখনও আশুবাবুর হাতের মধ্যে ঘামছিল, তিনি একটুখানি চাপ দিয়ে বললেন, ‘সত্যি, শুধু আমার জন্যই তােমাকে কত বেশি খাটতে হয়। আমার চিরকালই এইরকম স্বভাব, কিন্তু সেজন্যে আমার বাড়ির লােকেরা আর মাথা ঘামায় না, নিজেই জিনিস হারাই নিজেই খুঁজে বার করি, অনেক সময় হয়ত পাইও না, কিন্তু কি করব?
জবাব দিতে গিয়ে অনুরাধার গলা কেঁপে গেল, সে বললে, আপনার বাড়ির লােকেরা আপনাকে চিরদিন পায়, তাদের কাছে আপনার দাম কম। আমি তো দুদিন মাত্র আপনাকে কাছে পেয়েছি, আমি আপনার অসুবিধা ঘটতে দেব কেন?

আরও পড়ুনঃ বড়দের গল্পঃ একান্ত গোপনে
আশুবাবু কি যেন একটা রসিকতায় হেসে উঠে বললেন, ‘তা বটে। তবে অভ্যেসটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এই যা। বাস্তবিক তুমি যা যত্ন করছ, তােমার কথা আমার চিরদিন মনে থাকবে।
অনুরাধার মাথা আরও ঝুঁকে পড়েছিল, ওর নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছিলেন আশুবাবু। সে নত মুখেই জবাব দিল, শুধু যত্ন করার জন্যই মনে থাকবে আর কোনাে কারণ নেই?
কথাটা আশুবাবু বুঝতে পারলেন না ঠিক, কিন্তু নির্লজ্জতায় অনুরাধার মুখ লাল হয়ে উঠেছিল! সেদিকে চেয়ে বােকার মত একটু হেসে আশুবাবু বললেন, ‘তা বটে তা তুমি বলতে পার বটে। তারপর অপেক্ষাকৃত গম্ভীর হয়ে বললেন, তুমি ভীষণ ঘেমে উঠেছ অনু, চোখমুখ রােদে লাল হয়ে উঠেছে যাও, একটু শুয়ে পড়ােগে। অনুরাধার কণ্ঠ যেন বিকৃত হয়ে উঠেছে, সে প্রাণপণে সেটা সহজ করবার চেষ্টা করতে করতে বললে, ‘আমি এখন শােব না শুতে ভালাে লাগছে না।
উদ্বিগ্নকণ্ঠে একটু সস্নেহ তিরস্কারের ছোঁয়া দিয়ে আশু বললেন, তুমি বুঝতে পারছ না তােমার কতটা পরিশ্রম হয়েছে এখন একটু বিশ্রাম না করলে এরপর ভারি শরীর খারাপ করবে। যাও, যাও এখনি আবার দিদি উঠে পড়বেন আর তাহলে সেই রাত এগারটার আগে ছুটি পাবে না। না, না, আমি কোনাে কথা শুনতে চাই না ওঠো আগে।
ওর যে হাতখানা তখনও আশুর মুঠোর মধ্যে আতাে ধরা ছিল সেটা ছেড়ে দিয়ে আশু একটু মৃদু ঠেলা দিতেই অনুরাধা আশুর বুকে এলিয়ে পড়লো। তখন অনুরাধা নিজের ধৈর্য আর ধরে রাখতে পারল না সেও আশু কে জড়িয়ে ধরলো। এর পর আশু অনুরাধার মুখের পানে চেয়ে নিজের সমস্ত লজ্জা বিসর্জন দিয়ে তার কমলা লেবুর কোয়ার মতো ঠোঁট দুটিকে চুম্বন করলো এবং অনুরাধাকে নিজের বুকের মধ্যে জোরে জাপটে ধরলো।
                              (সমাপ্ত)
                             

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Comment