Bengali Story For Kids | মজার মজার রূপকথার গল্প| ছোটদের গল্প

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 31st, 2023 at 01:54 am

Bengali Story For Kids (ছোটদের গল্প) আমরা অভিবাবকরা আমাদের শিশুদের গল্পের দ্বারা তাদের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করতে পারি। নানান রকমের গল্পের (kids story) মাধ্যমে তাদেরকে অনেক রকমের শিক্ষামূলক তথ্য ও নৈতিকতা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করতে পারি। তাই ছোটদেরকে গল্প বলার সময়ে  শুধুমাত্র রূপকথার ও আনন্দের গল্প নয়, তার সাথে  শিক্ষামূলক ও নৈতিক গল্প গুলিও বলার প্রয়োজন আছে।
 
তাই আজকে আমি আপনাদের শিশুদের জন্যে ৫ টি বাছাই করা শিক্ষামূলক ও নৈতিক গল্প নিয়ে এসেছে যে গুলি আপনি আপনার শিশুর শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য শোনাতে পারেন।
 
Bengali story for kids

 

Bengali Story For Kids| ছোটদের রূপকথার গল্প

 

১. সাত বোন ছোট পরী

 
চারিদিকে পাহাড় ঘেরা উপত্যকার মাঝে ছিল অপূর্ব সুন্দর এক সরোবর। স্বর্গও লজ্জা পায় এমন সুন্দর পরিবেশ সেখানে। সেই সরোবরের তীরে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বেড়াতে আসে সাত পরী, সাত বোন। তারা ডানাগুলো একটা গাছের তলায় রেখে আনন্দ করে জলে খেলে বেড়ায়। জনশূন্য চারপাশ। ঠিক সাতদিন ধরে আনন্দ করে আবার ডানাগুলো পরে উড়ে যায় নন্দনকাননে, তাদের নিজের দেশে।
 
এদিকে কাছাকাছি যে কিছু গ্রাম আছে সে খবর তারা না রাখলেও পরীদের সব খবর রাখে কিন্তু সেই গ্রামেরই এক অনাথ রাখাল ছেলে। সে গরু চরায়, বাঁশি বাজায় আর দূর থেকে দেখতে থাকে পরীদের কান্ডকারখানা। একসময় তার খুব ভালো লেগে যায় সবচেয়ে ছোট পরীটিকে। কি অপরূপ মিষ্টি চেহারা! ওকে দেখলেই রাখালের বাঁশিতে বেজে ওঠে স্বর্গীয় সব সুর। দূর থেকে পরীরা তা শোনে আর অবাক হয়ে ভাবে এমন সুন্দর সুর কে বাজায়, এ সুর তো নন্দনকাননের পাখিদেরও অজানা! তারা মুগ্ধ হয়ে শোনে, কিন্তু রাখাল থাকে আড়ালে, তাকে কেউ দেখতে পায় না।
 
একবার হলো কি, রাখালের মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি জাগলো। পরীরা যখন স্নানে ব্যস্ত, সে চুপিচুপি এসে দাঁড়ালো সেই গাছতলাটিতে যেখানে খুলে রাখা আছে পরীদের ডানাগুলো। বেছে বেছে সব চেয়ে ছোট ডানাজোড়া নিয়ে সে লুকিয়ে রেখে দিল একটা বড় গাছের ফোকরে। তারপর ধীরে ধীরে সরে পড়ল সেখান থেকে। এখন সাতদিন পরে পরীদের যাবার সময় হলে দেখা গেল তাদের ছোটবোনের ডানাজোড়া নেই সেখানে, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সেটা পেল না।
 

এদিকে বাবার কড়া হুকুম, একসপ্তাহের বেশি তাদের স্বর্গ ছেড়ে থাকা চলবে না। কি করে, সবচেয়ে যে বড় পরী সে তার ছোট বোনকে বুঝিয়ে বলল, ‘উপায় নেইরে বোন, আমাদের যেতেই হবে, আর গেলে পরের বছরের আগে আর আসতে পারব না। তুই বরং এখানে থেকে ডানা জোড়া ভাল করে খুঁজে দেখ, পেলেই দেশে চলে আসিস, কেমন? আমরা বাবাকে বুঝিয়ে বলব তিনি যেন রাগ না করেন’।
 
ছয় পরী ছোট বোনকে একা সরোবরের তীরে ফেলে রেখে তো উড়ে চলে গেল, বেচারী ছোটপরী মনের দু:খে বসে বসে কাঁদতে লাগলো। তাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে রাখাল সাহস করে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। সব শুনে সে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল, তারপর অনেকক্ষণ ধরে বাঁশি বাজিয়ে শোনাল। এই রাখালের বাঁশিই যে তাকে দূর থেকে এত আনন্দ দিয়েছে ভেবে পরীর খুব ভালো লাগলো, তাদের বন্ধুত্ব হতে দেরী হলো না।
 
রাখাল আর পরী গ্রামের একপ্রান্তে একটি কুঁড়েঘরে থাকে, একত্রে গরু চরায়। রাখাল বাঁশি বাজায় আর পরী ঘাঘরা উড়িয়ে নাচে, দেখে গ্রামের লোকেরা ঠিক করলো এদের বিয়ে হওয়া উচিত। রাখাল তো রাজি ছিলই, পরীও কি আর করে, রাজি হয়ে গেল। তারপর একদিন বেশ একটা উৎসবের মধ্যে দিয়ে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।
 
রাখাল আর পরীর দিনগুলো বেশ সুখেই কাটে। আবার পরীর চোখ মাঝে মাঝে জলে ভরে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, তার দিদিদের কথা ভেবে, কি আনন্দই না করত তারা সাতজনে। নন্দনকাননের অপূর্ব শোভা, বাবার স্নেহ, বাবা তাঁর প্রিয় মেয়েকে ছেড়ে আছেন কি করে সে কথা ভেবে অভিমানও হয়। এরকম সময়ে রাখাল তাকে বাঁশিতে মিষ্টি সুর বাজিয়ে শোনায়, পৃথিবীর, মানুষদের সব গল্প বলে, শেষে একসময় তারা সব ভুলে ঘুমিয়ে পড়ে।
 
ঠিক একবছর হবার আগে পরীর কোল আলো করে একটি ছেলে এলো। তাকে পাবার পরে পরী যেন যেটুকু দু:খকষ্ট ছিল তাও ভুলে গেল। দেখতে দেখতে একবছর পার হয়ে গেল। পরী তো ভুলেই গেছিল কিন্তু রাখালের মনে ছিল, তার দিদিদের আসার সময় হয়ে এলো।
 
 
রাখালের ঠিক চোখে পড়ল পরীর দিদিরা এক এক করে সরোবরের তীরে নামল। কিন্তু তারা জলে না নেমে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। রাখাল তখন তাদের সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল, তারা তো ছোটপরী ভালো আছে শুনে খুশি হয়ে তখনি রাখালের সাথে চলে এলো তাদের বাসায়। তারপর তো সাতবোনের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না, হাসি আর গল্প চলল সারারাত ধরে। ছোটপরীর ছেলেটিকে মাসীরা মিলে খুব আদর করলো।
 

Bangla Chotoder Golpo

ঠিক সাতদিন পরে যখন তাদের যাবার সময় হলো, রাখাল একফাঁকে ছুটে গিয়ে ছোটপরীর ডানাজোড়া নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে সব কাহিনী খুলে বলল। পরী স্তম্ভিত হয়ে শুনলো। শেষে রেগেমেগে ডানাজোড়া পরে বলল, ‘তুমি যা করেছ, তার জন্যে ক্ষমা নেই। তুমি থাক এখানে তোমার ছেলে নিয়ে একা, আমি চললাম দিদিদের সাথে। তারপর সে সত্যিই সরোবরের তীরে এসে দিদিদের সাথে দেখা করে ওদের সঙ্গে উড়ে চলে গেল স্বর্গরাজ্যে তাদের বাসায়।
 
কিন্তু স্বর্গে এসেও শান্তি নেই। ছোটপরীর মন পড়ে আছে সরোবরের তীরের সেই পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট এক কুঁড়েঘরে, যেখানে আছে তার ছেলে আর সেই রাখাল। এক এক করে তার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়তে লাগলো, সেই রাত জেগে তাদের গল্প করা, নির্জন মাঠে রাখালের বাঁশি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া। একটা চাতুরী রাখাল করেছিল, কিন্তু মানুষটা তো সে খারাপ নয়, চাইলে তো সে পাখাগুলো ফেরত না দিলেও পারত। স্বর্গে সব আছে, সবকিছুই সুন্দর এখানে, কিন্তু ভালবাসা নেই, বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই।
আর দু:খের স্বাদ যে একবার পেয়েছে সেই জানে একটানা সুখও বড় একঘেয়ে- স্বর্গে তো দু:খ বলে কিছু নেই। সবচেয়ে বড় কথা সে ভুলতে পারছে না সেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে যে আর কদিন পরেই তাকে মা বলে ডাকত, না জানি সে কত কাঁদছে, রাখাল কি একা সামলাতে পারছে ঐটুকু বাচ্চাকে? ছোট পরীর চোখে ঘুম নেই, চোখ বুজলেই কানে আসে ছোট শিশুর কান্নার আওয়াজ। সেও কাঁদে আর শুধু এইসব কথা চিন্তা করে।
 
ছোট যাই করুক বড়দিদিদের চোখ এড়ায় না। শেষে ব্যাপারটা তাদের বাবাও জানতে পারলেন। তিনি বললেন ‘ মানুষের দুনিয়ায় সংসার পেতে তুমি তো পরীদের দুনিয়ার নিয়ম ভেঙেছ। এর জন্য আমারও কিছুটা সম্মানহানি হয়েছে । তা শুধু শুধু তোমার শাস্তি বাড়িয়ে তো সে সম্মান আমি ফিরে পাব না, তুমি যাও, যেখানে গিয়ে সুখ পাও যেতে পার’। রাজা চলে গেলেন, বোধহয় তাঁর চোখেও জল এসে পড়েছিল।
 


 
এদিকে রাখালেরই কি খুব সুখে দিন কাটছিল? পরী চলে যাবার পর থেকে ঘর-দোর অগোছালো, ছেলেকে সে না পারে ঠিকভাবে খাওয়াতে, না পারে ঘুম পাড়াতে। এক বুড়ি দাই দেখাশোনা করে বলেই কোনমতে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে। যাবার সময় পরী তার উপর রাগ করে গেছে। সেটাই স্বাভাবিক, তা বলে সে একবারও ভাবলো না তার কোলের ছেলেটির কথা। আর কি সে ফিরে আসবে কোনদিন! রাখাল ভাবে আর অভ্যাসমত ছেলেকে কোলে করে রোজই এসে বসে থাকে সরোবরের তীরে, সেই গাছটির তলায়। তার আজকাল আর বাঁশি বাজানোতেও মন নেই।
 
সেদিনও অমনি বসে আছে সরোবরের তীরে, হঠাত মনে হলো, আকাশ থেকে কে যেন একটা নামছে। প্রথমে ঈগলপাখি ভেবে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে লুকোতে যাচ্ছিল, তারপর বুঝতে পেরেই তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এ যে ছোটপরী। রাখাল ভাবলো পরী বোধহয় থাকতে না পেরে তার ছেলেকে নিয়ে যেতে এসেছে। রাখাল ধীরে ধীরে ছেলে কোলে পরীর দিকে এগিয়ে গেল।
 
কিন্তু একি করছে ছোট পরী, সে মাটিতে নেমে ডানাজোড়া প্রথমে খুলে রাখল। তারপর কোত্থেকে একটা চকমকি বের করে তা ঠুকে আগুন জ্বালালো। তারপর পাখাজোড়াটাকে নিয়ে সেই দৃঢ়ভাবে সেই আগুনে ফেলে দিল।
 
‘একি, একি করলে তুমি’, ছুটে এলো রাখাল, জিজ্ঞাসা ভরা দৃষ্টিতে তাকাল পরীর দিকে। ‘আর তো তুমি ফিরে যেতে পারবে না’।
 
‘আর আমি যেতে চাইও না; এখানে তুমি আছো, আমার ছেলে আছে, আমার পরিবার ছেড়ে আমি কোথাও গিয়েই আনন্দে থাকতে পারব না।’ বলে ছুটে এসে সন্তানকে কোলে তুলে নিল ছোটপরী।
 
তারা পরম নিশ্চিন্তে হাঁটা দিল গ্রামের পথে। পিছনে পুড়ে ছাই হতে থাকলো পরীর ডানাজোড়া।
 

মজার মজার রূপকথার গল্প

 
Bengali story for kids
 

২. সিনডারেলা

 
ছোটবেলায় কে না পড়েছি সিনডারেলার গল্প। যদিও বিভিন্ন দেশে এই গল্পের কাহিনীর বিভিন্নতা রয়েছে আর তা প্রায় পনেরশ রকম। আমাদের চিরচেনা সিনডারেলার গল্পটি মূলত রচিত হয়েছে সতের শতকের মাঝামাঝি সময়ে। পরবর্তীতে এই গল্পটি নিয়ে তৈরি হয়েছে কার্টুন এবং সিনেমা। সিনডারেলা সেই যে পরিশ্রমী মেয়েটা, যার আপন বলতে কেউ ছিল না পৃথিবীতে। সৎ মা আর সৎ বোনেরা তাকে দিয়ে সারাদিন শুধু কাজই করাতো। কিন্তু মেয়েটি যেমন ছিল সুন্দরী, তেমনি ছিল লক্ষী। তার মনটা ছিল ফুলের মতই কোমল। তাই তো তার বন্ধু ছিল পাখি, ইঁদুর আর ঘোড়া। এভাবেই কাটছিল তার দিন।
 
একদিন তার জীবনে একটি সুযোগ এলো। রাজপুত্রের জন্য সারা রাজ্যজুড়ে খোঁজা হচ্ছে মেয়ে। তাই রাজ্যের সকল মেয়ের ডাক পড়লো রাজপ্রাসাদে। কিন্তু সিনডারেলার যে একটি সুন্দর জামাও নেই! অনেক বুদ্ধি করে সে তার পুরনো নাচের ড্রেস টাই রিপু করে পরে তৈরি হয়ে নিল রাজপ্রসাদে যাওয়ার জন্য। সৎ মা আর বোনেরা নানানভাবে তাকে বাধা দিল। কিন্তু শেষমেশ জাদুর বুড়ির সাহায্যে সব বিপত্তি পেরিয়ে সে পৌঁছালো রাজপ্রাসাদে আর জয় করে নিল রাজপুত্রের মন।
 
কিন্তু এখানেও ঘটলো বিপত্তি। রাজপুত্র কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেললো সিনডারেলাকে। কারণ জাদুর বুড়ি যে তাকে রাত বারোটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু তার কাঁচের একপাটি জুতা দিয়ে পরে রাজপুত্র খুঁজে পেলেন সিনডারেলার সন্ধান। এভাবেই লক্ষী মেয়ে সিনডারেলা পেল নতুন জীবন। হাজার বছর ধরে গোটা পৃথিবীতে সিনডারেলার এই গল্প মানুষের মুখে মুখে। যেমন প্রাচীন মিশর ও চীনে এই গল্পটি ভিন্নভাবে প্রচলিত।

ছোটদের গল্প

 
Bengali Story for Kids
 

৩. প্রজাপতি রাজকুমারী

 
রাজকুমারীর মনে পড়ে গেল তার প্রতিজ্ঞার কথা! সে ব্যাঙকে নিয়ে গেল প্রাসাদে।
 
এক গোলাপী রঙের প্রজাপতি এসে ছুঁয়ে দিলো, ব্যাঙ হয়ে গেল রাজকুমার! ওরা চিরদিন বন্ধু হয়ে রইলো।
 
আজকে এক রাজকুমারীর গল্প বলবো যে একটি গোলাপী রঙের প্রাসাদে থাকতো। তোমারা জানো যে গোলাপী বা পিংক আসলে মেয়ে-শিশুদের সবচাইতে প্রিয় রং। আর হবে-ই না কেন! গোলাপী তো ফুলের রং হয়।
 


 
 
রাজকুমারী সোনা দিয়ে বানানো একটা বল নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করতো। যেখানেই যেত সেটা সে সঙ্গে করে নিয়ে যেত। একদিন পুকুরে গোসলের সময় বলটা মাটি থেকে গড়িয়ে পানিতে পড়ে যায়। রাজকুমারীর সে কি কান্না! তার অবস্থা দেখে পদ্মপাতায় বসে থাকা একটি ব্যাঙ এসে তাকে শান্ত করার জন্য কথা দিলো যে, সে ওই বলটি তার জন্য খুঁজে নিয়ে আসবে। কিন্তু ব্যাঙ একটি শর্ত রাখলো। বললো, সে ওই বলটি যদি খুঁজে আনতে পারে তাহলে তাকে প্রাসাদে থাকতে দিতে হবে। সে রাজকুমারীর সঙ্গে খাবে এবং ঘুমাবে! রাজকুমারী ব্যাঙ-এর শর্তে রাজি হয়ে গেল। ব্যাঙ প্রায় সারাদিন ধরে ডুব-সাঁতার করে অনেক বড় আর গভীর পুকুর তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করলো রাজকুমারীর সোনার বল এবং রাজকুমারী বল নিয়ে খুশি মনে প্রাসাদে ফিরে গেল। সে বেমালুম ভুলে গেল তার প্রতিজ্ঞা! এবং অনেকদিন ধরে ব্যাঙ প্রাসাদের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো, কখনও যদি আবার রাজকুমারীর দেখা পায়!
 
ওই দিন প্রকাণ্ড ঝড়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে! অনেক বৃষ্টি আর ভয়ঙ্কর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ব্যাঙ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখনই পুকুরের টলমল পানিতে সাঁতারের আকাঙ্ক্ষায় রাজকুমারী রওনা হলো সে দিকে। দেখলো রাস্তায় ব্যাঙ পড়ে আছে। রাজকুমারীর মনে পড়ে গেল তার প্রতিজ্ঞার কথা! সে ব্যাঙকে নিয়ে গেল প্রাসাদে এবং অনেক সেবা করে ভালো করে তুললো। দু’জন দু’জনের খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল। সেই বন্ধুত্বের প্রভা ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র এবং এক গোলাপী রঙের প্রজাপতি এসে ছুঁয়ে দিলো, ব্যাঙ হয়ে গেল রাজকুমার! ওরা চিরদিন বন্ধু হয়ে রইলো।
 
রাজকুমার আসলে এক বন্ধুর প্রতি অবহেলা করেছিল, আর কথা দিয়ে কথা রাখেনি বলে রাজকুমার ব্যাঙ হয়ে জীবন-যাপন করছিল। কিন্তু রাজকুমারীর বন্ধুত্ব ওকে সকল অভিশাপ থেকে মুক্তি দিলো। আমাদের কত রকম ভুল হয়! কত প্রতিজ্ঞা রাখি না! তাতে কি? আমাদের ভুলগুলো ঠিক করে ফেলবো। আর কোনো বন্ধুকে কথা দেবার আগে ভেবে নেবো! ভুলে হয়ে গেলে তো সরি বলা যায়, তাই না!

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প

 
Bengali story for kids
 

৪. হিমালয়ের ছোট্ট গ্রাম

 
সে অনেক কাল আগের কথা ,দূর হিমালয়ের কোলে ছিল এক ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করত সামদ্রুপ নামে এক অসীম সাহসী তরুন। সারা দিনমান চমরী গাই চড়াত আর রাতে চুলার পাশে বসে বসে চাদর বুনত। গ্রামে সবাই তাকে ভীষণ পছন্দ করত।
 
একবার হয়েছি কি সামদ্রুপ এর দাদীর ভীষণ অসুখ ,এখন কি করা। বদ্দি যে পথ্যি আনতে বলল তা তো শহর ছাড়া পাওয়া যায় না আর শহরে যেতে সময় লাগে দুই দিন এক রাত। সে যে দূরের উপত্যাকায় শহর।
 
সামদ্রুপ এর গাঁয়ের সবাই প্রয়োজনে দল বেধে শহরে যেত ,একা একা কেউ যেত না। কারন শহরে যাওয়ার পথে ছিল পদে পদে বিপদ। পাহাড়ি রাস্তা আর গিরি খাতের বাঁকে বাঁকে বন্য পশু ,ইয়েতি ছাড়াও ছিল ভূতের ভয়।
 


 
কিন্তু সামদ্রুপ তার দাদীকে ভীষণ ভালবাসত তাই সে ঝুকি নিয়েও তৈরি হল শহরে যেতে । খুব সকাল সকাল সূর্য যখন পাহাড়ের বরফ ঢাকা চূড়া গুলোকে সোনালি আভায় আলোকিত করতে শুরু করেছে তখন ই সে রওয়ানা দিল শহরের পথে । বাড়ির সবাই তাকে পই পই করে বলে দিল সাবধানে থাকতে।
 
সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে ,ফুল পাখিদের সাথে কথা বলতে বলতে আর নিজের মনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সে এসে পৌঁছাল পাহাড়ের ঢালে ,রাতটুকু হাতলে কাল দুপুর দুপুর পৌঁছে যাবে শহরে । ওইদিকে সূর্য হঠাত করেই চলে গেল পাহাড়ের আড়ালে।
 
সাহসী সামদ্রুপ তারপরও হাঁটতে লাগলো তার নিজের গন্তব্যের দিকে । মাঝরাতে চাঁদের ঘোলা আলোয় পাহাড়ে পাইনের বনের ধারে হঠাত তার দেখা হল এক ভূতের সাথে।
 
কে রে তুই ? এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস ? খ্যানখ্যানে গলায় হেঁকে উঠল ভূত।
 
হে হে আমায় চিনলে না ,আমি ওই দূর পাহাড়ের কাছে যে পুরানো ঝং আছে সেই ঝং এর ভূত।
 
মনে মনে ভয় পেলেও মুখে তা প্রকাশ করল না সামদ্রুপ।
 
ভূত তাকে বিশ্বাস করল ,আর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে আপাতত রক্ষা পেল সামদ্রুপ।
 
ভূতের হাতে ছিল এক বিশাল বস্তা । ভূত সামদ্রুপকে বস্তাটা কাঁধে নিয়ে হাঁটতে বলল।
 
মনে মনে রাগ হলেও কিছুই করার নাই তাই সামদ্রুপ ভূতের কথা মতই কাজ করল।
 
আশ্চর্য ব্যাপার ,এত্ত বড় বস্তা অথচ বাতাসের মত হালকা , নিজের মনেই বলল সামদ্রুপ।
 
এরপর তারা একসাথে হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর ভূত বেশ খোশ মেজাজে গল্প শুরু করল।
 
ইয়ে এই বস্তাটা এত্ত বর কিন্তু এক্কেবারে হালকা , মিনমিন করে বলল সামদ্রুপ।
 
আরে বোকা হালকা তো হবেই ,ওর মাঝে আছে শুধু রাজকন্যার আত্মা ,আমি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি , খ্যানখ্যানিয়ে বলে উঠল ভূত।
 
বলছ কি ? আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করল সামদ্রুপ।
 
হ্যাঁ রে ,আর এই জন্যই তো রাজকন্যা ভীষণ অসুস্থ ,হাসিমুখে উত্তর দিল ভূত।
 
ওমা তাহলে তো রাজকন্যা আর বাঁচবে না ,সভয়ে আবারও বলল সামদ্রুপ।
 
পৃথিবীর কোন বদ্যির সাধ্য নাই এই আত্মা ছাড়া ওকে বাঁচানোর , সদম্ভে উত্তর দিল ভূত।
 
হুম ,আস্তে করে বলল সামদ্রুপ। হঠাত করেই দয়ালু সামদ্রুপ এর মনটা ভারী হয়ে উঠল রাজা আর রাজকন্যার জন্য।
 
সে করল কি সুযোগ বুঝে হুট করে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল গম ক্ষেতে।
 
এদিকে ভূত তো রেগে অস্থির ,কিন্তু বেশীক্ষণ খোঁজাখুঁজির সুযোগ পেল না। কারন দিনার আলো ফুটতে শুরু করেছে।
 
আলো এসে ভুতের গাঁয়ে পড়ার সাথে সাথেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
 
কালবিলম্ব না করে সামদ্রুপ দৌড় দিল রাজার প্রাসাদে।
 
আত্মা ফিরে পেয়ে মরণাপন্ন রাজকন্যা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাল। চারপাশে বয়ে গেল খুশির বন্যা।
 
রাজা সামদ্রুপ এর কাছে সব শুনে পথ্যি যোগাড় করে পাইক পেয়াদা দিয়ে তা পাঠিয়ে দিল সামদ্রুপ এর গাঁয়ে।
 
আর রাজকন্যার বিয়ে দিয়ে দিল সাহসী ,দয়ালু আর বুদ্ধিমান সামদ্রুপ এর সাথে। সামদ্রুপ পরবর্তীতে সে রাজ্যের রাজা হয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগল। সাহস ,দয়া উপস্থিত ,বুদ্ধি আর ভাগ্য সহায় থাকলে সব সম্ভব এই পৃথিবীতে।
 
আর তাইত সেই রাজ্যের নাম হয়ে গেল সামদ্রুপ ঝংখা। যা আজও ভুটানের এক শহর হিসাবে আছে।
 
 

Chotoder Golpo

 
Bengali Story for Kids
 

৫. আলিফ লায়লার রাজ্য

 
ছোট্ট একটা রাজ্য। আরঙ্গান। তিন দিন ধরে একটানা বাজনা বেঁজে চলেছে এই রাজ্যে। রাজপুত্র তালেবের বিয়ে আজ। পাশের রাজ্যের রাজকন্যা তায়েবার সাথে। কিন্তু বাঁধ সাধল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাদুকর ,হাজারো দৈত্য,দান আর জ্বীনদের মালিকীনজাদুকরি মালেকা হামেরীন । সে তালেবকে ভালবাসে। আরতার জন্যই তালেব-তায়েবার বিয়েতে এই বাঁধা । তীব্র ক্ষোভে আগুনের মতো রূপ ধারন করল মালেকা হামেরীন । ছোট দৈত্যদের সর্দার সমগ্র দৈত্যদের প্রধান রাজা চিমাদেবের বিশস্ত সহচর জাররাদেবকে স্মরন করলেন মালেকা হামেরীন । ক্রোধে তখন তার সর্বাঙ্গ চলছে ।অগ্নীস্ফুলিঙ্গ ছড়ানো তার চোখ দুটো শুধু তালেব তায়েবার মৃত্যুদেহ দেখতে চাইছে।
 


 
-আকরম! আকরম!
 
জাদুর বিচ্ছুটা চারদিকে ঘুরিয়ে মন্ত্র পড়তে শুরু করলো হামেরীন।
 
-জাররাদেব !জাররাদেব! তোকে স্মরণ করছি। হাজার হ।শীঘ্র হাজির হ।
 
জাদু গোলকে হাত রাখলেন জাদুকরী মালেকা হামেরীন। কিছুখনের মধ্যেই চারদিকে আগুনে হুলকা ছড়িয়ে হাজির হল জাররাদেব।
 
-হে আমার মালেকীন। সমগ্র জাদুরাজ্যের সাম্রাজ্ঞী। এই অধম কে কেন ডেকেছেন। কি করতে হবে আমায়।
 
বজ্র কন্ঠে আন্তরিকতা আর প্রভু ভক্তের স্বরে বলল জাররাদেব।
 
-জাররাদেব ! প্রচন্ড প্রতাপের সাথে বলতে লাগলো মালেকা হামেরীন।
 
-তুই কি জানিস !আমার মনে আজ কিসের ঝড়ে বইছে? আমার মন আজ কি কামনা করছে? আমার দুটো চোখদুটো আজ কি দেখতে চাইছে?
 
-না মহান সাম্রাঙ্গী হামেরীন ।কি চাইছে আপনার মন !কি দেখতে চাইছে আপনারচোখ। শুধু একবার বলেন ।সেযদি হয় কোন পাথরের পাহাড়ের ধ্বংসাবশেষ,তবে সেটা আমি এক গুতোতে গুড়ো করে আপনার পায়ে এনে ফেলব ।সেটা যদি হয় কোন বিশাল দৈত্যের মাথা,আমি আমার এই দৈত্যের মাথা আমার এই তরবারীর এক আঘাতে কেটে আপনার হাতে এনে দেব।
 
– না জাররাদেব ।আমার এসব কিছুই চাইনা ।আমার দরকার রক্ত ।স্রেফ এক বদমাশ মানুষের রক্ত।
 
– কেসে বদমাশ মানুষ ?কেসে? একবার শুধু মুখ থেকে ওরনাম বের করুন। আমি এক্ষুনি ওর এমন অবস্থা করছি যে ,কোন দৈত্যদানবও ওর বিকৃত লাশ দেখে শিহরে উঠবে।
 
-তাহলে চল ।
 
হাতদুটো দিয়ে আবার জাদুর বিচ্ছুটাকে ঘুরাতেশুরু করলেন মালেকা হামেরীন। কিছুখনের গুহা ছেড়ে মধ্যে নীল আকাশ দিয়ে পেঁচার বেশে উড়তে শুরু করলো হামেরীন আর জাররাদেব।
 
বেলা দুপুরে গড়াতেই রাজকন্যার দেশে পৌছলেন রাজকুমার তালেব ।কিন্তু ততখনে পৌছেগেছে কুচক্রি হামেরীন আর জাররাদেব ।অজ্ঞতা জাররাদেবের সাথেলড়তে হলো তালেবকে ।কি ভয়ঙ্কর সে লড়াই ।জাররাদেবের এক একটা থাবায় পুরো রাজপুরী কাঁপতে শুরু করলো ।তালেব বুঝলেন শক্তিতে দানবটারসাথে পেরে উঠবেন না ওনি ।তাই বুদ্ধি খাটালেন ।তার তরবারী নিজের পিছনের মাটিতে গেড়ে দিলেন ।তখন সামনের দিক থেকে লাফিয়ে আসছে জাররাদেব ।কাছে এসে সে লাফিরে পড়তে গেল তালেবের উপরে। কিন্তু তালেব সরে গেল। আর তার পিছনে উল্টে করে বিধাঁনো তরবারীর আঘাতে মৃত্যু হলো জাররাদেবের।
 
কিন্তু তখুনি ঘটে গেল আরেক অঘটন ।পেচাবেশী হামেরীন উড়ে রাজকন্যা তায়েবার গলায় ঝুলানো বিস্ময়করন তিনটি মুক্তাযেগুলো থাকলে কোন মানুষের উপর জাদু খাটেনা,সেগুলো কেড়ে নিল ।আর তত্ক্ষনাত্ তার জাদুপ্রয়োগ করে রাজকন্যাকে একটা পুতুলেরসমান করে কাচের জাদুর কুঠুরিতে বন্দি করে ফেললেন । হা !হা ! করে হেসে উঠলো হামেরীন।
 
-তোকে আমি দুটা সুযোগ দিলাম তালেব ।তুই হয়তো তায়েবাকে ভূলে আমাকে ভালবাস আর নয়তো তিনমাসের মধ্যে এই তিনটা মুক্তা উদ্ধার করে রাজকন্যাকে বাঁচা ।নয়তোআরও ছোট হতে হতে রাজকন্যাতায়েবার এমন অবস্থা হবে যে একটা কিটও ওকে খুব সহজেই খেয়ে ফেলতে পারবে।
 
বলেই আবার বিকট ভাবে হেসেউঠলো হামেরীন ।হাসতে হাসতেই উড়ে চলে গেল সে ।কান্নার ঢল নামলো রাজপুরিতে।
Bengali Story For Kids অর্থাৎ ছোটদের গল্প গুলি পরে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন। আরও নানান ধরনের সুন্দর সুন্দর বাংলা গল্প পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।

Leave a Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now