Kojagari Lakshmi Puja Vidhi, Panchali and Brata Kotha in Bengali

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 4th, 2023 at 12:49 am

Kojagari Lakshmi Puja Vidhi, Panchali and Brata Kotha in Bengali : সকল পুজোরই কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। সেই নিয়ম মেনে পুজো করলেই ভক্তের ওপর প্রসন্ন হয় ভগবান। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর ও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে তার মধ্যে অন্যতম হল লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ ও ব্রতকথা। লক্ষ্মী পুজোয় পাঁচালী পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পাঁচালী পাঠ ও ব্রতকথা ছাড়া লক্ষ্মীপুজো সম্পূর্ণ হয় না।

 
Kojagari Lakshmi Puja Vidhi in Bengali

Kojagari Lakshmi Puja Vidhi in Bengali

মা লক্ষ্মী পূজোর প্রণালীঃ
 
প্রথমে মাথায় একটু গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে নিন। পূজার আগে মাথায় জল নিয়ে দেহ ও নারায়ণকে স্মরণ করে মন শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন। যে কোনো পূজার আগে আমাদের প্রাণশক্তির উৎস সূর্যকে জল দেওয়ার নিয়ম; কেন না, তিনিই সকল প্রাণশক্তির উৎস। এমনকী, সূর্যালোক ছাড়া শস্যও উৎপন্ন হবে না ! তাই জল দেওয়ার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদা রাখবেন। সূর্যের নাম করে সেই কুশীতে জল নিয়ে সেই তামার পাত্রে দেবেন। তারপর সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা করবেন।
 
এরপর একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন, পূজার ফুল- নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর ছিটিয়ে দেবেন। এইভাবে পূজাদ্রব্যগুলিকে শুদ্ধ করে নিতে হয়। এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গলচিহ্ন বা স্বস্তিকাচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না। ঘটে একটি আমপল্লব (যাতে বিজোড় সংখ্যায় আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরীতকী দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। ইচ্ছা করলে ঘটে ও লক্ষ্মীকে একটি করে মালাও পরাতে পারেন। এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন। 
 
লক্ষ্মী পূজা ধ্যান মন্ত্র
 
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষি তাম্।
রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
 
অর্থঃ দক্ষিণহস্তে পাশ, অক্ষমালা এবং বামহস্তে পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রীরূপা, ত্রিলোকমাতা, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বালঙ্কারভূষিতা, ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণহস্তে বরদাত্রী দেবীকে ধ্যান করি।
 
আহ্বান মন্ত্র :-
 
ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ
ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি
ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান
গৃহাণ।
 
লক্ষ্মী পূজা পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র
 
নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।
 
লক্ষ্মী পূজা প্রণাম মন্ত্র
 
নমো-বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোস্তুতে।।
 
লক্ষ্মী পূজা স্তব মন্ত্র
 
ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিঃ সহ।।
 

Laxmi Puja Panchali in Bengali

 
শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর পাঁচালি
 
দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ ।
ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস ।।
বৈকুণ্ঠেতে একাসনে লক্ষ্মী নারায়ণ ।
করিতেছে কত কথা সুখে আলাপন ।।
সৃষ্টিতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব কত কথা হয় ।
শুনিয়া পুলকিত হয় দেবীর হৃদয় ।।
অকস্মাৎ দেবর্ষি নারায়ণ স্বরে ।
আসিলেন ভক্তি চিত্তে বৈকুণ্ঠ নগরে ।।
প্রণাম করি দেবর্ষি বলেন বচন ।
মর্ত্যে দুর্ভিক্ষ মাগো কী ভীষণ ।।
ঋষি বলে মা তুমি চঞ্চলা মন ।
সর্বদা ঘোরো ভবন হতে ভবন ।।
মর্ত্যবাসী তাই দেখ কষ্ট কত পায় ।
দেখি তাহা কেমনে মম প্রাণে সয় ।।
অন্নাভাবে লোকে কত কষ্ট ভোগে ।
মরিতেছে অনাহারে কৃশকায় রোগে ।।
ধর্মাধর্ম লোকে সবে ত্যাগ করি দেয় ।
স্ত্রী কন্যা বিক্রি করে ক্ষুধার জ্বালায় ।।
দুর্ভিক্ষে হইলো শেষ মরে জীবগন ।
দয়া করে মাগো তুমি করো নিবারন ।।
এই দুর্দশা দেখি প্রাণে নাহি সয় ।
করো নিবারণ মাগো হইয়া সদয় ।।
নারদের বাক্য শুনি কহেন হরিপ্রিয়া ।
বিশ্বমাতা আমি দেবী বিষ্ণুজায়া ।।
যে যেমন করে সে তেমন পায় ।
সে দোষে কর্মফল, করে হায় হায় ।।
মহামায়ার স্বরূপে নারী সত্যবচন ।
মর্ত্যবাসী না মানে এই কথন ।।
সদাচার কুল শীল দিয়া বিসর্জন ।
ঘরের লক্ষ্মীকে করে সদা বর্জন ।।
এমন মনুষ্যজাতি মহাপাপ করে ।
কর্ম দোষে লক্ষ্মী ত্যাজে তাহারে ।।
নারীর পরম গতি স্বামী ভিন্ন কেবা ।
ভুলেও না করে নারী পতি পদসেবা ।।
যথায় স্বেচ্ছায় ঘুরিয়া বেড়ায় ।
গুরুজনে নানা কটুবাক্য শোনায় ।।
সর্বদা হিংসা করে না মানে আচার ।
হিংসাতে তার মজে সংসার ।।
ছড়া নাহি দেয়, প্রভাতকালে ।
লক্ষ্মী সে স্থান ছাড়িয়া চলে ।।
অতিথি যদি উপস্থিত হয় দ্বারে ।
দূর দূর করি তারায় তাহারে ।।
যেবা গুরু, ব্রাহ্মণ দেখি ভক্তি নাহি করে।
মম নিবাস কভু নহে সেই ঘরে ।।
এঁয়োতির চিহ্ন সিঁদুর শাঁখা না দেয় ।
বাসি কাপড়ে যথা তথা বেড়ায় ।।
 
Read More :
 
স্নান নিত্য নাহি করে যে মনুষ্য গণ ।
ত্যাজিয়া তাহারে, করি অন্যত্র গমন ।।
তিথি ভেদে যেবা নিষিদ্ধ দ্রব্য খায় ।
হই না কভু তার ওপর সহায় ।।
যে মনুষ্য ভক্তিভাবে একদশী না করে ।
কদাপি নাহি থাকি তাহার ঘরে ।।
উচ্চহাসি হাসিয়া যে নারী ঘোরে ।
গুরুজন দেখি ঘোমটা না টানে ।।
বয়োজ্যেষ্ঠ দেখি যারা প্রণাম না করে ।
সন্ধ্যাকালে ধূপ দীপ নাহি দেয় ঘরে ।।
ঠাকুর দেবতা আদি কভু নাহি পূজে ।
সাধু সন্ন্যাসী দেখি হাসাহাসি করে ।।
এমন নারী যে গৃহেতে বসতি রয় ।
লক্ষ্মী ত্যাজে তাহাকে জানিবে নিশ্চয় ।।
এত বলি লক্ষ্মী দেবী বলেন মুনিকে ।
কর্মদোষে মনুষ্য নিজ ফল ভোগে ।।
ঋষি বলে মাগো তুমি জগতজননী ।
সন্তান কে করো ক্ষমা হে সনাতনী ।।
দূর করি দাও মা ভীষণ মহামার ।
বর দিয়ে জীবেরে করহ নিস্তার ।।
এই বলি বিদায় হইলেন মহামুনি ।
চিন্তিত হইয়া কহেন নারায়ণী ।।
কহ কহ কৃপাময় প্রভু নারায়ণ ।
কিরূপে নিষ্কৃতি পাইবে জীবগণ ।।
লক্ষ্মীদেবীর কথা শুনি কহেন জনার্দন ।
শুন দেবী মন দিয়া আমার বচন ।।
তুমি যে পরমা প্রকৃতি দেবী ভগবতী ।
তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাসৃষ্টি ।।
যে জন গুরুবারে লক্ষ্মী ব্রত করে ।
সুখে জীবন কাটাইবে তোমার বরে ।।
লক্ষ্মী কভু নাহি ছাড়িবে তাহারে ।
জীবনান্তে আসিবে সে বৈকুণ্ঠ নগরে ।।
মর্ত্যে গিয়া কর এই ব্রতের প্রচার ।
তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাচার ।।
গমন করেন দেবী শুনি হরির কথা ।
পেঁচকে মর্ত্যে আইলেন জগতমাতা ।।
অবন্তী নামক নগরী পাশে এক বন ।
তথা আসি মা কমলা উপস্থিত হন ।।
হেথায় ছিল ব্যবসায়ী ধনেশ্বর রায় ।
অগাধ ধন, চৌদ্দ কূল বসি খায় ।।
পত্নী সুমতি ছিল সাত কুমার ।
সংসার ছিল তার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ।।
যথাকালে ধনেশ্বর করিল গমন ।
বিধবা হইল পত্নী- ভাগ্যের লিখন ।।
সর্বদা কলহ করে সপ্ত বধূ গণ ।
মারমার কাটকাট হইত সর্বক্ষণ ।।
সংসার রচিল যে যার মতো যার ।
সুখের পরিবার হইল ছারখার ।।
এই দুঃখে ধনেশ্বর পত্নী ভীষণ শোকে ।
বনে গমন করিল জীবন ত্যাজিতে ।।
সেই বনে বৃদ্ধা বসি করে হায় হায় ।
এই বুঝি লেখা ছিল বিধাতার খাতায় ।।
এই দেখি হরিপ্রিয়া বৃদ্ধা রূপ ধরে ।
ছদ্মবেশে দেখা দিলেন ধনেশ্বর ভার্যারে ।।
দেবী কহেন কে তুমি দেহ পরিচয় ।
কোথা হতে আসিলে বলোহ আমায় ।।
স্থান বড় ভয়ানক নির্জন বন ।
হেথা হোথা নানা জন্তু করে বিচরণ ।
বুড়ি বলে মাগো পোড়া কপাল আমার ।
ভয় আমি করি না আর মরিবার ।।
এত বলি বৃদ্ধা সব কথা কন ।
শুনিয়া দুঃখিত হইল কমলার মন ।।
বৃদ্ধা প্রতি বিষ্ণুপ্রিয়া কহেন বচন ।
আত্মহত্যা মহাপাপ শাস্ত্রের লিখন ।।
যাও তুমি গৃহে ফিরি করো লক্ষ্মী ব্রত ।
অবশ্যই আসিবে সুখ পূর্বের মতো ।।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগন ।
ব্রতের সকল কিছু করিবে আয়োজন ।।
আসন পাতি তাহে লক্ষ্মী মূর্তি বসাইবে ।
আম্র পল্লব, গোটা ফলে ঘট সাজিবে ।।
বিবিধ পুস্প, বিল্বপত্র নৈবেদ্য সকল ।
দিবে কলা, শর্করা আতপ তণ্ডুল ।।
একটি করে মুদ্রা রাখিবে লক্ষ্মী ঘটে ।
একমুষ্টি তণ্ডুল জমাইবে লক্ষ্মী ভাঁড়ে ।।
আম্র পল্লবে করিবে সিঁদুর তৈলে গোলা।
চাল বাটি লক্ষ্মী সম্মুখে দিবে আলিপনা ।।
ধূপ দীপ জ্বালি সম্মুখে রাখিবে ।
আসন পাতি লক্ষ্মী পূজায় বসিবে ।।
একমনে পূজা দিবে লক্ষ্মী নারায়ণ ।
পূজাশেষে ব্রত কথা করিবে পঠন ।।
না করিয়ো পূজায় ঘণ্টা বাদন ।
পূজান্তে উলু দিবে মিলি এয়োগন ।।
এই ভাবে যেই জন লক্ষ্মী ব্রত করে ।
কোন দুঃখ তার আর নাহি রহিবে ।।
শুনিয়া বৃদ্ধা কহিল আনন্দিত মনে ।
কে মা তুমি কহো পরিচয় দানে ।।
এই শুনি লক্ষ্মী দেবী স্ব মূর্তি ধরে ।
ভক্তি চিত্তে বৃদ্ধা কাঁদে ভূমি ওপর পড়ে ।।
লক্ষ্মী বলে যাহ তুমি নিজের ভবন ।
গুরুবারে আমাকে পূজিবে নিয়ম মতোন ।।
এত বলি বিদায় লইল সাগর
নন্দিনী ( মা লক্ষ্মী সাগর রাজার কন্যা ) ।
ঘরে ফিরি আসিল ধনেশ্বর পত্নী ।।
বধূ গনে কহিল লক্ষ্মীর ব্রতের কথন ।
গুরুবারে লক্ষ্মী ভজে সপ্ত বধূ গণ ।।
ধীরে ধীরে হইল সুখের ভবন ।
যেমন আছিল ঘর পূর্বের মতোন ।।
সপ্ত ভাই মিলে মিশে কলহ বিসর্জন ।
সংসার হইল যেন স্বর্গের দেবভবন ।।
এই দেখি এক রমণী পূজা মানত করে ।
স্বামী চিররোগী, উপার্জন হীন সংসারে ।।
ভক্তি ভরে সেই নারী লক্ষ্মী দেবী ভজে ।
হরিপ্রিয়ার কৃপায় তাহার দুঃখ সকল ঘোচে ।।
রোগ ছাড়ি তার স্বামী সুস্থ হইল।
এই ভাবে সকল দুঃখ তার ঘুচিল ।।
আনন্দে দিনে জন্মিল তাঁহাদের সুন্দর নন্দন ।
লক্ষ্মীর কৃপায় তার বাড়িল ধন জন ।।
এই ভাবে লক্ষ্মী ব্রত ছড়ায় দেশ দেশান্তরে ।
সকলে শুনি লক্ষ্মী দেবীর পূজা করে ।।
লক্ষ্মী কৃপায় সকলের দুঃখ চলি যায় ।
কমলার কৃপা সকলের ওপর বর্ষায় ।।
একদিন লক্ষ্মী পূজা করে বামাগন ।
আসিল এক বণিক তাঁহাদের সদন ।।
বণিক কহে কোন দেবী কি পরিচয় ।
করিলে পূজা দেবীর, কি ফল হয় ।।
বামারা বলে ইনি লক্ষ্মী দেবী জগত জননী ।
লক্ষ্মী কৃপায় সুখে রহে ব্রতিনী ।।
গুরুবারে যেই জন লক্ষ্মী পূজা করে ।
অবশ্যই থাকিবে সুখে কমলার বরে ।।
এই বাক্য শুনে হাসে বণিক মহাশয় ।
মানিনা এই সত্য তব কথায় ।।
কপালে যদি না থাকে ধনের লিখন ।
কীরূপে দিবে লক্ষ্মী বর- ধন- জন ।।
শুধু শুধু লক্ষ্মী পূজা করি কী হয় ।
বৃথা কাটাইতেছ কমলা পূজায় ।।
গর্বে ভরা বাক্য লক্ষ্মী সইতে নারে ।
ধীরে ধীরে মা কমলা ছাড়িল তাহারে ।।
ঝড় উঠি তার নৌকা জলে ডোবে ।
ধন জন আদি গেল নানা রোগে ভোগে ।।
মড়কে রোগে তার গৃহ হইল ছারখার ।
ভিখারি হইয়া বণিক ঘোরে দ্বারে দ্বার ।।
এককালে সে থাকিত রাজার হালে ।
আজ সে ভিখারী, পথে কষ্টে চলে ।।
এই ভাবে বহু দেশ ঘোরে সদাগর ।
একদিন আইলো সে অবন্তী নগর ।।
সেই স্থানে ব্রত করে যতেক বামাগনে ।
বসি তারা মন দেয় লক্ষ্মীর ভজনে ।।
এই দেখি পূর্ব কথা হইল স্মরণ ।
এই স্থানে দেবীরে করিছে অবমানন ।।
সেই পাপে সব ধ্বংস হইলো তার ।
ভূমিতে লোটাইয়ে সদাগর কান্দে বারবার ।।
এই স্থানে করেছি মাগো বহু অহঙ্কার ।
সেই পাপে সব কিছু হইল ছারখার ।।
ধন গর্বে মত্ত হয়ে করিনু অবহেলা ।
সেই অপরাধে মা তুমি মোরে ত্যাজিলা ।।
ক্ষুধার জ্বালায় মাগো ঘুরি দেশ দেশান্তরে ।
ধন- জন- আত্মীয় গেলা আমাকে ছেড়ে ।।
তুমি মাতা দয়াময়ী বিষ্ণু বক্ষ বিলাসিনী ।
তুমি মাতা ভগবতী জগত পালিনী ।।
তুমি যারে রক্ষা করো কিসে তার ভয় ।
তুমি যারে ত্যাজি যাও, সে সব হারায় ।।
তুমি যারে কৃপা কর, সেই ধন্য হয় ।
তোমার আশিসে মাগো সর্ব সিদ্ধি হয় ।।
এই ভাবে সদাগর লক্ষ্মী স্তব করে ।
কমলার কৃপা দৃষ্টি বণিকের উপর পড়ে ।।
লক্ষ্মীর কৃপায় বণিক সব ফিরি পায় ।
গৃহে ফিরি মন দেয় লক্ষ্মীর পূজায় ।।
লক্ষ্মীর কৃপায় তাহার ধন জন বাড়ে ।
এই ভাবে ব্রত প্রচার হয় দেশ দেশান্তরে ।
এই ভাবে সকলে লক্ষ্মী পূজা করে ।
ধনে জনে বাড়িল কমলার বরে ।।
খাদ্য ধন জন বাড়িল লক্ষ্মীর কৃপায় ।
হরি হরি বল তুলিয়া হস্ত দ্বয় ।।
যেই জন ভক্তি ভরি লক্ষ্মী পূজিবে ।
অবশ্যই তাহার দুঃখ সকল ঘুচিবে ।।
যে পড়ে ব্রত কথা, আর যেবা করে শ্রবণ ।
অবশ্যই পাইবে সে মা লক্ষ্মীর চরণ ।।
ব্রত কথা শুনিবে অবশ্যই ভক্তি মনে ।
লক্ষ্মীর কৃপায় বাড়িবে ধনে জনে ।।
জয় জয় ব্রহ্মময়ী, মা নারায়ণী ।
তোমার কৃপায় শেষ করিনু গ্রন্থ খানি ।।
 

Kojagari Laxmi Puja Brata Katha in Bengali 

 
শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর ব্রতকথা
 
শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন।
মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।
বৈকুণ্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।।
হেনকালে বীণা হাতে আসি মুনিবর।
হরিগুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।।
গান সম্বরিয়া উভে বন্দনা করিল।
বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।।
মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়।
কিবা মনে করি মুনি আসিলে হেথায়।।
কহে মুনি তুমি চিন্ত জগতের হিত।
সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।।
সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ।
বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।।
লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মুনিবর।
কহিতে লাগিলা তারে জুড়ি দুই কর।।
অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান।
মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।।
সেথায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ।
দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।।
রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়।
ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।।
অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে।
স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে।।
স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার।
সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।।
তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী।
সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।।
স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে।
তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে?
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা।
কহিলেন মুনি প্রতি দোষ দাও বৃথা।।
নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ।
অকারণে মোর প্রতি কর অনুযোগ।।
শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়।
মম অংশে জন্ম লয় নারী সমুদয়।।
তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে।
তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে।।
লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে।
কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে।।
কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া।
দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।।
মুনির বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল।
মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।।
নারীদের সর্বদুঃখ যে প্রকারে যায়।
কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।।
শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি।
কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি।।
প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে।
করিবে তোমার ব্রত ভক্তিযুক্ত মনে।।
নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন।
ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।।
মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী।
দেখিলেন বনমধ্যে বৃদ্ধা এক বসিয়া আপনি।।
সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে।
কহ মাগো কি হেতু এ ঘোর কান্তারে।।
বৃদ্ধা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী।
কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।।
পতি-পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর।
এখন সব ছিন্নভিন্ন যাতনাই সার।।
যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন।
ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।।
নারায়ণী বলে শুন আমার বচন।
আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।।
যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত।
আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ।
করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।।
কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন।
মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।।
জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা।
আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।।
আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান।
সিঁদুর গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।।
ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে।
শুনিবে পাঁচালি কথা দূর্বা লয়ে হাতে।।
একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ।
সতত লক্ষ্মীর মূর্তি করিবে চিন্তন।।
ব্রত শেষে হুলুধ্বনি দিয়ে প্রণাম করিবে।
এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে।।
দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়।
দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।।
পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে।
ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দুই জনে।।
অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা।
স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।।
লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর হৈল তার।
নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।।
কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়।
হইল সংসার তার সুখের আলয়।।
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে
ক্রমে প্রচারিত হল দেশ দেশান্তরে।।
এই ব্রত করিতে যেবা দেয় উপদেশ।
লক্ষ্মীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।।
এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস।
লক্ষ্মীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।।
পরিশেষে হল এক অপূর্ব ব্যাপার।
যে ভাবে ব্রতের হয় মাহাত্ম্য প্রচার।।
বিদর্ভ নগরে এক গৃহস্থ ভবনে।
নিয়োজিত বামাগণ ব্রতের সাধনে।।
ভিন দেশবাসী এক বণিক তনয়।
আসি উপস্থিত হল ব্রতের সময়।।
বহুল সম্পত্তি তার ভাই পাঁচজন।
পরস্পর অনুগত ছিল সর্বক্ষণ।।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়।
বলে এ কিসের ব্রত কিবা ফলোদয়।।
বামাগণ বলে শুনি সাধুর বচন।
লক্ষ্মীব্রত করি সবে সৌভাগ্য কারণ।।
সদাগর শুনি ইহা বলে অহঙ্কারে।
অভাবে থাকিলে তবে পূজিব উহারে।।
ধনজন সুখভোগ যা কিছু সম্ভব।
সকল আমার আছে আর কিবা অভাব।।
কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন।
হেন বাক্য কভু আমি না করি শ্রবণ।।
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা।
নানা দ্রব্যে পূর্ণ তরি বাণিজ্যেতে গেলা।।
গর্বিত জনেরে লক্ষ্মী সহিতে না পারে।
সর্ব দুঃখে দুঃখী মাগো করেন তাহারে।।
বাড়ি গেল, ঘর গেল, ডুবিল পূর্ণ তরি,
চলে গেল ভ্রাতৃভাব হল যে ভিখারী।।
কি দোষ পাইয়া বিধি করিলে এমন।
অধম সন্তান আমি অতি অভাজন।।
সাধুর অবস্থা দেখি দয়াময়ী ভাবে।
বুঝাইব কেমনে ইহা মনে মনে ভাবে।।
নানা স্থানে নানা ছলে ঘুরাইয়া ঘানি।
অবশেষে লক্ষ্মীর ব্রতের স্থানে দিলেন আনি।।
মনেতে উদয় হল কেন সে ভিখারী।
অপরাধ ক্ষম মাগো কুপুত্র ভাবিয়া।।
অহঙ্কার দোষে দেবী শিক্ষা দিলা মোরে।
অপার করুণা তাই বুঝালে দীনেরে।।
বুঝালে যদি বা মাগো রাখগো চরণে।
ক্ষমা কর ক্ষমাময়ী আশ্রিত জনেরে।।
সত্যরূপিনী তুমি কমলা তুমি যে মা।
ক্ষমাময়ী নাম তব দীনে করি ক্ষমা।।
তুমি বিনা গতি নাই এ তিন ভুবনে।
স্বর্গেতে স্বর্গের লক্ষ্মী ত্রিবিধ মঙ্গলে।
তুমি মা মঙ্গলা দেবী সকল ঘরেতে।
বিরাজিছ মা তুমি লক্ষ্মী রূপে ভূতলে।।
দেব-নর সকলের সম্পদরূপিনী।
জগৎ সর্বস্ব তুমি ঐশ্বর্যদায়িনী।।
সর্বত্র পূজিতা তুমি ত্রিলোক পালিনী।
সাবিত্রী বিরিঞ্চিপুরে বেদের জননী।।
ক্ষমা কর এ দাসের অপরাধ যত।
তোমা পদে মতি যেন থাকে অবিরত।।
শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ট তারা পরমা প্রকৃতি।
কোপাদি বর্জিতা তুমি মূর্তিমতি ধৃতি।
সতী সাধ্বী রমণীর তুমি মা উপমা।।
দেবগণ ভক্তি মনে পূজে সবে তোমা।।
রাস অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুমি রাসেশ্বরী।
সকলেই তব অংশ যত আছে নারী।।
কৃষ্ণ প্রেমময়ী তুমি কৃষ্ণ প্রাণাধিকা।
তুমি যে ছিলে মাগো দ্বাপরে রাধিকা।।
প্রস্ফুটিত পদ্মবনে তুমি পদ্মাবতী।
মালতি কুসুমগুচ্ছে তুমি মা মালতি।।
বনের মাঝারে তুমি মাগো বনরাণী।
শত শৃঙ্গ শৈলোপরি শোভিত সুন্দরী।
রাজলক্ষ্মী তুমি মাগো নরপতি পুরে।
সকলের গৃহে লক্ষ্মী তুমি ঘরে ঘরে।
দয়াময়ী ক্ষেমঙ্করী অধমতারিণী।
অপরাধ ক্ষমা কর দারিদ্র্যবারিণী।।
পতিত উদ্ধার কর পতিতপাবনী।
অজ্ঞান সন্তানে কষ্ট না দিও জননী।।
অন্নদা বরদা মাতা বিপদনাশিনী।
দয়া কর এবে মোরে মাধব ঘরণী।।
এই রূপে স্তব করি ভক্তিপূর্ণ মনে।
একাগ্র মনেতে সাধু ব্রত কথা শোনে।।
ব্রতের শেষে নত শিরে করিয়া প্রণাম।
মনেতে বাসনা করি আসে নিজধাম।।
গৃহেতে আসিয়া বলে লক্ষ্মীব্রত সার।
সবে মিলি ব্রত কর প্রতি গুরুবারে।।
বধূরা অতি তুষ্ট সাধুর বাক্যেতে।
ব্রত আচরণ করে সভক্তি মনেতে।।
নাশিল সাধুর ছিল যত দুষ্ট সহচর।
দেবীর কৃপায় সম্পদ লভিল প্রচুর।।
আনন্দে পূর্ণিত দেখে সাধুর অন্তর।
পূর্ণতরী উঠে ভাসি জলের উপর।।
সাধুর সংসার হল শান্তি ভরপুর।
মিলিল সকলে পুনঃ ঐশ্বর্য প্রচুর।।
এভাবে নরলোকে হয় ব্রতের প্রচার।
মনে রেখ সংসারেতে লক্ষ্মীব্রত সার।।
এ ব্রত যে রমণী করে এক মনে।
দেবীর কৃপায় তার পূর্ণ ধনে জনে।।
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন।
ইহলোকে সুখী অন্তে বৈকুণ্ঠে গমন।।
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ই মধুর।
অতি যতনেতে রাখ তাহা আসন উপর।
যে জন ব্রতের শেষে স্তব পাঠ করে।
অভাব ঘুচিয়া যায় লক্ষ্মীদেবীর বরে।।
লক্ষ্মীর পাঁচালি কথা হল সমাপন।
ভক্তি করি বর মাগো যার যাহা মন।।
সিঁথিতে সিঁদুর দাও সব এয়োমিলে।
হুলুধ্বনি কর সবে অতি কৌতুহলে।।
দুই হাত জোড় করি ভক্তিযুক্ত মনে।
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে।।
 

Leave a Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now