Bangla Sad Valobashar Golpo | ভালোবাসার গল্প

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 4th, 2023 at 12:50 am

আজকের Bangla valobashar golpo টির নাম – “মন্দাকিনীর প্রেমকাহিনী” গল্পের প্রধান চরিত্রে মন্দাকিনী ও ডাক্তার চ্যাটার্জী, বিষয় – রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প, Bengali True Love Story এবং Bangla Sad Love Story অথবা Bengali Jokes আরও পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না। 


valobashar golpo

Valobashar Golpo Kotha – প্রেমের গল্প কথা

আজকের গল্প – মন্দাকিনীর প্রেমকাহিনী


প্রেমের এমন একটা অবাধ্য ভাব আছে, তার জন্য বিষম আয়ােজন করে প্রতীক্ষা করলে তার দর্শন মেলা দায়, কিন্তু যখন তার আগমন কেবলমাত্র অপ্রত্যাশিত নয়, অসুবিধাজনকও বটে, তখন সে ত্রিভুবন জুড়ে বসে।
মন্দাকিনীও এই ধরনের একটা ঘটানােয় জড়িত হয়েছিল। যতদিন পুষ্পিত লতার মতন তার জীবনে প্রথম যৌবনের সুরভি লেগেছিল, এবং মর্মরিত বেণুকুঞ্জে কোকিল-কণ্ঠের মতন তার মনের কোণে অনাগত বনমালীর বাঁশরি বেজেছিল, ততদিন ধরে সে কল্পনানেত্রে তার প্রিয়তমের অতি প্রত্যক্ষ মূর্তি দেখতে পেত। 




বেশ দীর্ঘ গৌরবর্ণ দেহখানি, ভ্রমরকৃয় কোঁকড়া চুল, হরধনুকে হার মানিয়ে দেয় ভূ-যুগল, অধরােষ্ঠে কোমল কঠিনে অপূর্ব সমাবেশ কিবা বঙ্কিম গ্রীবা, বাঁশির মতন নাসিকার ডান পাশে নিচের দিকে ভুবন ভােলানাে ছােট একটি কালাে কুচকুচে তিল, দাড়ি-গোঁফ কামানাে। কণ্ঠস্বরে কখনও বজ্রনির্ঘোষ শােনা যায়, কখনও বা কলনাদিনী স্রোতস্বিনীর কথা মনে পড়ে। পরিধানে কখনও বা সাদা ধুতি চাদর, কখনও বা সুবিন্যস্ত গ্রে-রঙের পাশ্চাত্য বেশ শােভা পায়।
এই আশ্চর্য ব্যক্তি মানসলােকে হয় জ্যোৎস্নানিশীথে বিজন বেণুকুঞ্জে কিম্বা বর্ষা-সন্ধ্যায় বসবার ঘরের স্তিমিত দীপালােকে মন্দাকিনীর কানে-কানে কত যে রােমাঞকর মধু-বর্ষণ করত তার লেখাজোখা নেই।

অবশেষে একদিন মন্দাকিনীর ঈষৎ কম্পমান বাঁ হাতখানা ধীরে-ধীরে নিজের করকমলে তুলে নিয়ে, নীল মখমলের ছােট বাক্স খুলে নক্ষত্রোজ্জ্বল এক হীরের আংটি পরিয়ে দিত এবং মন্দাকিনীর রক্তিম অধরে…এর বেশি কল্পনা করবার ক্ষমতা মন্দাকিনীর ছিল না। তাছাড়া এতেই তার এমন শিহরণ লেগে যেত যে, সে রাত্রে চোখে ঘুম আসত না। বলা বাহুল্য এই সকল রােমাঞ্চকর ঘটনাবলীর মধ্যে মন্দাকিনীর পরনে থাকত সুযােগ্য নীল শাড়ি, সােনালী তার আঁচল।

দুঃখের বিষয় এমন সুপ্রকাশ যার রূপ, সে ব্যক্তি চিরকাল মন্দাকিনীর আগ্রহাধীর নয়নযুগলকে ফাঁকি দিয়ে যেতে লাগল। কত যে বর্ষা-সন্ধ্যা, কত যে জ্যোৎস্নাময় নিশীথ বিফল হয়ে যেতে লাগল তার কোন হিসাবে নেই। শেষ পর্যন্ত মন্দাকিনী তার দুর্লভ আদর্শটিকে ধরা-ছোঁয়ার গােচর করবার দূরাশায় তাকে অনেকটা খর্ব করেও এনেছিল। তার এমন সুঠাম দেহের দৈর্ঘ্য থেকে দু-চার ইঞ্চি ছেটে দিয়ে, তার ওই উজ্জ্বল গৌর কান্তিতে একটুখানি শ্যামলের ছােপ ধরিয়ে, তার দাড়িকে শেষ পর্যন্ত না মঞ্জুর করে, (কারণ কে না জানে যে ভক্তির রাজ্যে যাই হােক প্রেমের রাজ্যে দাড়ি অচল) তার গোঁফ সম্বন্ধে একটু উদার হয়ে তাকে প্রায় সাধারণত্বের কোঠায় এনে ফেলেছিল। তবু তার দিশা পাওয়া যায় না। 

একটি সুকোমল নারীহৃদয়ে তার জন্য এত সম্ভার রক্ষিত আছে, তবু যদি সে নরাধম অনুপস্থিত থাকে তবে সে কোনরকম সহানুভূতিরও অযােগ্য একথা জেনে অবশেষে একদা নির্দয়ভাবে স্বহস্তে তাকে প্রিয়তমের সিংহাসন থেকে বিদায় দিল। এমন কি মনে মনে তাকে আহাম্মক আখ্যা দিতেও কুণ্ঠাবােধ করলে না। তবু মাঝে-মাঝে নির্জন নিশীথে তার মনে সংশয়ের দোলা লাগত, আর ওই শূন্য সিংহাসনখানা অন্ধকারে হাহাকার করত।
সময় কিন্তু লঘুপদে চলে যেতে লাগল আর মন্দাকিনীর যৌবন থেকে একটু একটু করে মধু চুরি করে নিতে লাগল। মন্দাকিনী এতদিন অলস ছিল না, ধীরে-ধীরে অনেক বিদ্যাকে অনেক ললিতকলাকে আয়ত্ত করে ফেলেছিল।

তার কাঁচা-রূপেরা সাজ আভরণ আস্তে আস্তে অভিজ্ঞ সুরুচির পরিচয় পাওয়া গেল। সে রূপসীও নয়, কুরূপাও নয়। দুইয়ের মাঝামাঝি এমনটি, যার মাধুর্য দেখামাত্র চোখে পড়ে না, কিন্তু মন দিয়ে খুঁজলে সুপ্রকাশ হয়ে পড়ে।
যতদিন যেতে লাগল তার কথায়, ভঙ্গিতে, সজ্জায়, এমন কি কবীর রচনাতেও একটা তীব্রতা প্রকাশ পেল, যার মাধুর্য মধুরের চেয়ে তিক্ত বেশি। রৌদ্রবর্ণ বহুমূল্য সুরা যেমন বেশিদিন রেখে দিলে তিতিয়ে যায়। আর নিয়ত তার কানে বাজতে লাগল কালের রথের চাকার ধ্বনি।




আরও পড়ুনঃ গল্পঃ নেকী 

জীবনটাকে যখন শূন্য বােধ হবার আশঙ্কা হল, মন্দাকিনীরও সুবুদ্ধি হয়। হৃদয়ের সমস্ত অপ্রার্থিত প্রেমরাশি একজন অনাগত মানুষের চরণ থেকে অপসারিত করে সে সহজে আয়ত্ত বস্তুর উপর ন্যস্ত করল। বস্তুর পােষামানা ভাবটা তাকে নিগুঢ়ভাবে আকর্ষণ করতে লাগল। যে সকল বস্তুকে কামনা করলে, এবং যে-ভাবে কামনা করলে অন্তঃকরণ স্থূল ও বৈষয়িক হয়ে যায়, তারা সে ভাবে মন্দাকিনীকে লুব্ধ করল না। সে ভালবাসল প্রাচীন ও আধুনিক চিত্র, পুঁথি, বাসন, সুচিকর্ম, নকশা-দেওয়া হাতে বােনা পর্দা, মিনে-করা চৌকি এমন আরও কত কী।

সৌন্দর্যের এমন একটা মােহিনী শক্তি আছে যে, যে তাকে অর্থ দিয়ে কেনে তাকেও সে নক্ষত্রলােকে নিয়ে যায়। যা কিছু সুন্দর, সৌন্দর্যই তার সার্থকতা। তার আরও কোনও গুণের প্রয়ােজন নেই। সে নয়নানন্দ। তার কাছে আর কিছু প্রত্যাশা করলে তার প্রাণময় পরিপূর্ণ রূপরাশি অর্থহীন বিলাসে পরিণত হয়ে যাবার আশঙ্কা আছে। যে কেউ সৌন্দর্য উপভােগ করতে জানে না। কিন্তু মন্দাকিনী জানত। তাই তার বারবার হতাশ হয়ে-যাওয়া হৃদয় মরুভূমি না হয়ে গিয়ে নিত্য নূতন রসের উৎসের সন্ধান পেল।

সৌন্দর্যের উপাসকের যে অনাবিল অবসর ও অজস্র অর্থের প্রয়ােজন, যে দুষ্ট-শনি মন্দাকিনীর পিছু নিয়েছিল, সে একদিন সে সকল হরণ করে নিল। মন্দাকিনী সৌন্দর্যের উপাসনা তখনকার মতন বন্ধ করে দিয়ে, সৌন্দর্যের সামগ্রীগুলােকে এবাড়ি-ওবাড়ি বাক্সবন্দী করে কেমন করে যেন এক মাস্টারী জোগাড় করে দার্জিলিং চলে গেল। দার্জিলিংয়ে গুছিয়ে বসলে পর চারদিকে চেয়ে মন্দাকিনী দেখল হিমালয়ের কোলে-কালে রডােডেনড্রন গাছের সারি, কিন্তু তার একটিরও উদ্ধত শাখার রাঙা পুস্পস্তবকের নাগাল পাওয়া যায় না। পাহাড়ের কানা ধরে-ধরে একটির পর একটি ঝাউগাছের শ্রেণি, কিন্তু তাদের দীর্ঘ শীর্ণ ছায়াগুলি অগম্য রাজ্যে। নিচের উপত্যকার সাদা মেঘ জমেছে, সেখানে পৌছানাে অসম্ভব।

একদিকে রােদে স্নান করেছে, সেদিকে চাইলে মন গলে জল হয়ে যায় ; অন্য দিক কুয়াশাচ্ছন্ন, সেদিকে চাইলে মন জমে বরফ হয়ে যায় । কিন্তু এ সৌন্দর্য নৈর্ব্যক্তিক, একে মন্দাকিনীর সেই জয়পুরী চৌকির মতন কোলের কাছে টেনে নেওয়া যায় না। বরং একে বেশিক্ষণ দেখলে মনে একটা নিষ্কাম বৌদ্ধভাব জন্মায়।

ঠিক এই সময়, যখন জগতটা মন্দাকিনীর কাছে অকিঞ্চিৎকর হয়ে আসছিল তখন। সে এক ম্লান গােধুলির আলােতে ডাক্তার চ্যাটার্জির খুদে বাড়িখানা আবিষ্কার করল। পাহাড়ের গায়ে একটুখানি অপরিসর জমির উপর, সত্যি কথা বলতে কি, খানিকটা শূন্যমার্গে, লােহা ও ইটকাঠের উপর ধৃত হয়ে অতি বিপজ্জনক ভাবে, কায়ক্লেশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে প্রবল সাক্ষ্য দিয়ে কোনও গতিকে বাড়িটি দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে মন্দাকিনীর হৃদয় তার মায়াজাল বিস্তার করল।




একমুহূর্তে তার চোখে পৃথিবীর রঙ বদলে গেল। তার যে মন দূর বনান্তরালে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে পদাঙ্গুলির অগ্রভাগে নির্ভর করে, দুই পক্ষ বিস্তার করে বিহঙ্গের মতন উড়ে যাচ্ছিল, সে আবার পাখা বন্ধ করে কুলায়ে ফিরে এল।
চর্মচক্ষে মন্দাকিনী দেখল বহুবর্ষের বৃষ্টিধারার রঙ ওঠা, কাচে মােড়া বিবর্ণ সবুজ পর্দা ঘেরা, ছােট দোতলা বাড়ি। ভাঙা কাচের অন্তরালে দৃশ্যমান ধুলিমলিন মনােমমাহিনী কাঠের সিড়ি। পশ্চিমদিকের ঝাউগাছ তাদের আলম্বিত ছায়াগুলিকে দেওয়ালের উপর ফেলছে। 

সামনের শান-বাঁধানাে জমির ধারে-ধারে ক্রিস্যান্থিমাম গাছ, জেরােনিয়াম গাছ, আর তাদের পর্দাপ্রান্তে প্রিমরােজ ও ভায়ােলেট। কোথাও একটি ফুল ফোটেনি এবং কখনও ফুটবে কিনা সন্দেহ। জনমানুষের সাড়া নেই।
এই শূন্য বাড়িখানা মন্দাকিনীর হৃদয়কে এক নিমেষে গ্রাস করল। সে তার মাস্টারনীসুলভ গাম্ভীর্য ভুলে গিয়ে গেট খুলে অনাধিকার প্রবেশ করল। এবং সেরা অমার্জনীয়ভাবে পায়ের আঙুলের উপর দাঁড়িয়ে ছেড়া পর্দার ফাক দিয়ে ঘরের ভিতর দেখল গদিমােড়া প্রাচীন ও সুশ্রী আসবাবে ধুলাে জমেছে।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ জল পরী 

তারপর ওই বাড়ি তাকে যাদু করল। অনেকদিন পর সে তার মিনে করা বাসন ইত্যাদির দুঃখ ভুলে গেল। সমস্ত দিনের কর্মব্যস্ততা অসহ্য মনে হত। বিকেলবেলা ওই রঙ-ধােওয়া বাড়ির কাছে সে নিজেকে খুঁজে পেত।
দিনের পর সপ্তাহ ও সপ্তাহের পর মাস এইভাবে গড়িয়ে গেল। মন্দাকিনী মনে মনে বাড়িখানাকে মেজে-ঘষে ফেলল, পুরনাে সবুজ পর্দাগুলি বােপর বাড়ি পাঠিয়ে নতুন গাের গােলাপী রঙেরা পর্দা লাগাল। প্রাচীন আসবাবের ধুলাে মুছল, বাগানটির সংস্কার করে অনেক যত্নে সেখানে ফুল ফোটাল। এমন কি কালাে চীনামাচির চ্যাপ্টা ফুলদানিতে ফুল সাজাল।

হঠাৎ একদিন মন্দাকিনী মনে মনে একটা বেহিসাবী কাজ করে ফেলল। মনগড়া অপরূপ এক দাঁড় করানাে বিজলী বাতি কিনে ফেলল, কোথায় তাকে মানাবে ভেবে মনে বড় অশান্তি অনুভব করল। মনস্থির করবার জন্য বিকেলবেলা সেখানে গিয়ে গেটটা খুলে ঢুকেই পটের পুতুলের মতাে থমকে দাঁড়াল।
আধ-ময়লা ছাই রঙের পেন্টালুন, গলা-খােলা নীল রঙের শার্ট আর কালাে পশমের গেঞ্জি গায়ে একজন লােক ঝাঝরি হাতে মরা ফুলগাছে জল দিচ্ছে। তার মুখের ডান পাশে প্রাচীন পাইপ এবং দেখামাত্র বােঝা যায় যে তিনদিন ক্ষৌরকর্ম হয় নি। রান্নাঘরের খােলা জানালা দিয়ে অশুদ্ধ তেলের গন্ধ ভেসে আসছে।

সেই ব্যক্তি মুখ থেকে পাইপ সরিয়ে, হাত থেকে ঝাঝরি নামিয়ে অবাক হয়ে দেখল। গেটের উপর হাত রেখে বছর ত্রিশ বয়সের একজন শ্যামবর্ণ মহিলা বেতস-লতার মত কাপছে। তাকে বিপন্ন মনে করে কাছে যেতেই সে একটু অপ্রতিভ স্বরে বলল, “আমি রােজ আসি। ডাক্তার চ্যাটার্জি বললেন, ‘বাড়ি আর বাগানের অবস্থা থেকে তার পরিচয়। পেয়েছি। তাইতে মন্দাকিনীর একটু রাগ হল এবং রােষকষায়িত নেত্রে ঝাঝরিখানা নিয়ে যে-গাছে ডাক্তার চ্যাটার্জি একবার জল দিয়েছেন তাতে আবার জল দিতে লাগল। আর ডাক্তার চ্যাটার্জি পাইপটা আবার মুখে দিয়ে প্রসন্নচিত্তে মস্ত এক গাছ-ছাঁটা কাচি তুলে নিলেন।




Love – বিশেষ করে নরনারীর চিরন্তন প্রেম যে কি আশ্চর্য জিনিস এ কে না জানে। প্রেম নিয়েই বােধহয় পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ সাহিত্য রচিত হয়েছে। প্রেমের বৈচিত্র্যও তাে কম নয়। Valobashar golpo, মিলন, বিরহ, পরকীয়া, হিংস্র বা আদিম, দেহগন্ধময়, প্লেটোনিক। দান্তে এক বিয়েবাড়িতে এক কিশােরীকে কয়েক পলক দেখে যে ফিদা হয়ে গিয়েছিলেন সেই কিশােরীর সঙ্গে তাঁর আর দেখা হয়নি, তার নাম বা পরিচয় ও জানতেন না, তবু তাকে নিয়েই Divine comedy রচনা করে ফেলেছিলেন, যা আজও কালজয়ী হয়ে বেঁচে আছে। বেঁচে আছে কালজয়ী বিয়াত্রিচেও। শরৎবাবুর devdas একরকম, আবার তারই দত্তা অন্যরকম। প্রেমের বৈচিত্র্যই তাকে এমন মহার্ঘ করে তুলেছে। এইসব নানারকম সেরা প্রেমের গল্প দিয়ে আমাদের ব্লগ টি সাজানো আছে।

এমনি করে মন্দাকিনীর মন আর মন্দাকিনীর মনােবার মাঝে এক অন্তরাল রচনা হল। ডাক্তার চ্যটার্জির মধ্যে নয়নলােভন কোনও গুণ প্রকাশ পেল না যা বিন্দুমাত্র চিত্তাকর্ষণ করে। এমন কি চিত্তাকর্ষণ করবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা পর্যন্ত দেখা গেল না। কোন সুদুর মহানগরীর ছায়াময় খ্যাতি তাঁর নামের সঙ্গে জড়িত ছিল—তার বিদায় অদম্য কৌতূহল ছাড়া মন্দাকিনীর মনে কোন ভাবান্তর ঘটল না। যৌবনে তার স্বপ্নে দেখা সেই পুরাতন প্রিয়তমের ইতিবৃত্ত মন্দাকিনীর জানা ছিল না। 

সে ধনী কি নির্ধন, কোন কাজকর্ম করে কি ঘরে বসে থাকে, এই সকল অতি তুচ্ছ তথ্য জানবার প্রয়ােজনই তার মনে আসে নি ; সে দ্বিধাবিহীন চিত্তে দর্শনমাত্রেই তার গলায় বরমাল্য দিয়েছিল। কিন্তু ডাক্তার চ্যাটার্জি সম্বন্ধে তার জিজ্ঞাসার অন্ত ছিল না। এক মাস কাল সময়, অশেষ ধৈর্য ধারণ এবং সমস্ত ছােট্ট বাগানখানার আমূল সংস্কারের পর মন্দাকিনী জানল তাঁর বয়স চল্লিশ বছর, অবিবাহিত, ধর্ম-বিরােধী, কিন্তু ভগবানের অস্তিত্ব সম্বন্ধে একটু একটু সন্দেহ আছে, দৈর্ঘ্য পাঁচফুট এগারাে ইঞ্চি, ওজনের কথা প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।
স্ত্রীজনসুলভ নানা চাতুরী অবলম্বন করে মন্দাকিনী তাঁকে দিয়ে নতুন গােলাপী পর্দা কেনালাে, দরজা-জানালা সবুজ সাদা রঙ লাগাল, গেটের পাশে চেরী গাছের কলম বসাল।


এমনি করে মন্দাকিনীর স্বপ্ন ফুলের মতন ফুটতে লাগল। এমন সময় হঠাৎ একদিন সন্ধ্যেবেলা মন্দাকিনী আবিষ্কার করল ইডেনে সর্প প্রবেশ করেছে। কে একজন অতি তরুণী, তনুদেহে সবুজ জর্জেটের শাড়ি অপরূপ করে জড়িয়ে, কালাে কোঁকড়া চুলগুলিকে মথার উপরে অভিনব রুচিতে চুড়াে করে বেঁধে, ডাক্তার চ্যাটার্জির স্কন্ধ অবলম্বন করে অতি-রক্তিম ঠোটা দুখানিকে ঈষৎ আলগা করে হিমালয় দেখছে। আর তার সর্বাঙ্গ থেকে মাধুরী ঝরে পড়ছে।

এইটুকু মাত্র। কিন্তু মন্দাকিনীর হৃদয় বিকল হল। ত্বরিত পদে সেখান থেকে সে ফিরে গেল। তার মানসচক্ষের সম্মুখে ওই মেয়েটি তার সবুজ জর্জেটের আঁচলখানা মেলে দিয়ে এমন একটা শ্যামল অন্তরাল সৃষ্টি করল যাকে ভেদ করে মন্দাকিনীর লুন্ধ চোখ আর সেই ছােট বাড়ি কি তার মালিককে দেখতে পেল না।
মন্দাকিনীর হৃদয়ে জীবনে এই প্রথম ঈর্ষা জন্ম নিল। এবং তার সবুজ চোকের কাছে সমগ্র জগতখানা বিষময় হয়ে উঠল। যেখানে কোনও দাবি নেই সেখানে নৈরাশ্যের জ্বালা সব থেকে তীব্র, কারণ তার কোনও প্রতিকার হয় না।




মন্দাকিনী নিজেকে শত-শত গঞ্জনা দিল। তার কোন অনুযােগের কারণ নেই। ডাক্তার চ্যাটার্জির বাড়িতে তাঁর যে কোনও অতিথি আসুক না কেন, মন্দাকিনীর তাতে কি? কিন্তু তবুও দার্জিলিংয়ের হিম-কুজঝটিকা একেবারে হৃদয়ে গিয়ে প্রবেশ করল। তার ব্যথিত বৃষ্টি হিমালয়ের পুঞ্জিত রূপরাশির মধ্যে কোনওদিন কোন কোমলতা খুঁজে পায় নি, আজও পেল না।
এক সপ্তাহ কাল উত্তরবিহীন আত্মজিজ্ঞাসার পর মন্দাকিনী আবার ডাক্তার চ্যাটার্জিার সমীপে উপস্থিত হল। আর তার কোন আশঙ্কা নেই, মন তার বর্ম পরেছে। নৈরাশ্যের গভীরতম অতলে যে ডুব দিয়েছে সে আবার চোখে আলাের রেখা দেখতে পায়। সে ঔদাসীন্যের চন্দ্রলােক, শীতল সুন্দর।

মন্দাকিনী তাই সাহসে বুক বেঁধে দৃষ্টিতে ত্যাগের মহিমা নিয়ে ডাক্তার চ্যাটার্জির সমীপে উপস্থিত হল। দেখল দরজা-জানলা খােলা হয় নি, ফুলগাছে জল দেওয়া হয় নি। উদাসী মনের উপর উদ্বেগের কালাে ছায়া নেমে এল। যাকে ত্যাগ করা যায় তার মঙ্গল কামনা করতে কোন বাধ্য নেই।
কম্পিত পদক্ষেপে সিড়ি দিয়ে উপরে গিয়ে মন্দাকিনী দেখল শােবার ঘরের পর্দা উঠানাে, জানলা বন্ধ, শার্সিতে ধুলাে এবং টেবিলে বই, ড্রেসিং টেবিলে বই, আরাম কেদারায় বই, আরাম কেদারার নিচে বই, পাশে বই, পিছনে বই, মােড়াতে বই, জলচৌকিতে বই এবং মেঝের গালিচাতে রাশি রাশি দিশী ও বিলেতী বই। 

স্প্রিংযুক্ত লােহার খাটে বাদামী রঙ্গের কম্বলে ঢাকা, রােগপাণ্ডুর মুখে ডাক্তার চ্যটার্জিকেও দেখা গেল। আবেগের আতিশয্যে মন্দাকিনীর বাক্যবােধ হল। ডাক্তার চ্যটার্জি হাত থেকে রিলিজিও মেডিচিখানা নামিয়ে প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকালেন।
মন্দাকিনী নির্বাক রইল। তার অভিজ্ঞতামতে মনে যার অভিমান নেই, তার স্নেহপ্রেমের লেশমাত্রও নেই। মন্দাকিনী তাই হতাশা হল। কিন্তু তার উৎকর্ণ মন মুহূর্তের মধ্যে নৈরাশ্যের চেয়ে ঘরের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে বিব্রত হয়ে পড়ল। সে আয়নার সামনে গিয়ে প্রথমে নিজের কেশ-বেশ সংস্কারেরা পরে রুমাল দিয়ে ওই আয়না সংস্কারে মনােনিবেশ করল।

শান্তকণ্ঠে ডাক্তার চ্যাটার্জি বললেন, আমার ভাগ্নী এসেছিল, তােমায় দেখাতে পারলাম না।
মন্দাকিনী এর উত্তরে কি বলবে ভেবে পেল না। ভাবল হয়তাে মন্দাকিনীর মনােভাব সম্বন্ধে ডাক্তার চ্যাটার্জির কোন কৌতূহল নেই।
হঠাৎ রুমালের আঘাতে ছােট্ট একটা জিনিস মাটিতে পড়ল। মন্দাকিনী অপ্রতিভ হয়ে তুলে নিয়ে দেখল একটা নক্ষত্রোজ্জ্বল হীরা বসানাে মেয়েদের আংটি।

চোখ তুলতেই ডাক্তার চ্যাটার্জির ঈষৎ ক্লান্ত চোখে দৃষ্টি নিবদ্ধ হল। ডাক্তার চ্যাটার্জি স্নিগ্ধ স্বরে বললেন, আমার মায়ের বিয়ের আংটি। মনে করেছি তােমার হাতে মানাবে। বলে পরিয়ে দেবার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ না করে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। মন্দাকিনী শেষ পর্যন্ত আংটিটা নিজেই পরল। আর দুটি মুক্তোর মতন দুই বিন্দু অশ্রু আস্তে-আস্তে গাল বেয়ে গড়িয়ে গেল।
ডাক্তার চ্যাটার্জির নিকোটিন-রঞ্জিত ডান হাতখানি মন্দাকিনী ক্ষীণ মণিবন্ধে নিবন্ধ হল আর সেই সঙ্গে মন্দাকিনী অনুভব করল তার হৃদয়ের সকল রুদ্ধ বাতায়নগুলি একে-একে খুলে গিয়ে সূর্যালােক আর দক্ষিণ-বাতাস যুগপৎ সেখানে প্রবেশ করল। 

@👉 Bangla Sad Valobashar Golpo টি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার এবং কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না…..           

                                

Leave a Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now