Bangla Love Story Golpo | বাংলা লাভ স্টোরি গল্প

আজকের Golpo "মুন্নি" গল্পের প্রধান চরিত্রে লাল্টু, কৃয়া ও মুন্নি, গল্পের বিষয় - রোমান্টিক ভালোবাসা, আরও Love story golpo এবং Bengali funny jokes পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।

Love story golpo


Bangla Love Story Golpo - বাংলা রোমান্টিক গল্প

আজকের গল্প - মুন্নি

দুদিন বাক্যালাপ বন্ধ থাকার পর আজ বিকেলে কৃয়া হঠাৎ অফিসে ফোন করল। নিজের চেম্বারে আমি তখন একটা জরুরী ড্রাফট নিয়ে ব্যস্ত। মন ভালাে না থাকায় যা ভাবছিলুম ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছিলুম না। সামনে স্টেননা বসে ; ওর চুল থেকে শ্যাম্পুর গন্ধ উড়ে এসে লাগছে। চোখ নামিয়ে নােট বুকে আলতাে পেনসিল ঠুকছে মেয়েটি এমন সময় ফোন বেজে উঠল।খুব স্বাভাবিক কারণে আমি বিরক্ত বােধ করলুম। কাজে বসার আগে অপারেটরকে বলে দিয়েছিলুম ফোনটোন এলে রিসিভ কোরাে না, বলে দিও, নেই। তা সত্ত্বেও লাইন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে একটা ধমক দিতে যাব, ওদিক থেকে একটা মিহি গলায় ক্ষমা চেয়ে অপারেটর বলল, ‘ইটস্ ফ্রম ইওর ওয়াইফ, ‘স্যার!ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারলুম না, ‘হ্যালাে’ বলতে সময় নিলুম। কৃয়া! কৃয়া কেন। দু’দিন কথাবার্তা বন্ধ থাকার পর এমন কি জরুরী দরকার পড়ল ওর, এখনই যে জন্যে ফোন করতে হলাে! তেমন কিছু বলার থাকলে ও বাড়িতেই বলতে পারত। কারণ, খুব ভালাে করেই জানে কৃয়া, সব কিছুর পরেও আমি বাড়ি ফিরি ; ইচ্ছায় হােক বা অনিচ্ছায়, কর্তব্য ও করণীয় যা-কিছু সবই করি। ও স্বীকার না করুক, আমি তাে জানিই আমার মধ্যে একটা ভালাে মানুষ আছে, এখনাে বেঁচে আছে।এইসব চিন্তা সত্ত্বেও আমি কেমন কাতর হয়ে পড়লুম। যতাে অসময়েই হােক, কৃয়া আমার স্ত্রী, আমাকে ফোন করছে ভেবে খুশিই হলুম আমি। আমার খুব লােভ হলাে কৃয়া কী বলে শুনি। এরপর আমাদের কথাবার্তার ধরন দেখেই আপনারা বুঝতে পারবেন আমি কী-রকম আছি। ‘হঠাৎ ফোন করতে বাধ্য হলাম। “বলাে!” ‘তােমার গড়িটা কি এখন পাওয়া যাবে? পেলে ভালাে হয়। ‘হঠাৎ। ‘নিজের দরকারে বলছি না। মিসেস নন্দী চাইছিলেন ঘণ্টা তিনেকের জন্যে। ওঁদের গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে। ‘এভাবে বলছ কেন! তােমাকে কি দিই না। ‘পারবে কি না সেটাই বলাে?” ‘আমি তাে ফিরবই কিছুক্ষণের মধ্যে। ভেবেছিলুম তােমাকে নিয়ে একবার নার্সিং হােমে যাব। ন’ কাকার অপারেশন- ‘তাহলে পারবে না ? ‘হ্যাভ পেসেন্স!” আমি প্রায় চিৎকার করে বললুম, ‘তুমি কী ভাবাে, কৃয়া, আমি একটা...' ওপাশ থেকে রিসিভার নামিয়ে রাখার কঠিন ধাতব শব্দ এলাে। শব্দটা কিছুক্ষণ আমার কানের পর্দায় লেগে থাকল, ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ল আমার মাথায় আমার শরীরের সর্বত্র। অপমানে দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে ফোনটা নামিয়ে রাখলুম আমি। জুলি তখনাে চোখ নিচু করে আমার সামনে বসে রয়েছে। কৃয়া নামটি ওর খুব চেনা। একবার অসুখে পড়ে আমি ক’দিন শয্যাশায়ী ছিলুম; সেই সময় অন্যান্যদের মতাে জুলিও মাঝে মাঝে আমার খবর নিতে যেত। কৃয়ার সঙ্গে আলাপ করত। একদিন ওর মুখে ‘কিস্লাডি’ শুনে মনে মনে খুব হেসেছিলুম আমি। সে প্রায় পাঁচ বছর আগেকার কথা। আপাতত আমার গলার স্বর শুনে জুলি নিশ্চয়ই বুঝেছে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং আমার এই ক্ষোভের কারণ কৃয়া ছাড়া আর কেউই নয়। ফলে লাজুক ও নম্র মেয়েটির মাথা আরাে নিচু হয়ে গেল। আমার ব্যাপারে ও খুবই লজ্জিত। রাগে ও উত্তেজনায় আমার কানের পাশে শিরা দৰ্দ করছিল। সহজ হবার জন্যে ঠোটে সিগারেট গুজে দেশলাই জ্বাললুম, আগুনের শিখায় অসাবধানে নখ পুড়ে গেল আমার। আমি পারলুম না, চেষ্টা সত্ত্বেও একাগ্রতা আনতে পারলুম না। ড্রাফটের প্রথম অংশটা ততক্ষণে ভুলে গেছি। পরবর্তী বিষয় সম্পর্কেও কিছু মনে পড়ছে না। সবই কেমন গােলমাল হয়ে যাচ্ছিল। আরাে বেশি বিড়ম্বনা এড়ানাের জন্য ছুটি দিলুম জুলিকে। জুলি চলে যাবার পর বেল টিপে বেয়ারাকে ডাকলুম। বেয়ারা এলে স্বাভাবিক অথচ বিরক্ত গলায় বললুম ‘দ্যাখাে তাে হে, রতন ড্রাইভার আছে কি না। থাকলে বলাে আমার গাড়িটা বাড়িতে পৌছে দিতে। এই নাও চাবি। আর, হ্যা, শোননা আমার জন্যে একটা ট্যাক্সি ডাকো। আমি জানি, বশংবদ বেয়ারা এক্ষুনি আমার হুকুম তামিল করবে। ওরা আমাকে চেনে, ওরা সকলেই আমার কদর বােঝে, তাই আমার কোনাে কথাতেই মাথা চুলকায় না। 

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ কেষ্ট নগরের পুতুল

যতােই দেরি হােক বা ছুটোছুটি করতে হােক, ট্যাক্সির দুর্ভিক্ষের সময়ও ঠিক আমার জন্যে ট্যাক্সি ধরে আনবে। ঘরে যেমনই থাকি না কেন, বাইরে আমি খুব সুখী। এই বয়সেই আমার কপালে কতগুলাে অবাঞ্ছিত ভাজ পড়েছে, খুটিয়ে দেখলে যে ঠোটের পাশে কুঁকড়ে-ওঠা মাংস চোখে পড়ে, বা চোখের কোলে বিষণ্ণতার ছাপ, ওপরওয়ালারা সেগুলাে অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফল বলেই জানে। আমাকে খুশি করার জন্যে টপ-টু-বটম এখানে সকলেই সদা তৎপর। ফলে ট্যাক্সি আসবেই । আমি উঠে বসব। তারপর মন থেকে রাগ ও অপমান সম্পূর্ণ মুছে ফেলার জন্যে প্রায়ই যা করে থাকি, আজও তাই করব। ভাবতে ভাবতেই ট্যাক্সি এসে গেল। আমি উঠে পড়লুম। ট্যাক্সির পিছনের নরম গদিতে হেলান দিয়ে বসে চতুর্দিকের হট্টগােল, ট্রাম কি বাসের শব্দ এবং শশব্যস্ত ছুটোছুটির ওপর চোখ বুলিয়ে এ-সবের মধ্যে আমি কোথায় আছি, আদৌ আছি কি না, বা থাকলেও কেমন আছি এক মুহূর্তে সব কিছু পরখ করে নিলুম। আমার বুকের মধ্যে একট ফাকা নিঃশ্বাস হৈ-চৈ করে উঠল। ব্যাপারটা ভালাে লাগল না। তখন চোখ বন্ধ করে, গতি আগলে, অন্যমনস্ক হবার চেষ্টায় আমি ভাবলুম, আমিই নায়ক, আমার দুঃখটা বড়ােই আধুনিক, আজকের যে-কোনাে লেখক আমাকে নিয়ে দৈনিক কিংবা সাপ্তাহিকে গল্প লিখতে পারে। এমন সময় ঝাকুনি খেয়ে নড়ে বসলুম আমি। হঠাৎ ট্রাফিক পুলিশ হাত দেখিয়েছে। ট্যাক্সিওলা বােধহয় ফাক তালে বেরিয়ে যাবার মতলবে ছিল, পারেনি, জেব্রা ক্রসিংয়ের প্রায় আধা-আধি ঢুকে পড়ে থেমে গেছে। আমার সামনে দিয়ে মানুষের অবাধ পারাপার, ট্যাক্সিটার অনধিকার প্রবেশ কেউ কেউ হয়তাে তেমন সহ্য করতে পারছে না, ভুরু কুঁচকে দেখে নিচ্ছে আমাদের। আমায় দোষী কোরাে না, বললুম মনে মনে, দু’চোখ বন্ধ করে আমি এতক্ষণ গতি আগলে রাখার চেষ্টা করেছি। খুব ইচ্ছা ছিল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব, সুখী দম্পতির মতাে নার্সিং হােমে দেখতে যাব কাকাকে। হলাে না। ফলে এখন আমি খুব আলাদা, সকলের চেয়ে আলাদা। ট্যাক্সিতে বসে আছি বলেই দুর্দান্ত সুখী নই। আমি জানি বাড়ি ফেরার চেয়ে বড়াে সুখ এই মুহূর্তে আর কিছুতে নেই। এইসব ভাবনার মধ্যে দেখলুম একটি পুষ্ট যুবতী এক যুবকের গায়ে গা লাগিয়ে রাস্তা পার হতে হতে ঈষৎ ঝুঁকে তাকাল আমার দিকে, আলগােছে হাত তুলে নমস্কার করল যেন। আমিও মাথা নাড়লুম, কিন্তু মেয়েটিকে চিনতে পারলুম না। ওরা দূরে, ময়দানের ভিড়ে মিশে যেতে মনে পড়ল হঠাৎ, মেয়েটি কদিন আগেই ঢুকেছে আমাদের অফিসে। ইন্টারভিউয়ে অত্যন্ত সহজ একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে ঘেমে উঠেছিল—কেমন মায়া হওয়ায়, প্রায় জেদের বশেই আমি ওকে পাঁচজনের একজন মনােনীত করেছিলুম। আমার ইচ্ছে হলাে, মানে খেয়াল হলাে, ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি ওকে, তুমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলে কেন?ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিতে আমি আবার মেয়েটির কথা ভাবলুম। কে কে আছে এর উত্তরে মেয়েটি বলেছিল বাবা, মা, ভাই, বােন। কিন্তু তােমার যে একজন প্রেমিক আছে, যাকে পেলে বাবা-মা-ভাইবােনকে অনায়াসে ভুলে থাকতে পারাে, ছুটির পর গায়ে গা লাগিয়ে হেঁটে যাওয়া ময়দানের দিকে, সে-কথা তাে বলোনি? ভয় পেয়েছিলে? না কি লজ্জা! পরে মনে হলাে কী আবােল-তাবােল ভাবছি, এ-সব কেউ বলে নাকি! বরং সুযােগ পেলে একদিন মেয়েটিকে ডেকে বলব, প্রেমিক সঙ্গে থাকলে কাউকে নমস্কার করার দরকার নেই, মাথা উচু করে হাঁটবে। বাধ্য হয়েই নিজের সঙ্গে এই সব রগড়, রসিকতা করছিলুম আমি। আসলে আমি একটা কিছু ধরতে বা ভুলতে চাইছিলুম। ট্যাক্সিটা বার বার বাধা পাচ্ছে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলুম। ট্যাক্সি থামল। ভাড়া মিটিয়ে আমি বাড়ির দিকে হাঁটি। আর একটু, আর একটু ; আমার ভিতরের আমি বলে উঠল, ধৈর্য ধরাে, আর একটু পরেই ভুলে যাবে বিকেলে কে তােমাকে ফোন করেছিল, তােমার স্মৃতিতে ফোন-রিসিভার নামিয়ে রাখার বিশ্রী ধাতব শব্দ পীড়ন করবে না আর।ভিড় কাটিয়ে বাড়ির সিঁড়িতে পা দেবাে, হঠাৎ আমার জামার হাত ধরে কে যেন টানল। দু'দণ্ড চোখকে বিশ্রাম দিলুম আমি। ‘আরে লাল্টুদা! কোথায় যাচ্ছেন! দেখি মুন্নি দাঁড়িয়ে আছে, চিমটি কাটার মতাে করে ওর ফর্সা নিটোল আঙুল টেনে রেখেছে সার্টের হাতা। ওর পাশের কিশােরীটিকেও দেখলুম। মুন্নির চেয়ে বয়সে কিছু বড়ােই হবে, যুবতী হতে আর দেরি নেই। ওর পাশে বলেই মুন্নি আমার চোখে তীব্র হয়ে ধরা দিল। ‘মুন্নি যে! অবাকভাব কাটিয়ে আমি হাসলুম। কোথায় গিয়েছিলে? ‘এই তাে, সিনেমা দেখতে। দাঁত বার করে হাসল মুন্নি। আমি বুঝতে পারলুম না ওর পাতলা ঠোটের রঙটুকু ওর নিজস্ব, না ন্যাচারাল কালার ব্যবহার করেছে ও। দ্বিতীয়টি ভাবতে ভালাে লাগলা না। কতাে বড়াে হয়ে গেছে মুন্নি। মনে করার চেষ্টা করলুম শেষ কবে দেখেছি ওকে। নীলার বিয়ের সময় কি? সেও তাে দেড় দু’বছর আগের কথা না, অতত দিন নয়। ‘গীতশ্রী আমার বন্ধু। মুন্নি ওর বান্ধবীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে বলল, “আর এই লাল্টুদা।লাল্টুদা! নামটা মনে মনে উচ্চারণ করলুম, লাল্টুদা লাল্টুদা। কতােদিন পরে শুনলুম! নামটা পুরনাে অথচ মনে হচ্ছে যেন নতুন শুনছি! মুন্নির কণ্ঠ আমার কানে মধু বর্ষণ করল। হাত বাড়িয়ে আমি ওর ঘাড়ের কাছের চুলের গােছা নেড়ে দিলুম। ‘মুন্নি, খুব ফাজিল হয়েছে!দিলেন তাে নষ্ট করে! আদরে কাধ ঝাঁকাল মুন্নি, চোখ ফিরিয়ে চুল দেখল। ওর বান্ধবী বােধহয় আমার সামনে অস্বস্তি বােধ করছিল। সত্যিই তাে, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটা ফুটপাথ। বলল, ‘মুন্নি, চলি রে। কাল দেখা হবে। “কেন!’ মুন্নি প্রথম বলল, তারপর দূরে তাকিয়ে কী দেখল যেন, ইঙ্গিতপূর্ণভাবে হাসল। ‘আচ্ছা, যা। সােজা বাড়ি যাবি!’ মেয়েটি দাঁড়াল না। মুন্নির দৃষ্টি লক্ষ্য করে আমি দেখলুম দূরে লাইটপােস্টের কাছে দাঁড়িয়ে প্যান্ট-পরা টেরিমাথা যে-ছেলেটি এতােক্ষণ আমাদের দেখছিল গীতশ্রীর সঙ্গ ধরে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল। ‘মুন্নি তুমি বাড়ি যাবে কি করে। “কেন, বাসে!’ মুন্নি অবাক ভাব দেখাল, ‘যাবেন আমাদের বাড়ি? চলুন না? মা প্রায়ই বলে। আপনি, কৃয়াদি কেউ তাে আজকাল যান না। ‘তােমার মা ভালাে আছেন? ‘হা।” ‘বাবা? পাশ দিয়ে যেতে যেতে একজন ধাক্কা দিল মুন্নিকে। ইচ্ছে করেই। কনুইয়ের গুতো খেয়ে মুন্নি আমার খুব কাছে সরে এলাে। হাত বাড়িয়ে আমি ওকে আমার গায়ের কাছে টেনে নিলুম। ভাগ্যিস লাগেনি। আমি দেখেছি, কনুই টা জোরেই মেরেছিল, লাগতে পারত। মুন্নির হাড় বড়াে কচি। ‘চলাে। ফুটপাথে দাঁড়ানাে ভালাে নয় বলে আমি হাঁটার চেষ্টা করলুম, ‘তােমাকে কি বাসে তুলে দেবাে? বড়াে ভিড় যে এখন! তুমি যাবে কি করে? ‘আপনি কোথায় যাবেন?’ পাল্টা প্রশ্ন করল মুন্নি। ‘কেন, তুমি কি একটু থাকতে পারবে আমার সঙ্গে? তােমাকে পেয়ে আমার খুব ভালাে লাগছে। থাকবে? দেরি হয়ে যাবে না? ‘আপনি আমায় পৌছে দেবেন? বলব, আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আপনি গেলে মা খুব খুশি হবে! ‘বেশ, পৌছে দেবাে। ‘তাহলে একটা পাইন অ্যাপেল খাওয়ান। মুন্নির চোখে চোখ পড়তেই আমার খুব হাসি পেল। হাসি চাপবার কোনাে চেষ্টা করলুম না আমি। মুন্নি যেন খুব অপ্রস্তুত হয়েছে, রাগবে কি হাসবে ভেবে পেল না। ঈষৎ ভুরু তুলে বলল, ‘হাসছেন যে বড়াে? ‘এমনি। তুমি আমাকে এতাে প্রশ্ন কোরাে না। একটু থেমে আমি বললুম, শুধু পাইনাপেল খাবে? আর কিছু না? চলাে, আমার খুব ক্ষিদে পাচ্ছে। তুমি খেলে আমিও খাব। মুন্নি দু’পা পিছিয়ে পড়েছিল। খুব দ্রুত হেঁটে এসে অনুযােগের গলায় বলল, তাড়াতাড়ি হাঁটছেন কেন। বাব্বা, কী তাড়া! আমি পারব না বলে দিচ্ছি। ‘এই নাও আমি আস্তে হলাম।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ আমরা তিন প্রেমিক ও ভুবন

মুন্নির সুবিধের জন্যে আমি পা টিপে হাঁটতে লাগলুম। গরম লাগছিল। জুতােটা খুলে ফেলতে ইচ্ছে হলাে। কেউ কেউ তাকিয়ে দেখছিল আমাদের। আমি জানি, এখন ‘এতাে আমার পাশে মুন্নিকে খুব বেমানান লাগছে। বয়স যতােই হােক, আমার কপালে পরিশ্রমের ভাজ আমার চোখের কোলে স্পষ্ট বিষণ্ণতা আমার লম্বা ভারী শরীর আমাকে বয়স্ক করে তুলেছে। মুন্নির কত হবে চৌদ্দ কি পনেরাে বেশি হলে ষোল। যে কেউই ওকে আমার মেয়ে বা ছােট বােন ভাবতে পারে। এই চিন্তায় আমার মনের ভিতর একটা আবেগের আলােড়ন শুরু হলাে। এখন আমি খুব সহজ ও স্বচ্ছন্দ বােধ করছিলুম। ‘চলাে মুন্নি, এই দোকানটায় ঢুকি। এখানে খুব ভালাে আইসক্রীম পাওয়া যায়। “ওঃ লাভলি!’ মুন্নি হ্যাংলার মতন মুখ করে বলল, আপনি কি খাবেন? দো পেঁয়াজি? শুনে গলা ছেড়ে হেসে উঠলুম আমি। মুন্নি ভুরু কোচকালাে, ‘হাসছেন কেন! আমাকে খুব হ্যাংলা ভাবছেন নিশ্চয়। তাহলে কিন্তু যাব না আপনার সঙ্গে। ‘না চলাে। তােমাকে আমার খুব দরকার এখন। “কেন?” আমি চুপ করে থাকলুম। কেন-র উত্তর আমার জানা নেই। আইসক্রীম খেতে খেতে মুন্নি আবার জিজ্ঞেস করল ‘কেন দরকার বললেন না তাে! কি করবেন আমাকে নিয়ে? ‘অনেকক্ষণ আটকে রাখব। তােমার কি খারাপ লাগছে? ‘নাঃ। খুব ভালাে লাগছে। মুন্নির ঠোটের কোণায় আইসক্রীমের দুধ লেগে আছে। খুব আস্তে আঙুল বাড়িয়ে আমি সেটা মুছে দিলুম। ওর নরম শরীরের হাল্কা সুবাস আমার নাকে লাগল। মনে পড়ল, ওর অন্নপ্রাশনের দিন ওকে কোলে নিয়ে আমি একটা ছবি তুলিয়েছিলুম। ছবিটা এখনাে আছে আমার অ্যালবামের মধ্যে। মুন্নি এখন শাড়ি পরে, একা ম্যাটিনি শােয়ে সিনেমা দেখতে যায়। ভাবতেই কেমন অবাক লাগল। ‘আচ্ছা লাল্টুদা', যেন হঠাৎ কিছু মনে পড়েছে এইভাবে চোখ তুলে আমাকে দেখল মুন্নি, ‘আপনি বুঝি মদ খান?” ‘কেন! ‘তাহলে ওই দোকানটায় ঢুকছিলেন কেন!’ হাতের উল্টো পিঠে ঠোট মুছল মুন্নি। “ওটা তাে মদের দোকান। গাড়ি দাঁড়করিয়ে বাবা একদিন ওখানে ঢুকেছিল বাবাও তাে খায়। আমি একটু দ্বিধায় পড়লুম। মনে হলাে এই প্রশ্নটা আমার সাবধানে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আমি জানি না, ব্যাপারটা মুন্নি কোন্ চোখে দেখবে। যদি খারাপ ভাবে! না, মুন্নিকে আমি আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু ভাবতে দেবাে না। কৌশলে এড়িয়ে গেলুম আমি। ‘তুমি একা সিনেমা দেখতে গিয়েছিল কেন ? ভয় করে না? ‘একা!’ অবাক চোখে দেখল আমাকে মুন্নি। “আহা, একা কেন হবে! এই তাে, গীতু ছিল। “ওই ছেলেটাও বুঝি সঙ্গে ছিল ?” “কোন ছেলেটা!’ এক পলক আমার চোখে চোখ রেখে কী ভাবল মুন্নি। তারপর হেসে ফেলল। “ওঃ, আপনি দেখে ফেলেছেন বুঝি! ও দীপকদা, গীতুর লাভার বিচ্ছিরি! ‘ওই ছেলেটা। অ্যালবার্ট কাটে, পয়েন্টেড শু পরে। ওই তাে রােগা, প্যাংলা চেহারা। আমার একদম ভালাে লাগে না!” ‘তােমার কোনাে লাভার নেই? “যাঃ!’ মুন্নির চোখমুখে লজ্জার ছায়া পড়ল। ও কেঁপে উঠল অল্প, একটু নড়ে বসল। ওর গলার পিছনে সােনালি রােমগুলাে আমার চোখে পড়ে, সদ্য গজিয়ে-ওঠা পাখির রােমের মতাে ফুরফুরে, ইচ্ছে হলাে উড়িয়ে দিই ফু দিয়ে। কিন্তু বুঝতে পারছি এখন এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে ও আরাে নুয়ে পড়ে। বড়ােই সরল এই মেয়েটা, কেমন অনায়াসে সবকথা বলে ফেলে একটুও দ্বিধা না রেখে! মুন্নি চোখ তুলল না অনেকক্ষণ, আইসক্রীমের প্লেটে গলা দুধের দিকে তাকিয়ে থাকল। মজা করার জন্যে টেবিলের ওপর রাখা ওর হাত, হাতের বালাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে আমি বললুম, মুন্নি, আমি তােমার লাভার হতে পারি না? দ্যাখাে, আমি টেরিও কাটি না, পয়েন্টেড শু-ও পরি না। আমাকে তােমার পছন্দ হয় না? ‘যাঃ। সকৌতুকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে এক পলক দেখে মুন্নি হেসে ফেলল, ‘তা কী করে হয় আপনি তাে লাল্টুদা!’ ‘দোষ কি!” আমি বললুম, ‘দীপকদা লাভার হতে পারে লাল্টুদা পারে না। ‘জানি না বাবা! হুট করে জবাব দিয়ে খানিক কী ভাবল মুন্নি। বাঁ-হাতের কড়ে আঙুলটা মুখের ভিতর পুরে দিয়ে, দাঁতে নখ কাটতে কাটতে কাটতে আড়চোখে দেখল আমাকে। ‘আপনার তাে কৃয়াদি আছে! আপনি কোন্ দুঃখে আমার লাভার হবেন! মুন্নি আমার ঠিক সেই জায়গাটার ঘা দিল। সেই নাম উচ্চারণ করল, ও জানে না, যে নাম ভুলবার জন্যে আমার মূল্যবান সময়, আমার ভয়ঙ্কর গম্ভীর মন আমি মুন্নির কাছে সমর্পণ করেছি। মুন্নি জানে না এই মুহূর্তে আমি কি ভীষণ অসহায়, আমি যা বলছি, সবই বলছি বানিয়ে। বলছি জোর করে। আমার কোনাে কথাই কথা নয়। কী হলাে! লাল্টুদা, আপনি ঘামছেন কেন? এবার যাবেন তাে?” ‘যাব।” নিঃশ্বাস সামলে আমি বললুম ‘বড় গরম লাগছে, মুন্নি। তুমি টাই খুলতে পার? দাও না খুলে? মুন্নি দ্বিধা করল না। আমার বুকের কাছে মাথা নিয়ে এসে টাইয়ের নট খােলার জন্যে হাত বাড়াল। ওপরে চোখ তুলে আমি দেখলুম, সিলিং পাখাটা ঘ্যাস ঘ্যাস শব্দ করে ঘুরে চলেছে অবিরাম। রেস্টুরেন্টের নানা শব্দ আমার কানে এলাে। আমি চোখ বন্ধ করলুম। আমার কানে আমার নিজেরই কণ্ঠস্বর গুঞ্জন তুলল, হ্যাভ পেসেন্স, হ্যাভ পেসেন্স। মুন্নির সিলকের চাদরের মতাে নরম চুলসুদ্ধ মাথাটা আটকে আছে আমার চিবুকের কাছে। গলায়, বুকে আমি ওর গরম নিঃশ্বাসের স্পর্শ পাচ্ছি। আমি একটা অবাস্তব সুখের কথা ভাবলুম। ‘মাকে যেন বলবেন না আমি সিনেমায় গিয়েছিলুম।” ‘ইস্, মা’র সঙ্গে যদি হঠাৎ কৃয়াদির দেখা হয়ে যায়! তাহলে কৃয়াদিকেও শিখিয়ে দেবেন। কৃয়াদি! কৃয়াদি! আমার ইচ্ছে হলাে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিই মুন্নির গালে। মুন্নি, তুমি এত বাচাল কেন! এখন তুমি আমার সামনে আছ, শুধু কি আমার কথা ভাবতে পারাে না! যদি না পারাে, চুপ করে থাকো। আমাকে ভাবতে দাও। নিজেকে গােপন করে আমি বললুম, ‘মুন্নি, আজকে যেমন হঠাৎ তােমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, তেমনি রােজ হতে পারে না? ‘ওরেব্বাস, তাহলেই হয়েছে!’ রােজ রােজ!’ মুন্নি যেন কথাটার অর্থ ঠিক ধরতে পারল না, ‘রােজ দেখা হয়ে কী হবে? ‘এমনি। আমরা বেড়াব, আইসক্রীম খাব। তারপর ধরাে, সিনেমাতেও যেতে পারি। তােমাকে আমার খুব দরকার কিনা। চোখ বড়াে করে মুন্নি আমার পাগলামি-মার্কা কথাগুলাে শুনল। কী ভাবল একটু। তারপর বলল, ‘রােজ হবে না। এক-একদিন আসব। ‘ভেরি গুড।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ জতুগৃহ

মুন্নির ফর্সা, নরম হাতটা আমি মুঠোর মধ্যে চেপে ধরলুম। সেই অবস্থায় দেখলুম মুন্নির চোখে কেমন একটা ছায়া পড়েছে, ফুলে উঠেছে নাকের পাটা। হাতটা ছাড়িয়ে নেবার কোনাে চেষ্টা করল না মুন্নি। ‘একটা কথা বলব?’ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললুম, ‘তােমাকে আমার খুব ভালাে লাগছে এখন। একটা চুমু খেতে দেবে? “যাঃ, অসভ্য!’ মুন্নি সরে গেল একটু, ওর ঠোট কাপল। আমি কিন্তু চলে যাব। ‘তাহলে থাক। আমি বললুম, “তােমার যখন ইচ্ছে করছে না! তুমি আমাকে একেবারেই পছন্দ করাে না দেখছি! ‘আপনার খুব ইচ্ছে করছে?’ দূর থেকেই হঠাৎ বললাে মুন্নি, গলার স্বরে তেমন কোনাে পরিবর্তন নেই। তারপর, একটু অপেক্ষা করে আমি জবাব দিচ্ছি না দেখেই বােধহয় বলল, শুধু একবার তাে? ঠিক বলছেন? ‘বেশ একবারই। লঘু গলায় বললুম আমি। মুন্নির কথা শুনে হঠাৎ হাে হাে করে হেসে উঠতে ইচ্ছে করল আমার। কোনােরকমে হাসি চেপে মুন্নিকে দেখলুম আমি ও কিছু ভাবছে। পর্দা সরিয়ে কেবিনের বাইরে উঁকি দিয়ে কী দেখল মুন্নি। মুখটা আবার ভিতরে টেনে নিয়ে বলল, এখানে নয়। তাহলে আপনাকে ট্যাক্সিতে যেতে হবে। ‘কেন, ট্যাক্সি কেন!’ মুন্নি আমাকে অবাক করে দিল। কেউ বুঝি তােমায় ট্যাক্সিতে নিয়ে গিয়ে চুমু খেয়েছিল? ‘আহা, আমাকে কেন। হাত দিয়ে আমাকে ঠেলল মুন্নি। গীতু বলেছে, দীপকদা একদিন ওকে ট্যাক্সিতে... ‘ও, বুঝেছি, বুঝেছি। আমি তাড়াতাড়ি বললুম, ‘তাহলে চলাে। ট্যাক্সিতেই না হয় হবে। তারপর তােমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব। আমি বেয়ারাকে ডাকলুম। সিগারেট ধরিয়ে বিলের টাকা দিয়ে বেরিয়ে এলুম বাইরে। ফুটপাথে দাঁড়িয়ে কতাে তাড়াতাড়ি একটা ট্যাক্সি পাওয়া যায় তাই চিন্তা করতে লাগলুম। দেরি হয়ে যাচ্ছে, মুন্নির তাড়াতাড়ি ফেরা দরকার। তখন আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ভয়-মাখানাে গলায় মুন্নি বলল, আপনি কিন্তু কৃয়াদিকে বলবেন না কিছু। ‘দূর, পাগলি! এ-সব কেউ বলে! আলতােভাবে হাতের আড়াল দিয়ে মুন্নিকে আগলে রাখলুম আমি। আর মনে মনে বললুম, ভিতু মেয়ে! অতাে ভয়ের কি আছে! আমি কি সত্যি সত্যিই তােকে চুমু খাব নাকি! বরং এখন অনেকক্ষণ তােকে নিয়ে ঘুরব। যেখানে ইচ্ছে, সেখানে খুশি। আমি জানি, ঘুরতে ঘুরতে আবার আমি সেই একই জায়গায় ফিরে আসব। আমার পরিত্রাণ নেই জানি, আজকের এই দেখা হওয়াটাও মিথ্যে। তাের সরল, নিস্পাপ জগৎ থেকে যে অনেক দূরে সরে এসেছি, মুন্নি!


                                 (সমাপ্ত)


Prosanta Mondal

Hey Guys My Name Is Prosanta Mondal From Kolkata, India. I Am A Professional Blogger and Creative Content Writer.

Post a Comment

Appreciate Your Valuable Feedback. I Hope You Like Post And Subcribe Our Blog. Please DO NOT SPAM - Spam Comments Will Be Deleted Immediately.

Previous Post Next Post