Bangla Romantic Golpo | রোমান্টিক প্রেম কাহিনী

আজকের Bangla Romantic Golpo টির নাম "অশোক ফুলের মধু" গল্পের প্রধান চরিত্রে অনুরুদ্ধ ও জুই, গল্পের বিষয় - Romantic Prem আরও Bangla love story এবং Bangla Funny jokes পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।

আজকের গল্প - অশোক ফুলের মধু

এই কষযুক্ত আর মিঠে মিঠে ফুলের গন্ধটা কেমন যেন নেশা নেশা আদলে গড়া। ফাল্গুনে যখন এই অশােকফুল ফোটে, ঝাকে ঝাকে, থােকায় থােকায়, বিচিত্র লাল আর মাঝে মাঝে হলুদ রঙা, তখন এই অতি পুরাতন বাড়িটির রঙের স্বভাবের সঙ্গে কেমন মিলেমিশে যায়। এই কতক দুমহলা দোতলা বাড়িটির বেশিরভাগ অংশই পড়ে—ধরে গিয়েছে। সেটা পিছনের দিকে এবং বেশিরভাগ অংশই মুখ থুবড়ে অথবা টেড়েবেঁকে খাড়া আছে। ঘর গুলাের বড় বড় জাফরি কাটা জানলা গুলাে আপন মনে মচমচ শব্দ করছে। বিশেষ করে বাতাস পড়লে। বেশি রাতের দিকে হাওয়ার দাপটে তারা সব এমনই হা-হুতাশ করে। মনে হয়, সকালে উঠে দেখা যাবে অনেকেই ভেঙে পড়েছে। তা কিন্তু হয় না। ভাঙার বদলে ঝুরাে সুরকি, সাবেক ইটের খণ্ড-বিখণ্ড দেখতে পাওয়া যায়। গােলক মুখুজ্যে এই ধ্বংস অবস্থার সামনে ঘুরঘুর করেন আর ভাবেন, এই সদ্য বাষট্টি বছর বয়সেও মনে মনে এত রসসম্ভার কেমন করে মজুত থাকে। কেমন করে আজও বুকের ভিতর ইতিউতি আনচান হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা। 

একতলার একটেরে ঘরে একা বসে টেপ-রেকর্ডারে নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় শুনতে শুনতে দিশি পাট ছােলা সহকারে। সেই আমেজের পাশাপাশি নিজের পুরনাে সেতার খানি তক্তপােশে পড়ে পড়ে জিরােয়। মাঝেমধ্যে টুংটাং, পিড়িং পিড়িং হয় বইকি। বাড়ির ভিতর—টানা বারান্দা আর তিন খানি ঘর পেরিয়ে পাঁচিল-ঘেরা উঠোন। তার এক কোণে হেঁশেল ঘরে কাঠের আগুন জ্বেলে রান্না সারে রেবা। মধ্যবিত্ত পরিবারের গঙ্গারি শ্রীরামপুরের সেই কন্যে এখন পাশ টপকে ষাটের দিকে যাত্রা করেছে। পােড়া কপালি না হলে কি আর এমন দরিদ্র পরিবারে বিয়ে হয়। রেভিনিউ দফতরে সামান্য মহুরিগিরি এতকাল ও কাজে তাে রিটায়ারমেন্ট হয় না। তবে এখন এই হাঁপ ধরা দেহে যথাতথা যাতায়াত, উকিল-মােক্তার ধরা আর পােষায় না। তবে যেহেতু বিদ্যেটি পুরনাে আর তার ইংরেজি-বাংলা মােটামুটি চলনসই, তাই জজকোর্টের জুনিয়র উকিল অনিরুদ্ধ তাকে ছাড়তে চায় না। কাজকর্ম দিয়ে বাড়িতে পিয়ন পাঠায়। কখনওবা উকিলের মােটরসাইকেলের পিছনে চড়ে কোর্টে যেতে হয়। তাতে যা আয় হয়—মাসান্তে বা দিনপ্রতি—তিনটি প্রাণীর কোনওমতে চলে যায়। তারই পাশে মেয়ে জুই আবার বিডিও আপিসে সেলাই দিদিমণির কাজ করে। মেয়ের বয়স বাড়ে কিন্তু তার সেলাই দিদিমণির আদলে চোখের কোণে কালি পড়ে, গালে মেচেতার সম্ভার ওঠে, তবু মােটামুটি ফরসা আর সুনয়নী মুখে পড়তি সুন্দরীর ছটা খেলে বেড়ায়।

Bangla Romantic Golpo

Valobashar Romantic Premer Golpo Bangla

 গােলকের ব্যাধি বলতে বনেদি হাঁপের টান। তবে তােক বলে, তার চেহারার মধ্যে একরকম ছবি বিশ্বাসের জমিদারি স্বভাব আছে। মলিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরলেও সেই ভাবটি ফুটে বেরােয়। আর এই হাঁপের টান—তারও ছিল, গােলকেরও আছে। কিন্তু তিনি হলেন ডাকছাড়া নট আর বনেদি জমিদার পরিবারের। ওই জমিদারিটি গােলােকের পূর্বপুরুষ ঠাকুর্দার আমলের পর থেকেই থমকে গিয়েছে। সেই বংশের গােলক কর্মদোষে পপিত মুহুরি। জরঙ্গব এই ভাঙাচোরা অট্টালিকা আগলে বসে থাকা এক মহাপাষণ্ড। এপাড়া, তা পরের দু'টি পাড়া বরাবর যে-সমস্ত নতুন ঘরবাড়ি, সেইসব জমির মালিক ছিলেন পূর্বপুরুষ। সেসব বেচেবুচে খালাস করে গিয়েছেন তারা। অধস্তনের জন্যে এই বাগান-ঘেরা লজঝড় বাড়িটি। এবাড়ি বােঝা হলেও বেচতে মন চায় না। মন বলে—এমন অশােকফুল পাব কোথা? কোথায় পাব এর সঙ্গে তাল মেলানাে নিত্যি রাতে দিশির পাট আর নিখিলবাবুর সেতারি বিষাদ। রাত ঘন হয় এই ফাল্গুনে, নিখিলবাবুর শুদ্ধ বসন্ত বাইরের তুমুল দখনে হাওয়ার সঙ্গে চাঁদের আলাের লকলকে সুর হয়ে আকাশ ভেদ করে ব্রহ্মাণ্ড ছুঁতে চায়। বেপরােয়া এই সুর তাড়নায় সংসার-পাথার দিশি মদের চক্করে টলমল করে। টলতে টলতে এবং দুলতে দুলতে সে একটি অমানুষি নিরা বয়ব হয়ে যায়। বারান্দার ওপারে রেবার হাই ওঠে। ওই দিকের কোনার ঘরে সেলাই কন্যে জুই পরের দিনের অফিস কাজ সেলাই পত্র গােছ করে। নিথর এই ধ্বস্ত বাড়ি জুড়ে নিখিলবাবুর মাতাল সুর উড়ে বেড়ায়, ব্রহ্মাণ্ড ভেদ করে আরও উর্ধে যাওয়ার তাড়নায়। বাগানে অশােক ফুলের বেহিসেবি নেশা নেশা ভাব আপন মনে খেলে বেড়ায়।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ আদুরিণীর প্রেম কাহিনী

ঠিক এর পাশাপাশি গােলকের মনে হয়, মানুষের মন সত্যিই ভারী গহিন। তা নাহলে এই বয়সে এবং বিশেষ করে পানের পর মনে মনে তীব্র দেহ বাসনা টের পান। এর সঙ্গে নিখিলবাবুর কোনও যােগ নেই। বরং ওই থােকা থােকা অশােক ফুলের আশ্চর্য গন্ধের সংযােগ আছে। কিন্তু এখন, রেবার ওই থলথলে বুক-পেটের দিকে তাকালে মন চটে যায়। অথচ পূর্বপুরুষ এ বাড়িতে পালা করে গান-বাজনার ছলে মেয়ে মানুষ পুষেছেন—খেপে খেপে।

সকালবেলা বাইরের বাগানে, অশােক গাছের আড়াআড়ি চেয়ার পাতা হয়েছে। আজ রােববার। ফলে মেয়েও বেরবে না। জুই খানিক আগে দু'নম্বর চা দিয়ে গিয়েছে। গেটের ওপারে তার উকিল অনিরুদ্ধর মােটরসাইকেল এসে থামল। মুখে একগাল হাসি আর হাতে ফাইল। সে আসামাত্র জুই ভিতর থেকে আর একখানি পলকা চেয়ার এনে রাখল। আর মাঝখানে রাখল হালকা টেবিল।অনিরুদ্ধ চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আমি কিন্তু চা খাব। শুধু চা। যাকে বলা হল সে বুঝল। এবং কোনও কথা না বলে ভিতরে চলে গেল।অনিরুদ্ধ হাতের ফাইল টেবিলে রাখল, তারপর আঁকারণে গলা খুক খুক করে বলল, ব্যাপারটা জরুরি বলে আজ ছুটির দিনে আপনাকে বিরক্ত করতে হল।গােলক শুধু ‘ই বলেন। তারপর ফতুয়ার পকেট থেকে ইনহেলার বার করে হাঁ-মুখে স্প্রে করে নেন। টেবিলে রাখা জলের বােতল থেকে এক টোক জল নিয়ে গলা পরিষ্কার করেন।

উকিল বলে, কেসটা একটু খটমট মানে রেপ কেস। মেয়েটি এখন হাসপাতালে। আসামি দু'জন এখন পুলিশ লকআপে। কাল কোর্ট খুললেই ফাস্ট আওয়ারে ওদের জামিনের দরখাস্ত দেব। গােলক চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলেন, রেপ ব্যাপারটা তাে জেনুইন। হ্যা, তা তাে বটেই। এখন কেসটা নিতে হয়েছে মকবুলের কথায়।মকবুল! বড় নেতা। অনিরুদ্ধ হেসে বলে, আমি একটা ড্রাফট করে রেখেছি। আপনি একটু দেখে দিলেই হবে। কী করি বলুন, কেসটা না নিয়ে উপায় ছিল না।ডাক্তারের রিপাের্ট আছে তাে? না, ওটা পরশু পাওয়া যাবে। জুই এক কাপ চা এনে রাখে অনিরুদ্দর সামনে। তারপর নিচু গলায় অনিরুদ্ধকে বলে, আমায় একটু বাজারের দিকে যেতে হবে অনিরুদ্ধ দা। আমায় নামিয়ে দেবে?

অনিরুদ্ধ তার দিকে হেসে তাকায়, দেব। তা হলে তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। গােলক লক্ষ করেন উকিলের চোখে বাড়তি ঝিলিক। অনিরুদ্ধ উকিল বলে, কী করব বলুন। উকিলের কাজই তাে হয়-কে-নয়, নয়-কে-হয়। গােলক গম্ভীর গলায় বলেন, তা হলে কি আমরা এখন ধর্মশাস্ত্র আলােচনায় যাব?

উকিল কতক ঘাবড়ানাে মুখে তার দিকে তাকায়। কেমন যেন বােকা বােকা হাসতে চেষ্টা করে। গােলক এবার আপন মনেই বলেন, ব্যাপারটা পলিটিক্যাল হয়ে গেছে তাে। এখন আর ডাক্তার, পুলিশ কাউকে হাত করা যাবে না। অনিরুদ্ধ উকিল এবার গম্ভীর মুখে বলে, রাজনীতি তাে টাকা দিয়ে মাপা যায় না। কী করব বলুন।

গােলক টেবিলে রাখা ফাইলটা হাতে তুলে নিয়ে তার গায়ে আঙুল বুলাতে বুলােতে বলেন, আসলে আমাদের এই প্রাচীন গ্রামে এই মাঝখানের পাড়াটায় আমরা যে-কঘর বামুন বাস করি, তাদের রক্ষাকর্তা দু’টি সম্প্রদায়। দখিনে রাস্তার ধারে সব পর পর মুসলমান। আর উত্তরে বাগদিপাড়া। যেদিক দিয়েই ঝামেলা হােক বা ডাকাত পড়ুক, ওরা তাদের সঙ্গে লড়ে আমাদের রক্ষে করবে। এটা সেই পুরনাে জমিদারি আমলের রেওয়াজ। কথাটুকু বলে গােলক দম নিতে থাকেন। ইনহেলার নিলেও শাসের কাজটা পুরােপুরি সচল হয় না।

উকিল বড় বড় চোখ করে বলে, তার মানে তারাও তাে এক-একটি আস্ত ডাকাত। —ডাকাত কে নয়। এখনকার রাজনীতির মাতব্বরেরা তাে এক-একটি ডাকাতদলের পাণ্ডা। সেকালেও ছিল, তবে এত নয়। জুই শাড়ি বদলে, কাধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এল। অনিরুদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, তা হলে কাল সন্ধেয় একবার আসব। ততক্ষণে ফাইলটা আপনার পড়া হয়ে যাবে।

তারা দু'টিতে বেরিয়ে যায় আর তার পরে পরেই গেটের খিল খুলে বেশ রংচঙা আর লাল-কালােয় ডুরে মেশানাে নিশা এসে উঁকি মারে। নিশা আসলে নিশা বিবি। বৃদ্ধ আর প্যারালিসিস গ্রস্ত স্বামী। লােকের বাগানে বা আগানে একলা লেবারের কাজ করে বউটি। কাজ করার সামর্থ্য তার পাশ-ভাঙা শরীরেও ঝলমল করে। বেশ সুছাঁদ লম্বাটে গড়ন, রংটি একেবারে ময়লা নয়, নাকে ঝুটো পাথুরে নাকছাবি। মাথায় ঘােমটার ঘাড়ে কোকড়াগাছের চুল। ফলে মাথাটি স্ফীত হয়ে রয়। নিশার হাতে ধরা হেঁসােটি রােদের মুখে পড়ে ঝকঝক শানায়। তার ঝকমকে আর কিঞ্চিৎ ছােট চক্ষু তারায় সে ঝকমকানি বহাল হয়। সে গেটের সামনে দাঁড়িয়েই বলে, বাবু, এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাই গােলক হাত তুলে বলেন, ভেতরে আয় তাে। গেট খুলে নিশা বাগানের আওতায় এসে পড়ে। এসে দাঁড়ায় গােলকের সামনে কাছাকাছি। তারপর গলা নামিয়ে বলে, বউদি বাড়ি নেই বুঝি? গােলক ডান হাত সামনে তুলে অশােক গাছটির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ক'টা ফুলের কুঁড়ি পেড়ে দে তাে। তাের বউদির অশােক ষষ্ঠীতে লাগবে। নিশা হাসে ঝকঝকে দাঁত বার করে, সে না হয় হল। আর তােমার জন্যে এক থােকো ফুল পেড়ে দেব। গােলক এদিক-ওদিক দেখে তারপর বলেন, দশটা টাকা দেব কিন্তু। বাগান পরিষ্কারের কাজ নয় এটা।

এই বলে তিনি নিশার দিকে একচোখ টিপে চক্ষু মারেন। নিশা হেসে কুটিপাটি হয়। তার বুকের আঁচল এলােমেলাে হয়ে যায়। সে কাপড় টেনে গােছ করতে করতে বলে, উহ। কী চোখ মারলে বাবু। এতেই আমার মজুরি পুষিয়ে গেল। পাঁচিলের ধারে গাছটি। দিব্য উঁচু। চড়ে বসা এমনি সহজ কর্ম নয়। নিশা মাটিতে পেতে রাখা ছােট মইখানি তুলে নিয়ে পাঁচিলে ঠেকনাে দিলেও পাঁচিল অনেকটাই উপরে।

নিশা মইয়ে চড়তে চড়তে ঘাড় ঘুরিয়ে গােলকের দিকে তাকিয়ে মিচকে মিচকে হাসে। তারপর বলে, পড়ে গেলে তুলাে কিন্তু বাবু। গােলক তার আশ্চর্য যৌবনবতী ভঙ্গির দিকে তাকিয়ে থাকেন হতভম্ব হয়ে। গত রাতের শুদ্ধ বসন্ত এখন ভিন্ন মুখে ঘুরে গিয়ে ফণা তুলে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ অনুরাধার স্বপ্ন

নিশা কতক খামচে ধরে দু'হাতের অদ্ভুত কসরতে পাঁচিলে চড়ে বসে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে শাড়িখানি গােছ করে ধরে হাঁটুতক তুলে ধরে বেশ গােছ করে বাঁধে। গােলােক এখান থেকেই তার হলদেটে থাইযুগলের আভাস আন্দাজ করেন। নিশা সামনে দু'হাত বাড়িয়ে কালােবরণ গাছের গুঁড়িটি জাপটে ধরে। গােলক মনে মনে শিউরে ওঠেন। নিখিলবাবুর সেতার দ্রুত লয়ে বেজে চলে। নিশা গাছ জাপটে উপরের দিকে বাইতে বাইতে গােলকের চোখে অবাক কটাক্ষ হানে। তার দন্তপাটি ঝকঝক করে। অমনি গােলকের বুকের ভিতর থেকে আগের রাগটি মিলিয়ে গিয়ে সেখানে অকস্মাৎ পিলু ঝলসে ওঠে। কে জানে, কোথাকার, কবেকার বৃন্দাবনে, রাধাকৃয়ের হােলি খেলার তুমুল পত্তন ঘটে যায়। সেতারে বিরহ আর মিলন কথা কি অবাকতরই না বুনে চলেন নিখিলবাবু। শ্রীকৃষ্ণ রাধিকার মুখচন্দ্রটি দু'হাতে তুলে ধরে তথায় ঠোট রাখেন। এবার অপর হাতে রাধার সুটোল আর দৃঢ়বদ্ধ স্তনযুগল বলিষ্ঠ হাতে পিষ্ট করতে থাকেন। রাধারানি বে-আকুল হয়ে পুরুষ রতনটিকে বুকের সঙ্গে চেপে চেপে ধরেন। তাঁর আবিরক্ত চোখে-মুখে বলবান পুরুষটির জিহ্বা করে চলে। খেলা করে যথাতথ। সেই উল্লাসে। শ্রীরাধা হরিণীটির মতাে ছটফট করেন। সেতার বেজে যায়, ডা ডা-ডা ডা ডা ডা- ডা ডা ডা ডা ডাগা ডাপা ডা...। বাজনা এবার ত্রিতালে উঠে পড়ে। রাধা অনুভব করেন এই বেটা মানুষ টির সঙ্গেই যেন কামদণ্ড রচিত হয়ে গিয়েছে। অশােকফুলের লাল-হলুদ থােকা জোড়া বাগানের টেবিলে পড়ে রয়। এবাড়ির বিধ্বস্ত ভাঙাচোরা অংশের একটি ঘরে নিশা আর গােলক। বউ ভিতরে বুঝি রান্নাবান্নায়। মেয়ে বেরিয়ে গিয়েছে অনিরুদ্ধর সঙ্গে সেই কখন। পিছনের বাগানে আম গাছে মুকুলের ফাঁকফোকরে কত-না পাখি ডাকে। কিছু কিচ্‌-পিউ কাহা, গােলকবাবুর স্বভাবে এত ঢেউ ছিল কাহা। হুম হুম, চুম চুম।

গােলক হাঁসফাস গতিকে পােড়াে ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। নিশা তাকে বলবতী দু'হাতে চেপে ধরেছে। দেয়াল থেকে প্রাচীন চুন-সুরকি ঝরে ঝরে পড়ছে। বাইরে থেকে সকাল বেলার আলাে এসে এই জীর্ণ ঘরে আলাে-আঁধারি রচনা করেছে। নিশা দমরুদ্ধ স্বরে বলে, বাবু, অ বাবু, আমার রােগে-ভােগা মানুষটা আর ক’দিনই বা বাঁচে। তুমি যদি এখানে এক খানা ঘর দাও, তাে আমরা তেরপল চাপা দিয়ে এখানেই থাকি। তােমার বাগান আমি সাফা করে দেব অমনি অমনি। কোনও পয়সা লাগবে না। গােলক অনুভব করেন, তার হাঁপ ধরা বুকের উপর নিশার ঝুল ঝুলন্ত স্তনজোড়া নিশপিশ করছে। তার আটকে আসতে চায়। গােলােক বলে ওঠেন, ওরে—আমায় ছেড়ে দে রে, ছেড়ে দে। আমারই ভুল হয়েছে। নিখিলবাবুর বাজনায় কোনও কামগন্ধ নেই। সে ভারী নির্মল জুই মােটর সাইকেলের পিছনে বসে। অনিরুদ্ধ বলে, বাজারে নামবি?

জুই বলে, ঠিক আছে। ফেরবার সময়ে। বাজার এলাকা ছাড়িয়ে তারা মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট পাশ কাটিয়ে সিধে গঙ্গামুখাে রাস্তা ধরে। অনিরুদ্ধ বলে, তা হলে কথাটা তােমার বাবাকে পাড়ব কবে?

উড়ুক্কু হাওয়ায় জুইয়ের এখনও বিয়ে না-হওয়া কপালে চুল এসে পড়ে। তার ফরসা, সুগােল মুখের পাশে চুল খেলা করে। মেচেতা-পড়া গালে আর ডাগর চোখের তলাকার কালির সঙ্গে সমঝােতা করে।

তবুও এই সেলাই দিদি মণিটির বয়স যাই-যাই চোখে-মুখে পড়তি সুন্দরীর ছটা উড়ে যায়। এই মেয়ে যদি সামান্য সাজুগুজু করে, তা হলে তাকে মন্দ দেখায় না। জুই বলে, সে জন্যে পাজি দেখতে হবে নাকি! তােমাদের বনেদি বাড়ি। পাজি তাে লাগতেই পারে। বনেদি, খুঁঃ।।

সে তােমার বাবার চেহারা দেখলেই বােঝা যায়। একেবারে ছবি বিশ্বাস। জমিদার বিশম্ভর রায়। কোচা ধরে যখন হাঁটেন- ই, আবার ‘দাদাঠাকুর’-এ শরৎ পণ্ডিতও। আমার বাবার হয়েছে সেই হাল। তা হলেও পার্সোনালিটির একটা ছটা আছে বইকি।

জুই কোনও কথা বাড়ায় না এখানে। তার বদলে সে অন্য কথায় গিয়ে বলে, গঙ্গার ধারে গিয়ে একটু বসলে হয় না। অনিরুদ্ধ মাথা হেলায়, বেশ তাে। 

ফেরিঘাট বাঁয়ে রেখে বেশখানিক তফাতে তারা দু'টিতে বসে। সামনে গঙ্গা। দুপুরের শান্ত নদী। ওপারে প্রকাণ্ড জনপদ। মস্ত মস্ত বাড়ি। মন্দির, গির্জা। প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড গাছপালার বিস্তার। ফেরিঘাট থেকে যন্ত্রের ভুটবুটি নৌকা যাতায়াত করছে। মেছােডিঙা ভেসে যাচ্ছে। জুই বলে, সঙ্গে বাদামের ঠোঙা থাকলে পুরনাে বাংলা সিনেমার পরিবেশ। কোথায়? এই যে—আমরা এখন যেমন বসে আছি। অনিরুদ্ধ হাসল, তা হলে গল্পটা ভালই, কি বলাে? গল্প! কী গল্প? এই যে তুমি, আমি, দুপুরের গঙ্গার ধার। অনিরুদ্ধ একটি হাত জুইয়ের কাধে তুলে দিয়ে সামান্য আকর্ষণ করে। জুই বলে, তুমি পারফিউম মেখেছ, তাই না? তুমি মাখাে না বুঝি? জুই সামান্য হাসে, সেলাই দিদিমণিরা আর পারফিউম মাখে না।

তােমার বুঝি বিশম্ভর রায়ের মেয়ে হতে ইচ্ছে করে না?ঠাট্টা করছ? ছি ছি। তােমার বাবাকে আমি রেসপেক্ট করি। উনি কাজের জগতে আমার সঙ্গে মুহুরির কাজ করলেও এমন ব্রেন আমি দেখিনি। আইনের বই পড়ার দরকার নেই—এত শার্প। তােমার মার কী মত? সে তাে তুমি জাননাই। মা আর আমি। তা ছাড়া তােমাদের বংশগৌরব মার খুব পছন্দ। তা তাে জানি। কিন্তু আমার বাবার শরীর ভাল নয়। মা’রও। ভবিষ্যতে কী-যে -কী আবার। তুমি ও বাড়ির মালকিন হবে। বাড়িটা আমরা সারাব। তবে তােমায় এই সেলাই দিদিমণির কাজ ছাড়তে হবে।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ রাইকমল

জুই গাঢ় আর কিঞ্চিৎ উদাস চোখে গঙ্গার দিকে চোখ রাখে। তারপর আস্তে আস্তে বলে, এই কাজটাই একরকম আমাদের অন্ন জোগাচ্ছে। তা ছাড়া ভবিষ্যতে আমারও বাবা-মার উপর কর্তব্য আছে। কেন, আমি নেই বুঝি! জুই একহাত অনিরুদ্ধর হাতের উপর রাখল। তারপর বলে উঠল, সে তাে আমরা দু’জনেই আছি। তােমার মা আমার বাবা-মা। ই। এবার চলাে, আমরা ফিরি। মা তাে আমি না-যাওয়া অবধি বসে থাকবে।

ফিরতি পথে বাড়ির কাছাকাছি আসতে অদুরে একটি ঝাপ-তােলা রিকশায় গােলককে আসতে দেখা যায়। জরব ভার-ভারিক্কি, বসে আছেন সামনে ঝুঁকে। রিকশাওয়ালা টি জুইয়ের চেনা। ওতে চড়েই বাবা হাইরােডের ধারের এক ঝুপড়ি থেকে দিশি মদ আনতে যায়। মাঝে মাঝে রিকশা ওয়ালাও এনে দেয়।

গােলক ওদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে, যেন দেখেও দেখেননি। অনিরুদ্ধ মুখ ঘুরিয়ে বলে, তােমার বাবা এমন ভরদুপুরে চললেন কোথায়? জুই যেন নিজেকে বলার জন্য বলে, রসদ—মানে মধু আনতে। বাড়ির সামনে ব্রেক কষে অনিরুদ্ধ বলে, কী বললে, বুঝতে পারলাম না। জুই হাসে, আমাদের অশােক ফুল গাছটা দেখেছ? কী রঙিন বলাে তাে। ওই ফুলের মধুও খুব মিষ্টি আর গন্ধওয়ালা।

@ 👉 Bangla Romantic Golpo টি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার এবং কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না.....

Prosanta Mondal

Hey Guys My Name Is Prosanta Mondal From Kolkata, India. I Am A Professional Blogger and Creative Content Writer.

Post a Comment

Appreciate Your Valuable Feedback. I Hope You Like Post And Subcribe Our Blog. Please DO NOT SPAM - Spam Comments Will Be Deleted Immediately.

Previous Post Next Post