15 আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের কবিতা | Poem on Independence Day

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Bengali Poem on Independence Day : আপনি কি ‘15 আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের কবিতা’ পড়তে চাইছেন কিন্তু ভালো কোনো কবিতা পাচ্ছেন না তাহলে আর কোনো চিন্তা করবেন না এই পোস্টে আপনার সঙ্গে শেয়ার করবো ‘ভারতের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা’ যা আপনার মনকে ছুঁয়ে যাবে।

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ২০০ বছরের পরাধীনতার অন্ধকারের জাল ছিঁড়ে স্বাধীনতা লাভ করেছিল ভারত বর্ষ। এজন্য প্রতি বছর ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য একটি গৌরবের দিন এবং একটি স্মরণীয় দিন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজকের দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অনুষ্ঠানে ‘দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃত্তি’ প্রতিযোগিতা হয় এবং এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস ঐতিহ্য ও ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়। এই পোস্টে স্বাধীনতা দিবসের কিছু ছোট কবিতা আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো যা স্বাধীনতার গুরুত্ব বহন করে থাকে।

Bengali Poem on Independence Day

15 আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

কবিতা: আমার দেশ
লেখক : সুকান্ত ভট্টাচার্য

এ আকাশ, এ দিগন্ত, এই মাঠ, স্বপ্নের সবুজ ছোঁয়া মাটি, সহস্র বছর ধ’রে একে আমি জানি পরিপাটি, জানি এ আমার দেশ অজস্র ঐতিহ্য দিয়ে ঘেরা।

এখানে আমার রক্তে বেঁচে আছে পূর্বপুরুষেরা, যদিও দলিত দেশ, তবু মুক্তির কথা কয় কানে, যুগ যুগ আমরা যে বেঁচে থাকি পতনে উত্থানে।

যে চাষি কেটেছে ধান, এ মাটি নিয়েছে কবর, এখনো আমার মধ্যে ভেসে আসে তাদের খবর। অদৃশ্য তাদের স্বপ্নে সমাচ্ছন্ন এ দেশের ধুলি, মাটিতে তাদের স্পর্শ, তাদের কেমন করে ভুলি?

আমার সম্মুখে ক্ষেত, এ প্রান্তর উদয়াস্ত ঘাটি, ভালবাসি এ দিগন্ত, স্বপ্নের সবুজ ছোঁয়া মাটি। এখানে রক্তের দাগ রেখে গেছে চেঙ্গিস্, তৈমুর, সে চিহ্নও মুছে দিল কতো উচ্চৈঃশ্রবাদের খুর।

কতো যুদ্ধ হয়ে গেছে, কতো রাজ্য হয়েছে উজাড়, উর্বর করেছে মাটি কতো দিগ্বিজয়ীর হাড়। তবুও অজেয় এই শতাব্দী- গ্ৰথিত হিন্দুস্থান, এরই মধ্যে আমাদের বিচলিত স্বপ্নের সন্ধান। আজন্ম দেখেছি আমি অদ্ভুত নতুন এক চোখে, আমার বিশাল দেশ আসমুদ্র ভারতবর্ষকে।

Bengali Poem on Independence Day

কবিতা: স্বাধীনতা
লেখক : তাপস ঠাকুর

আমাকে কবি বলো না, আমি কবিতা লিখিনি, কবিতা পড়িনি, শুধু কবিতাকে ঝড়ে পরতে দেখেছি, শুকনো পাতার মত পুড়ে মরে যেতে দেখেছি।

ঐ কবিতাকে দেখেছি শ্বশানের পথে-ক্ষুধার্ত।যেন দুরবিক্ষে তলিয়ে গেছে তার ভিটে-মাটি।সেই কবিতাকে আমি, বুকে আগলে রাখতে পারিনি, অবজ্ঞা-অবহেলা আর অনাদরে সে এখন অন্ধ।

সেই কবিতা আমি বুঝিনি,জানিনি কোনদিন, শুধু তার চোখে বার্তা পেয়েছি নতুন দিনের নতুন আলোর। হ্যা, আমি সেই বার্তা বাহক।কালের খেয়ায় আবার এসেছি এই অর্ধমৃত পৃথিবীতে।

ঐ পায়ে ফেসা ফুল , ডাস্টবিনের পাশে পরে থাকা অসহায় নবজাতকের চোখ, যেন হয় ধুসর অন্ধকার পৃথিবীর ছোট ছোট আলোকময় দ্বীপ। অথবা এই অসভ্য পৃথিবীর বাগিচা।

অথচ, তারা পরে আছে পথে-ধুলোয়,তাদের ভবিষ্যৎকারো মুঠোয় বন্দী।আমি কী লিখব তার প্রতি-উত্তর ?ঐ বঞ্চিত চোখ, ঐ পায়ে ফেসা ফুলগুলিকেবলই একটি কবিতা খুঁজে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে, যেন কবিতা এই অন্ধকার পৃথিবীতে মৃত, যেন কোন এক বিশেষ শ্রেণীর আলোক উজ্জ্বলরঙমহলে, অথবা বাজার অর্থনীতির লোভী চক্ষুতেবন্দী এই কবিতা।

যদি আমার একক পৃথিবী ভেসে যায় কোনদিন জনতার জোয়ারে , তবে শহরের আনাচে কানাচে প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি প্রানে, বিশাল অক্ষরে। তোমাদের প্রিয় কবিতাটি আমি লিখে দিয়ে যাব !! যার নাম- স্বাধীনতা।

স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃত্তি lyrics

কবিতা: উঠো গো ভারত লক্ষ্মী
লেখক : অতুলপ্রসাদ সেন

উঠো গো ভারত লক্ষ্মী,উঠো আদি জগত জন পূজ্যা,উঠো গো ভারত লক্ষ্মী,উঠো আদি জগত জন পূজ্যা,দুঃখ দৈন্য সব নাশিকরো দূরিত ভারত লজ্জা,ছাড়ো গো ছাড়ো শোকশয্যা,কর সজ্জাপুনঃ কমল কনক ধন ধান্যে।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষেসান্ত্বন বাস দেহ তুলে চক্ষে,কাঁদিছে তব চরণতলেত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।

কাণ্ডারী নাহিক কমলাদুঃখলাঞ্ছিত ভারতবর্ষে,শঙ্কিত মোরা সব যাত্রীকালসাগর কম্পন দর্শে,তোমার অভয় পদ স্পর্শে, নব হর্ষে,পুনঃ চলিবে তরণী শুভ লক্ষ্যে।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষেসান্ত্বন বাস দেহ তুলে চক্ষে;কাঁদিছে তব চরণতলেত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।

ভারত শ্মশান করো পূর্ণপুনঃ কোকিল কূজিত কুঞ্জে,দ্বেষ হিংসা করি চূর্ণকরো পূরিত প্রেম অলি-গুঞ্জে,দূরিত করি পাপ পুঞ্জে, তপঃ তুঞ্জেপুনঃ বিমল করো ভারত পুণ্যে।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষে,সান্ত্বন বাস দেহ তুলে চক্ষে;কাঁদিছে তব চরণতলেত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।জননী দেহ তব পদে ভক্তিদেহ নব আশা, দেহ নব শক্তি,এক সূর্যে করো বন্ধন আজত্রিংশতি কোটি দেশবাসী জনে।

ছোটদের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

কবিতা : কান্ডারী হুশিয়ার
লেখক : কাজী নজরুল ইসলাম

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবারলঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরনকান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মারগিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ? করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান, আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ? দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃত্তি

কবিতা: স্বাধীনতা তুমি
লেখক : শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা- স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা স্বাধীনতা তুমি পতাকা শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।

স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। স্বাধীনতা তুমি মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।স্বাধীনতা তুমি অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।

স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ। স্বাধীনতা তুমি চা খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ। স্বাধীনতা তুমি কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।

স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুকস্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন। স্বাধীনতা তুমি বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।

স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার। স্বাধীনতা তুমি গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল, হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম। স্বাধীনতা তুমি খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা, খুকীর অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা।

স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান, বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা, যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

কবিতা : বাতাসে লাশের গন্ধ
লেখক : রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে-এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?

বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে,মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার।আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।

এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,স্বাধীনতা, -একি তবে নষ্ট জন্ম?একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ সেই পুরোনো শকুন।

বাতাশে লাশের গন্ধ-নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দোলে মাংসের তুফান।মাটিতে রক্তের দাগ-চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়।

এ চোখে ঘুম আসে না। সারারাত আমার ঘুম আসে না-তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ,মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস শরীরভেসে ওঠে চোখের ভেতরে।

আমি ঘুমুতে পারিনা, আমিঘুমোতে পারিনা-রক্তের কাফনে মোড়া কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।

স্বাধীনতা, সে আমার স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন-স্বাধীনতা, সে আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।

2 thoughts on “15 আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের কবিতা | Poem on Independence Day”

  1. 🌹 স্বাধীনতা 🌹

    রং মশালের আগুন জ্বেলে
    জ্বলছে ধ্রুবতারা ।
    ভারত তো এবার স্বাধীন হলো
    ক্ষমতায় আসবে কারা…?
    দলিত গরিব একাতরে
    হয়েছে ঘর ছাড়া ,
    বোমাবরুদের বিস্ফোরণে
    শত রোগী যেনো আত্মহারা ।
    স্বাধীন হলো ভারত মোদের
    চললো বৈঠকখানা ,
    হবে এবার স্বাধীন রাজ্যে
    করল শত দাবি আনা ।
    রক্তা ঘাতের স্বাধীন ভারত
    পেল নাকো স্বাধীনতা ,
    হুকুম নামা করলো জারি
    চলল ১৪৪ ধারা ।
    বিপদ এবার জনসমষ্টির ,
    কোথায় থাকবে এখন তারা ।
    দিল্লির শাসন বদ্ধ ঘরে,
    শুনলো না কেউ কারোর সাড়া ।
    দুর্ভিক্ষ আঁকড়ে ধরে
    পড়েছে কত মৃত মরা ।
    স্বাধীন হলো ভারত মোদের
    জনগণ পেলো না স্বাধীনতা ,
    খোলা আকাশে পাখি উড়ে
    পড়ছে খাঁচায় বন্দী ।
    স্বাধীনতাই পেল না তারা ,
    তবে রক্ত ঝরে পাবো কি আমরা…. ? ?

    ✒️… পবন ভৌমিক 🌼

    Reply
    • খুব সুন্দর লিখেছেন দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা কবিতা লেখার জন্যে।

      Reply

Leave a Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now