Real Breakup Love Story Bangla | প্রতারক প্রেমিকা

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 4th, 2023 at 12:50 am

আজকের Breakup love story টির নাম -“রহস্যময়ী” গল্পের প্রধান চরিত্রে অরুন ও মুক্তা গল্পের বিষয় – প্রতারক প্রেমিকা, Bangla love story অথবা Premer golpo এবং Bangla jokes আরও পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।


Breakup love story Bengali

Sad Breakup Love Story Bangla – বেইমান প্রেমিকা

আজকের গল্প – রহস্যময়ী


মুক্তাকে প্রথমে চিনতে পারেনি অরুণ। পার্ক স্ট্রিটের এই বাস স্টপে হঠাৎ যে ওর সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে, ও স্বপ্নেও ভাবেনি। ঘড়িতে এখন সােয়া সাত। তার মানে এমন কিছুই রাত হয়নি। এখনও বেশ গমগম করছে জায়গাটা। এখন অফিস ফেরত অনেকেই বাসে ওঠার জন্য এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। কিন্তু অরুণের এমন তাড়া ছিল না। অফিস থেকে বেরিয়ে বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে ও পার্ক স্ট্রিট অবধি চলে এসেছিল। রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সুবিধাজনক একটা বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল, আর ঠিক এই সময় হাত দশেক দূরে মুক্তাকে দেখে ও চমকে উঠল। 




হাঁ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু-এক মিনিট ও দেখল মুক্তাকে। একটু যেন ভারি হয়েছে। ওর কাধেঁ দায়-দায়িত্ব চাপলে যেমন হয়। একটু যেন ধীর স্থির। অথচ ওরা একসঙ্গে যখন কলেজে পড়ত, তখনকার কথা ভাবতেও কেমন অবাক লাগে। সে সময় অনেক ছেলেকেই হার মানাতে পারত মুক্তা। বাজি ধরে হেন কাজ নেই যা ও করতে পারত না। মনে আছে, একবার ও গাছে উঠে নারকেল পেড়ে এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।

গাছে ওঠার সেই ঘটনা ঘটেছিল কোলাঘাটে। কলেজের সবাই মিলে পিকনিক করতে গিয়েছিল কোলাঘাটে। সাত-আটটি মেয়ে তিরিশ-পঁয়ত্রিশটা ছেলে। অভিভাবক হিসাবে সঙ্গে ছিলেন তিনজন অধ্যাপক। মুক্তা, ভাস্বতী, কণিকা, চন্দ্রলেখা, আরও কি সব যেন নাম ছিল মেয়েদের। কিন্তু মুক্তাকে যেভাবে মনে আছে, বাকিদের ঠিক সেভাবে নেই। মনে পড়ল, নদীর ধারে একটা ঝুঁকে পড়া নারকেল গাছ দেখিয়ে মুক্তাকে খেপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নারকেল পেড়ে আনতে পাড়ার?

মুক্তা তাচ্ছিল্য দেখিয়ে হেসেছিল, বাজি ধর তাহলে। ঠিক আছে দশ টাকার রাজভোেগ।
মুক্তা হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, টাকা বার কর আগে। পকেট থেকে সঙ্গে সঙ্গে একটা দশ টাকার নােট বার করেছিল অরুণ। আগে নারকেল পাড়, তাহলে পাবে।
সালােয়ার পাঞ্জাবি পরা মুক্তা বলেছিল, আগে টাকা। শেষ পর্যন্ত ঠিক হল, টাকাটা থার্ড পারসন কারও হাতে রাখা হবে। রাখা হয়েছিল ভাস্বতীর হাতে।
মুক্তা বুক ঘসে ঘসে উঠে পড়েছিল গাছে। 

সে এক হৈ হৈ কাণ্ড। অধ্যাপক ইনচার্জ যােগেশবাবু সেই দৃশ্য দেখে ফায়ার। কিন্তু পিকনিকের মেজাজ, কার কথা কে শােনে। দশ টাকার রাজভােগ খাওয়া হয়েছিল সেদিন মুক্তার কল্যাণে। সেই মুক্তাকে প্রায় তের-চোদ্দ বছর পরে হঠাৎ এভাবে দেখতে পেয়ে একটু অবাক হওয়ারই কথা। অরুণ দু-এক পা করে এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল, আরে তুমি!
মুক্তা কিন্তু অরুণকে ঠিকই চিনেছে, ওমা, অরুণ, তুমি!

কি ব্যাপার বল দেখি, তুমি এখানে?
প্রশ্নটা তো আমিও তােমাকে করতে পারি, তুমি এখানে?
আমি অফিস থেকে।
আমিও অফিস থেকে।
অরুণ দেখল, মুক্তার পরনে জলপাই রঙের শাড়ি। কলেজে পড়ার সময় কদাচিৎ ও শাড়ি পরত। বেশির ভাগ দিনই সালােয়ার পাঞ্জাবি পরে কলেজে আসত। তখন ওর পিঠ ভাঙা চুলের ঢল ছিল। এখন বব ছাট। সােনালি রেশমের মত বব চুল ওর ঘাড়ের ওপর ঝুলে আছে। গায়ে সেঁটে থাকা এক জোড়া পাথর। ভ্রু-দুটো আঁকা কিনা ঠিক ধরতে পারল না অরুণ।




মুক্তা বলল, তুমি পুরােপুরি পালটে গেছ, তােমাকে চিনতেই পারিনি প্রথমে। তারপর আরও একটু কাছে ঘেঁষে দাঁড়ায় অরুণের, আমি কিন্তু এখনও গাছে উঠতে পারি। তােমার মনে আছে সে কথা?
ছিল না, তােমাকে দেখে মনে পড়ল। কী যে ভালাে লাগছে তােমাকে দেখে। অরুণ বলল, আমারও। কতদিন পরে দেখা হল, তাই না?
প্রায় পনের বছর হয়ে গেল।
চল না, কোথাও একটু বসে গল্প করি। চা খাবে?
চা, রেস্টুরেন্টে! না বাপু, অত লােকের মধ্যে ভালাে লাগে না। ওখানে কথা বলা যায় না।

অরুণ সামনের দিকে তাকায়। মেট্রো রেলের ছােট্ট স্টেশনটা পার হয়ে ফোর্টের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। ওখানে অনেক গাছতলা। নির্জনে একটু মুক্তার সঙ্গে বসলে মন্দ হয় না। কিন্তু বলতে সাহস হল না। কলেজে পড়ার সময় যে মুক্তাকে ও চিনত, সেই মুক্তা এখনও ঠিক আগেরই মত আছে কিনা কে জানে।
অরুণ লক্ষ্য করল, মুক্তার কপালে অথবা সিঁথিতে সিদুরের লেশমাত্র নেই। লক্ষ্য করল, ওর চুলের এমন একটা স্টাইল যে সিথি নামক বস্তুটাই নেই। আজকাল অনেক মেয়েই বিয়ের পর সিঁদুর পরে না। 

হয়ত মুক্তাও সেই দলেরই মেয়ে। কিন্তু নিঃসংশয় হতে পারল না অরুণ। জিজ্ঞেস করল, কোথায় থাক তুমি? সাউথ না নর্থে?
হাসল মুক্তা, থাকি বালিগঞ্জে। অফিস পার্ক স্ট্রিটে। পার্ক স্ট্রিট।
একটা প্রাইভেট ফার্মে। ম্যানেজারের পি-এ।
বাড়িতে কে আছেন?
ওরে বাপ! তুমি এমনভাবে জেরা করছ, আমি যেন খুনের আসামী। তা না। আসলে, ঠিক আছে, চল কোথাও একটু বসি।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ আদিম 

মুক্তা বলল, চল, ভিক্টোরিয়ার দিকেই যাই। জায়গাটা বেশ ভালাে। ভিক্টোরিয়ার দিকে! অরুণ একটু অবাক হয়। সন্ধ্যার পর ওদিকটা কি ভালাে। কি জানি, এমনিতে ভিক্টোরিয়ার দিকে খুব একটা আসা হয় না অরুণের, সন্ধ্যার পর তো নয়ই। সন্ধ্যার পর অনেক রহস্যময় দোকান ওখানে জাঁকিয়ে বসে। যত রাজ্যের মােলদা-মাতালের হাড্ডাপাড়া চলে। ওখানে গিয়ে মুক্তাকে নিয়ে বসাটা কি ভালাে হবে, ঠিক বুঝতে পারল না অরুণ। কিন্তু মুক্তাই যখন যেতে চাইছে, তখন ওর আপত্তি কি!

অরুণ বলল, ঠিক আছে চল।
রাস্তা পার হয়ে ওরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। মুক্তার শরীরের গন্ধ যেন ওকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে, উত্তেজনা অনুভব করতে থাকে অরুণ।
অরুণ?
অরুণ মুক্তার দিকে তাকায়।
তুমি কোথায় থাক, তা কিন্তু বলনি।
আমি, অরুণ বলল, আমি টালিগঞ্জে। আনােয়ার শা রােড চেন ? ওরে বাবা, আনােয়ার শা রােড চিনব না! নবাব বাদশাদের স্মৃতি জড়ানাে রাস্তা। আমার এক বান্ধবী থাকত ওখানে।
ওখানে কোথায়?




মুক্তা একটা মেয়ের নাম বলল, অরুণের পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। অরুণ বলল, একদিন এস না আমাদের বাড়িতে, সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া যাবে। যাব মুক্তা হাসল, তােমার জীবনসঙ্গিনীকে একদিন গিয়ে দেখে আসব। অরুণ হাসল, জীবনসঙ্গিনীই বটে। ওর প্রথম কোয়ালিফিকেশন নন-ম্যাট্রিক। দ্বিতীয় কোয়ালি-ফিকেশন সুকুনি হেঁচকি ঘন্ট ইত্যাদি রাঁধতে পারে, তৃতীয় কোয়ালিফিকেশন প্রতিদিন সিঁদুর পরে, পায়ে আলতা মাখে, শিবরাত্রিতে উপােস করে। মুক্তা কথা কেড়ে নিল, চতুর্থ কোয়ালিফিকেশন, রাতে স্বামীর শয্যায় আসার আগে পানের খিলি মুখে দেয়, তাই না?

হাসল অরুণ।
মুক্তা বলল, ওর পঞ্চম কোয়ালিফিকেশনের কথা কিন্তু বলিনি। কি?
ওরে বাবা, একটাই সামলানাে যায় না, আবার অনেক।
কেন, সামলানাে যাবে না কেন, ভগবান করুক, তােমার যেন অনেক হয়। -আশীর্বাদ করছ, না অভিশাপ দিচ্ছ?
ছি ছি, অভিশাপ দেব কেন, অভিশাপের প্রশ্নই আসে না। আমরা চাইলেও ও জিনিস পেতে পারতাম।
বাচ্চা না থাকলে কিন্তু বিবাহিত জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। হবে হয়ত। কারও কারও কাছে হয়ত সত্যি, কিন্তু আমরা ও নিয়ে ভাবিনি। আবার হাসে মুক্তা।

ভিক্টোরিয়ার পেছন দিকে চলে এসেছিল ওরা। এদিকে নির্জন ভাবটা আরও বেশি। এক পাশে রেসকোর্সের মাঠ, অন্যদিকে পি জি-র নিস্তব্দ বাড়ি আর গাছপালা। অরুণ ঘড়ির দিকে তাকাল, প্রায় আটটাই বাজতে চলেছে। এখন মুক্তার সঙ্গে এখানে বসাটা যে কতটা উচিত ঠিক ধরতে পারে না ও।
মুক্তা হঠাৎ অরুণের হাতে হাত ছোঁয়াল, এস, ওই গাছটার নিচে বসি!
বিরাট ঝাপড়ান একটা গাছ, কিন্তু কি গাছ কে জানে! গাছের নিচে বেশ ছমছমে অন্ধকার। অরুণ চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখল, না কেউ নেই। কারও চোখে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই। 

তবু বলল, আটটা বাজে কিন্তু। বাজুক না, কতদিন পরে তােমার সঙ্গে দেখা হল। তাই না?
তা ঠিক, তবে
কি তবে, বউ বুঝি কৈফিয়ত চাইবে?
না, না, বউয়ের কৈফিয়তের জন্যে নয়, তবে তােমার পতি তো তােমাকে সত্যিকারের ডিভাের্সের নােটিশ দিয়ে বসতে পারে। আমার পতি এখন অন্য কোনাে মেয়ের সঙ্গে ঘুরছে। ফলে আমার দিকে ভয়ের কিছু নেই।
অরুণ হাসল, বেশ আছাে তােমরা। আসলে তােমরা বােধহয় দু’জনেই দু’জনকে খুব বিশ্বাস কর। নইলে এরকমভাবে চলতে পারতে না।

এই রে এখন আবার প্রফেসর আচার্যের মত জ্ঞান দিতে শুরু করলে!
বহুকাল পরে হঠাৎ আবার প্রফেসর আচার্যের কথা মনে পড়ায় কলেজ জীবনের স্মৃতিটা চোখের ওপর ভেসে উঠল। সেদিনকার সেই মুক্তা আজ কি আশ্চর্য রকম পালটে গেছে। হয়ত অরুণও অনেক পালটে গেছে, মুক্তার চোখে সেটা ধরা পড়ছে। এস না বসি।
অরুণকে নিয়ে গাছতলায় বসে পড়ল মুক্তা। একদম গায় গায়। মুক্তা বেশ ফ্রি। কিন্তু অরুণকে কেমন আড়ষ্টতা এসে চেপে ধরল। স্বামীকে ও বােধ হয় নাকে দড়ি দিয়ে ঘােরাতে ভালােবাসে। আবার হেসে উঠল অরুণ তা যা বলেছ।




ভিক্টোরিয়ার কাছাকাছি চলে এসেছিল ওরা। টিমটিমে অসংখ্য আলাে জ্বলছে রাস্তার ধারে। অনেক ঝুপড়ি দোকান। দোকানগুলােকে ঘিরে মাছির মত মানুষ। খানিকটা দূরে দুরে গাছতলাতেও অনেককে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। কারও কারও বসার ভঙ্গি বড় খারাপ, তাকাতে অস্বস্তি হয়। বসার ব্যাপারে এখন পুরাে দায়িত্বটাই মুক্তার হাতে ছেড়ে দিল অরুণ।
মুক্তা বলল, এদিকে নয়। চল, ভিক্টোরিয়ার পেছন দিকে গিয়ে বসি। অরুণ বলল, জায়গাটা তােমার বেশ চেনা মনে হচ্ছে?

কিছুটা চেনা বৈকি! মাঝে মাঝেও ওর সঙ্গে এদিকে আমাকে আসতে হয়। আমার স্বামীর কোয়ালিফিকেশন শুনবে?
অরুণ তাকিয়ে থাকে।
মুক্তা বলল, ওর এক নম্বর কোয়ালিফিকেশন হচ্ছে ও বিলেত ফেরত। দু নম্বর, ও প্রচণ্ড মদ্য পান করে। তিন, ও স্ত্রীর সঙ্গে খুব ভালাে অভিনয় করতে পারে আর অন্য মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে পারে। চার, আমাকে মাঝে মাঝে ডিভাের্স করার ভয় দেখায়।
অরুণ কেমন বােকার মত মুক্তার দিকে তাকায়।
মুক্তা বলল, ফলে এ হেন স্বামীর সঙ্গে আমাকেও কিছু কিছু খেলা খেলতে হয়। কি খেলা?

কত রকম খেলা। এই ধর না কখনও-সখনও ওকে নিয়ে গঙ্গার পাড়ে, কি ভিক্টোরিয়ার এই নির্জনে, কি অন্য কোথাও যেতে হয়। স্বামীকে নিয়ে এখানে এনে বসার মধ্যে কি চার্ম আছে বুঝতে পারে না অরুণ। ওকে যদি বলা হয়, ওর স্ত্রীকে নিয়ে এখানে এসে বসতে হবে, তাহলে কি ও রাজি হবে। অসম্ভব! স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। দুজনেই যেখানে সহজলভ্য সেখানে কোনাে চার্ম থাকে না। কেমন যেন দুর্বোধ্য লাগে অরুণের। তােমার বাচ্চা ক’টি? হঠাৎ প্রশ্ন করে অরুণ।


মুক্তা হাসল, একটাও না। ও সব খুব ন্যাস্টি মনে হয় আমার। তােমার ? একটু অবাক হয়ে তাকায় অরুণ, কি বলবে ভেবে পায় না।
‘ন্যাস্টি’ কথাটা সামলাবার জন্যেই যেন আবার হাসল মুক্তা, ন্যাস্টি মানে আসলে কি জানাে, আমরা কেউই ও ব্যাপারটা চাইনি। তা যাকগে, তােমার ক’টি? তােমার নিশ্চয়ই একগাদা?
অরুণ বলল, আমার এক মেয়ে।
তাই বুঝি? মাত্র এক! আমার মনে হয়েছিল তােমার অনেক। মুক্তা অত সহজ থাকছে কিভাবে! তবে কি মুক্তা আর ওর স্বামীর সম্পর্কটায় সত্যি সত্যি কিছু গােলমাল আছে! তবে কি মুক্তা ওর স্বামীর কাছে যা চায় তা পায় না। কি জানি কেমন রহস্যময় মনে হয় মুক্তাকে।

এই! মুক্তা ডাকল, তােমার ভালাে লাগছে না?
অরুণ বােকার মত হাসে।
হাসছ কেন, বল না?
অরুণ ঘন গলায় বলল, কি বলব?
রােজ রােজ স্বামী স্ত্রী হয়ে ঘর সামলানাের মধ্যে একটা একঘেঁয়েমি আছে না?
অরুণ চুপ করে থাকে!
মুক্তা অরুণের একটা হাত টেনে নিল। মুক্তার হাতের স্পর্শ যেন কম্পনের মত ছড়িয়ে গেল ওর দেহে। হাতটাকে ছাড়িয়ে নিতে ইচ্ছে হল না অরুণের। চারপাশে নির্জনতা ছাড়া কিছুই নেই। এই অন্ধকার এই গাছতলাই সাক্ষী হয়ে থাক না এই মুহূর্তের।




মুক্তা বলল, কি হল, ঠাণ্ডা মেরে গেলে যে! অথচ আমাদের কলেজের জীবনে কিন্তু তােমরা ছেলেরাই বেশি করে মেয়েদের পেছনে লাগতে। আমরা তখন তােমাদের কাউকে ডেকে এনে গাছতলায় বসতে সাহসই পেতাম না, তাই না?
তােমরা মেয়েরা সব পার। আমরা ছেলেরাই চিরকালের বােকা?

ইসরে, বােকা না আর কিছু! মুক্তা অরুণের হাতটাকে কোলের ওপর টেনে নিল। অরুণের বুকের ভেতর আবার একরাশ উত্তেজনা ডানা ঝাপটিয়ে উঠল। নারীসঙ্গের উত্তেজনা তো আছেই, তাছাড়া পরিবেশের উত্তেজনাও কম নয়। -এই অরুণ! মুক্তা ওর হাতের আঙুলগুলাে নিয়ে খেলা করতে শুরু করল। -কি হল?
তােমার এই আংটিটা বুঝি বিয়ের সময় পাওয়া?
অরুণের কেমন অস্বস্তি বােধ করে, কেন, বিয়ের আংটি ছাড়া বুঝি পরতে পারি না?
মুক্তা ওর আঙুল থেকে আংটিটা ধীরে ধীরে খুলে ফেলল। ফল্স না তাে?

অরুণ না হেসে পারল না, সামান্য আংটি, তার জেনুইন আর ফলস। পকেটে দেশলাই আছে?
কেন, কী হবে? আমি বিড়ি সিগারেট খাই না।
মুক্তা বলল, ডিজাইনটা দেখতাম। আংটিটা হঠাৎ নিজের আঙুলেই পরে ফেলল অরুণ বলল, আসলে ওসব পরতে হয় বলেই পরা। অনেক দিন ধরে আঙুলে রয়ে গেছে।
মুক্তা বলল, আংটিটা তােমার কাছে পুরনাে হয়ে গেছে, কিন্তু আমার আঙুলে কি সুন্দর মানিয়েছে। এই, দেখ না!

অরুণ কেমন অস্বস্তিবােধ করতে থাকে! কি ছেলেমানুষি শুরু করল মুক্তা। আংটিটা ওর আঙুল থেকে খুলে নিয়ে আবার যে নিজের আঙুলে পরবে, তার পথ যেন বন্ধ করে দিতে চাইছে মুক্তা। হাতে আংটি না থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে। অরুণ বলতে পারবে না ওর হাত থেকে আংটিটা ওর এক বান্ধবী খুলে নিয়েছে। বললেও কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না।
কটা বাজে দেখ না? মুক্তা প্রায় আবদারি ভঙ্গিতে ধরে অরুণকে। অরুণ বলল, আহ কী হচ্ছে? তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, রাত নটা। এবার উঠতে হবে। আংটিটা দাও।

কেন ভয় হচ্ছে? আমি নিয়ে নেব?
না না, ভয় কেন, ভয় নয়। তবে বাড়ি ফিরতে হবে না?
ফিরব তো বটেই। মুক্তা হাসে, সারা রাত যে এই গাছতলায় তােমাকে বসিয়ে রাখতে পারব না, তা আমি জানি। ঠিক আছে আর যখন বসতে চাইছ না, ঘড়িটা খােল। ঘড়ি কেন ?

কেন কি, ঘড়িটাও আমি পরব যে! দেখছ না আমার হাতে ঘড়ি নেই। যাহ কি ছেলেমানুষি শুরু করলে! ওঠ, কাল না হয় আবার দেখা হবে। একটু গা ঝাড়া দিয়েই উঠে পড়ার চেষ্টা করে অরুণ। মুক্তা এক হ্যাচকায় বসিয়ে দিল অরুণকে, তােমার বউ বুঝি খুব সুন্দরী ? অরুণ থমথমে মুখে মুক্তাকে দেখবার চেষ্টা করে, ও কি তাহলে কোনাে ফাঁদে পা দিয়ে বসেছে? কিন্তু কথাটা ভাবতেও কেমন বােকা বােকা লাগে ওর। এই বল না, তােমার বউ বুঝি আমার চেয়েও সুন্দরী ?
অরুণের বিরক্তি এবার চরমে ওঠে, তুমি নিজেকে খুব সুন্দরী ভাব?

না, না, তা ভাবব কেন? আমি সুন্দরী হলে কি এত সাধতে হত তােমাকে?
অরুণ কথা হারিয়ে ফেলে। যেভাবেই হােক এখনই ওর সরে পড়া উচিত। বলল, উঠবে না। এরপর কিন্তু পুলিশে ধরবে।
ঘড়িটা দাও।




অরুণ এবার প্রতিরােধ তৈরি করার জন্যে একটু যেন রুখে উঠল, তুমি কি ছিনতাই পার্টির মেম্বার নাকি? রিয়েলি মুক্তা, আমি কিন্তু বিশ্বাসই করতে পারছি না। কেন মিছিমিছি দেরি করছ বল তো? কখন আমরা উঠে যেতে পারতাম। তােমার বউ নির্ঘাৎ তােমার জন্যে চিন্তা করতে শুরু করেছে। অরুণ বলল, তুমি এত নীচে নেমে গেছ ভাবতেই আমার কষ্ট হয়। ঘড়ি ছাড়া সঙ্গে যা টাকাকড়ি আছে বার কর। যত দেরি করবে তােমারই দেরি হবে। তাছাড়া মিছিমিছি হৈচৈ বাধিয়েও কোনাে লাভ হবে না। একটা মজার জিনিস লক্ষ্য করেছ অরুণ?

অরুণ ভয়ে ভয়ে তাকায়, কী ?
ওপাশে ওই গাছটার নিচে দু’জন দাঁড়িয়ে আছে, দেখছ? ওই যে গাে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে আমি একটু ইশারা করলেই ওরা ছুটে আসবে। তুমি না সেই কলেজ জীবনের মত বােকাই রয়ে গেছ। যাক গে, আর একদিন এস, তােমাকে চালাক করে দেব।
আমি চেঁচাব।
তাই নাকি,আমিও চেঁচাতে জানি। চেঁচিয়ে বলব তুমি আমাকে ফুসলিয়ে এখানে নিয়ে এসেছ। এনে আমাকে নষ্ট করতে চাইছ।
অরুণের চোখ-মুখ কেমন শুকিয়ে এল। কি ডেঞ্জারাস মেয়ের পাল্লাতেই পড়া গেছে আজ। এখন পালাতে পারলেই যেন বাঁচে।

মুক্তা বলল, তােমার কথা লােকে বিশ্বাস করবে না, সবাই কিন্তু আমার পক্ষই নেবে। আর তাছাড়া ওরা তােমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে…
অরুণ হাত জোড় করল, আমাকে ছেড়ে দাও মুক্তা। প্লিজ। আমি ছাপােষা মানুষ। মুক্তা বলল, ছাপােষা কে নয়? আমিও। আর সে জন্যেই তো আংটি টাকা পয়সা ঘড়ি আমি চেয়ে নিচ্ছি। গায়ের জোর খাটিয়ে নিতে চাই না। তুমি দিলে হাত পেতে নেব। বেশ তো আর একদিন না হয় যা পারি দিয়ে যাব। কিন্তু ঘড়িটা হাতছাড়া করলে আমি বড় অসুবিধায় পড়ে যাব মুক্তা। বিশ্বাস কর, আমার এমন অবস্থা নয় যে আর একটা ঘড়ি কিনে নিতে পারব।

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ নেকী 

মুক্তাকে কেমন হিংস্র মনে হতে থাকে অরুণের। বিষধর সাপের সঙ্গে মেয়েদের যে তুলনা করা হয়, সেটা যেন মিছিমিছি নয়….
টাকা বার কর। তুমিই কিন্তু দেরি করছ।
অরুণ আবার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল।
ও কি, দেবে না? তার মানে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনতে চাইছ। ঠিক আছে, কথা যখন শুনবেই না, তখন আমাকে চেঁচাতেই হচ্ছে। অরুণ বিশ্বাসই করতে পারে না, মুক্তা সত্যি সত্যি কিম্ভুত একটা শব্দ করে চেঁচিয়ে উঠবে। সামান্য একটু চেঁচিয়ে উঠেই মুক্তা আবার থেমে গেল। অরুণ আবার ফ্যাকাসে হয়ে গেল। পাশের দিকে চোখ পড়তেই দেখল, একলাফে সেই ছােকরা দুটো ছুটে এসেছে।

এই যে মশাই, কী হচ্ছে এখানে?
মুক্তাই কথা বলল, কিছু না। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার। আই বাপ, স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার রে। ছােকরা দুটো কি একটা খারাপ মন্তব্য করে আবার সরে গেল।
মুক্তা অরুণের চোখের দিকে তাকাল, কি বুঝলে? তােমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কেমন তােমায় বাঁচিয়ে দিলাম। এবার লক্ষ্মীসােনার মত ঘড়িটা দাও দেখি। অরুণ চারপাশে একবার তাকাল, তারপর হাত থেকে ঘড়িটা খুলে দিল। টাকা পয়সা বার কর।
আমি বাড়ি ফিরব না?
বাস ভাড়াটা রেখেই দাও তাহলে।
অরুণ পকেটে হাতড়ে কয়েকটা টাকা পেল। আর নেই।

মুক্তা টাকা আর ঘড়ি ওর শান্তিনিকেতনী ব্যাগে পুরে ফেলল। রাগ করাে না অরুণ।
অরুণ থমথমে মুখে উঠে দাঁড়াল। মুক্তার দিকে তাকাতেও ঘেন্না হচ্ছে। কিন্তু এখন ওর পালিয়ে বাঁচা ছাড়া পথ নেই। হনহন করে বড় রাস্তার দিকে হাঁটা দিল অরুণ। আকাশটা কেমন গুমােট হয়ে আছে। এত গাছ এদিকটায়, কিন্তু সব কেমন স্তব্ধ। ঘৃণায় অপমানে কানের পাশে ঝা ঝা করছিল। ছুটতে ছুটতে বড় রাস্তার কাছে এসে একটু দাঁড়াল। ভাবাই যায় না, মুক্তা এত নীচ হতে পারে। ওরই কলেজ জীবনের বান্ধবী মুক্তার এত পরিবর্তন হতে পারে। 

কলেজ জীবনের স্মৃতিটাকে ও কিছুতেই মেলাতে পারছে না যেন। আশ্চর্য!
আবার একটু ভিক্টোরিয়ার দিকে তাকাল ও। বিশাল বিশাল গাছ আর অন্ধকার। না, মুক্তা ওকে ফলাে করেনি। কে জানে, অন্ধকারে আবার কোনাে চিড়িয়ার লােভেই হয়ত অন্য কোনাে অরুণের পিছু নিয়েছে ও।
বাস স্টপে দাঁড়িয়ে ভিক্টোরিয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অরুণ। 


@👉 Real Breakup Love Story গল্প টি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার এবং কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না…..           
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Comment